জল অপচয় রোধে বাঙালি ছাত্রের আবিষ্কার ‘প্যাডেল ট্যাপ’

816
জল অপচয় রোধে বাঙালি ছাত্রের আবিষ্কার 'প্যাডেল ট্যাপ'/The News বাংলা
জল অপচয় রোধে বাঙালি ছাত্রের আবিষ্কার 'প্যাডেল ট্যাপ'/The News বাংলা

কৃষ্ণা দাস, The News বাংলা, শিলিগুড়িঃ গাছ থেকে আপেল পড়তে দেখে নিউটন আবিষ্কার করেছিলেন মহাকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বল। আর চাপ দিয়ে গৃহস্থের ঘরের ডাস্টবিন-এর ওঠানামা দেখে, শিলিগুড়ির দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র পৃথ্বীরাজ আবিষ্কার করে ফেলল জল অপচয় রোধে প্যাডেল ট্যাপ। এই যন্ত্র ট্যাপের লাইন করার সময় কোনো পাত্র তার ওপর বসিয়ে দিলে চাপের কারনে জল আপনা আপনি পড়বে। জল ভরে গেলে পাত্রটি উঠিয়ে নিলে জল পড়া আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যাবে। আর তার এই আবিস্কারে রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা শহরাঞ্চলে।

আরও পড়ুনঃ ‘গনতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’র মধ্যেই শিলিগুড়িতে প্রথম জনসভা নরেন্দ্র মোদীর

শিলিগুড়ির বরদাকান্ত হাইস্কুলের ছাত্র পৃথ্বীরাজ গাঙ্গুলি। পিতা বিজয় গাঙ্গুলী একজন পুরোহিত। শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাই পাশের সামনে দেবীডাঙায় তার বাড়ি। ছোট বেলা থেকে কোনো যন্ত্র ভাঙার চাইতে খুলে তার ভেতরে কি আছে তা দেখে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাই তার স্বভাব। বড় হয়ে স্কুলে যাওয়া আসার পথে রাস্তার পানীয় জলের ট্যাপগুলো থেকে অঝড়ে জল পড়া দেখতে দেখতে তার মনে প্রশ্ন জাগে, কি করে এই জল অপচয় রোধ করা যায়?

জল অপচয় রোধে বাঙালি ছাত্রের আবিষ্কার 'প্যাডেল ট্যাপ'/The News বাংলা
জল অপচয় রোধে বাঙালি ছাত্রের আবিষ্কার ‘প্যাডেল ট্যাপ’/The News বাংলা

শিলিগুড়ি পুরনিগম এলাকায় রাস্তার ওপর পানীয় জলের ট্যাপ থেকে অনেক সময়ই চোরের উপদ্রবে নল গায়েব হয়ে যায়। তাই নল না থাকায় সেখান দিয়ে অঝড়ে জল পড়তে থাকে। অন্যদিকে এমন প্রচুর মানুষ আছেন যারা ট্যাপ ঘুরিয়ে জল তো ভরে নেন। কিন্তু সেই ট্যাপ উল্টোদিকে ঘুরিয়ে জল বন্ধ করে দেওয়ার মত সময় তাদের থাকে না। পৃথ্বীরাজ স্কুলে যাওয়া আসার পথে এসব লক্ষ্য করে ও তার খারাপ লাগে।

আরও পড়ুন: মমতার নির্দেশকে বুড়ো আঙুল, সিন্ডিকেট জুলুমে রাজ্য ছাড়ছেন শিল্পপতি

একদিন বাড়ির জঞ্জাল ফেলার ডাস্টবিনের দিকে তার নজর পরে। সে দেখে পা দিয়ে চাপ দিলে ডাস্টবিনের ঢাকনা খুলে যায়। আবার সেখান থেকে পা তুলে নিলে ঢাকনাটি আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। তখন তার মনে জিনিসটি গেঁথে যায়। সে বিষটিকে জলের কলের সাথে কিভাবে যুক্ত করা যায় তা নিয়ে ভাবতে থাকে।

আরও পড়ুন: অসুস্থ শিল্পীকে ‘বঙ্গরত্ন’ দেওয়ার দাবী নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ ছাত্রছাত্রীরা

বাড়ির এদিকে ওদিকে পড়ে থাকা টিনের অংশ কেটে নল লাগিয়ে নানাভাবে কারুকার্য করে বানিয়ে ফেলে একটি যন্ত্র। ট্যাপের সাথে তা লাগিয়ে ভাবনার সাথে বাস্তবের মিল খুঁজে পায় সে। এই জিনিসটিকে সে স্কুলের মিশন ইনভেনসানের প্রজেক্টের সময় ডিসপ্লে করে। কলকাতায় মিশন ইনভেনশানের প্রতিযোগিতায় তরুণের এই নতুন আবিষ্কার তেমন গুরুত্ব না পেলেও, স্কুলের শিক্ষক ও গৃহশিক্ষকরা নতুন এই আবিষ্কারটি দেখে খুব খুশি হন।

জল অপচয় রোধে বাঙালি ছাত্রের আবিষ্কার 'প্যাডেল ট্যাপ'/The News বাংলা
জল অপচয় রোধে বাঙালি ছাত্রের আবিষ্কার ‘প্যাডেল ট্যাপ’/The News বাংলা

শিলিগুড়িতে মাঝে মাঝেই পানীয় জল না মেলায় হাহাকার পড়ে যায়। এদিকে যখন ঠিকমতো পানীয় জল সরবরাহ হয় তার প্রায় অর্ধেক জল মানুষের সচেতনতার অভাবে ও নল চুরি হয়ে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই নতুন আবিষ্কারটিকে নলের জায়গায় লাগালে নল চুরির মত ঘটনাও ঘটবে না। পাশাপাশি নল বন্ধ করারও প্রয়োজন পড়বে না।

আরও পড়ুন: জনগণকে ‘গাধা’ বানিয়ে ‘শিক্ষাগুরু নেহেরু’র যোগ্য ছাত্র সব রাজনীতিবিদ

আর এতেই রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছে পৃথ্বীরাজ। এই বিষয়টি স্থানীয় সমাজসেবী মদন ভট্টাচার্য জানতে পারলে তিনি ছাত্রটির বাড়িতে এসে সব দেখে যান। এই যন্ত্রটি বানানোর কনসেপ্ট নিয়ে আরও এরকম যন্ত্র বানিয়ে যাতে সমস্ত নলগুলির সাথে যুক্ত করা যায় সে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন বলে জানান।

এমন একজন আবিষ্কারকের আর্থিক অবস্থা অনুকুল না থাকায় ভবিষ্যতে ছেলেটির পড়াশুনার ভার নেন স্থানীয় সমাজসেবী মদন ভট্টাচার্য। ভবিষ্যতে পদার্থ বিজ্ঞানী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে পৃথ্বীরাজ। আজ তরুনের আবিষ্কার গুরুত্ব না পেলেও কে বলতে পারে ভবিষ্যতে এই নতুন আবিষ্কার একদিন অনেক বড় মাত্রা পাবে না?

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন