ভারতের চাপে মাসুদ আজাহারের জইশ জঙ্গি দফতরের দখল নিল পাকিস্তান পুলিশ। জানা গেছে, পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের বাহওয়ালপুরে জইশ ই মহম্মদ জঙ্গিদের একটি দফতরের দখল নিয়েছে পাকিস্তানের পুলিশ। যদিও এটা ভারতের চাপে পরে লোকদেখানি না মাসুদ আজাহারকে সুরক্ষা দিল পাকিস্তান, সেটাই এখন প্রশ্ন।
পুলওয়ামা হামলার পর বিশ্বব্যাপী নিন্দিত এবং কোণঠাসা হয়ে জইশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল পাকিস্তান। জানা গিয়েছে, শুক্রবার পাকিস্তানে অবস্থিত ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর সদর দফতরের দখল নিয়েছে পাক পুলিশ। আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানকে একঘরে করে দেবার প্রচেষ্টায় সফল ভারত। সেই ভয়েই লোকদেখানি হলেও মাসুদ আজাহারের জইশ জঙ্গি দফতরের দখল নিল পাক পুলিশ।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলা হয় সিআরপিএফ কনভয়ে। হামলার পরই ঘটনার দায় স্বীকার করে নেয় পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ। স্বাভাবিকভাবেই অভিযোগের তীর যায় পাকিস্তানের দিকেই। তার পরেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান হামলার নেপথ্যে নিজের দেশের ভূমিকা অস্বীকার করে ভারতের কাছে প্রমাণ দাবি করেছিলেন।
তবে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স সহ বিশ্বের সব দেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিজেদের বক্তব্য রাখে। এমনকি এইভাবে জঙ্গিদের সাহায্য করলে আই এম এফ থেকে পাকিস্তানকে সব রকম ঋণ বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা শোনানো হয়। এরপরই শুক্রবার জানা যায়, পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে জইশের সদর দফতরের দখল নিয়েছে পাক পুলিশ। একটি সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, পঞ্জাব প্রদেশের বাহওয়ালপুরে মাদ্রাসাতুল সাবির ও জামা-ই-মসজিদ সুবহানাল্লা-সহ একটি ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পাঞ্জাব সরকার এর পুলিশ।
তবে সবটাই যে লোকদেখানি সেটাই বলছে ভারত। এর আগে পাঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতেও ব্যবস্থা নিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহারকে হেফাজতে নেয় ইসলামাবাদ প্রশাসন। হেফাজতে নেওয়া হয় মাসুদ আজহারের ভাই মুফতি আব্দুল রউফ সহ ১২জন জইশ জঙ্গিকে। পাঠানকোট হামলার নেপথ্যে এই রউফের নামই উঠে এসেছে। এছাড়াও, জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের অফিসও সিল করে দেওয়া হয়। পরে প্রমাণ হয়ে যায় সবটাই কিছুদিনের জন্য লোকদেখানি।
মৌলানা মাসুদ আজহার হল সেই জঙ্গি যাকে আজ থেকে ২০ বছর আগে ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভারত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল পাক জঙ্গিরা। কাঠমাণ্ডু থেকে দিল্লি আসার সময় ইন্ডিয়ার এয়ারলাইন্সের বিমান আইসি-৮১৪ হাইজ্যাক করে পাক জঙ্গিরা। তারপর পণবন্দিদের মুক্তির জন্য মাসুদ আজহারকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তৎকালীন বিজেপি সরকার।
পাঠানকোটে জঙ্গি হামলার পরই নাম উঠে আসে মাসুদ আজহার ও তার ভাইয়ের। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরি করে নয়াদিল্লি। ভারতের তরফে ইসলামাবাদের হাতে পাঠানকোট হামলার যে তথ্যপ্রমাণ তুলে দেওয়া হয়, তাতে স্পষ্ট দাবি করা হয়, সেদিনের হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ।বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে জঙ্গিরা সেদিন যে নম্বরগুলোতে তাদের পরিবারের সদস্য ও হ্যান্ডলারদের ফোন করেছিল, সেই নম্বরগুলোও পাকিস্তানের।
তারপরই ব্যবস্থা নেয় নওয়াজ শরিফ প্রশাসন। পাঠানকোটে জঙ্গি হামলার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে মাসুদ, রউফ সহ ১২ জইশ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পাক সরকার। এছাড়াও তদন্তের স্বার্থে পাকিস্তানে থাকা জঙ্গি গোষ্ঠীর বেশ কয়েকটি অফিসও সিল করে দেওয়া হয়। এই গ্রেফতারের পর পাক সরকারের তরফে দাবি করা হয়, দীর্ঘ তদন্তের পরই জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত পাক আদালত তাদের সবাইকে ছেড়েও দেয়। এবারেও সেই লোকদেখানি পদক্ষেপ শুরু করেছে বলেই ভারতের তরফ থেকে জানান হয়েছে।