সব দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে, কিন্তু রাজ্যের এই মুহূর্তে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির প্রার্থী তালিকা তখনও ঘোষণা হয়নি। তাতে ক্রমেই হতাশা বাড়ছিল কর্মী সমর্থকদের। অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮ টায় প্রকাশিত হয় রাজ্য বিজেপির ২৮ জনের প্রার্থী তালিকা। আর তারপরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এ উত্তাল হয়ে ওঠে কোচবিহার। নিশীথ প্রামানিককে প্রার্থী করা নিয়ে ভাংচুর হয় দলিয় দফতর।
আরও পড়ুনঃ আইএমএফ রিপোর্টে দ্রুততম অর্থনৈতিক বৃদ্ধির তালিকায় ভারত
প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই বিজেপির কিছু লোকসভার প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ শুরু হয় রাজ্য জুড়ে। বিজেপি সমর্থকরা কিছু কেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। এর মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরম আকার নেয় কোচবিহারে। ভাংচুর করা হয় দলিয় দফতরে।
আরও পড়ুনঃ লোকসভা রিপোর্টে গত ৫ বছরে তৃণমূল সাংসদদের পারফরম্যান্স লজ্জাজনক
কোচবিহার লোকসভা আসনে বিজেপির তরফে প্রার্থী করা হয়েছে সদ্য তৃণমূল ত্যাগী, তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক নিশীথ প্রামানিককে। আর তাকে প্রার্থী হিসেবে আপত্তি জেলা বিজেপি নেতৃত্বের। তারা কিছুতেই সদ্য বিজেপিতে আসা কাউকে প্রার্থী হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি নন।
আরও পড়ুনঃ মোদীকে হঠাতে ভিভিপ্যাটের সংখ্যা বাড়াতে কমিশনে আর্জি মহাজোটের
জেলা বিজেপির সভানেত্রী মালতী রাভা রায়ও নিশীথের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সামিল হন। কোচবিহারে বহুদিন ধরেই বিজেপির সংগঠন অনেকটাই মজবুত। তাই কিছুতেই সম্ভাব্য জেতা আসন হাতছাড়া করতে চায় না বিজেপি। প্রয়োজনে নিশীথের বিরুদ্ধেই অন্য কাউকে প্রার্থী করার কথাও বলা হয়। এক্ষেত্রে তাদের পছন্দের দীপক বর্মনের নামও উঠে আসে।
আরও পড়ুনঃ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে ভরা তৃণমূলের তারকা তালিকা নির্বাচন কমিশনে
নিশীথের বিরুদ্ধে চোরাপাচার সহ বেআইনী কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া কোচবিহারে বিজেপি কর্মীরা নিশীথের নেতৃত্বে অনেকবার আক্রান্ত হয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন। প্রার্থীপদ প্রত্যাহার না করলে জেলার বিজেপি নেতারা একযোগে দলত্যাগ করার হুঁশিয়ারি দিতে থাকেন। ভাংচুর করা হয় নিজেদের দলীয় কার্যালয়।
আরও পড়ুনঃ ভোটের গানে বিপাকে বাবুল, কমিশনের হাতে টুইট অস্ত্র
এরপরেই তড়িঘড়ি আসরে নামতে হয় বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ রাজ্য নেতৃত্বকে। শুক্রবারই অমিত শাহর নির্দেশে রাজ্যে বিজেপির পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেন।
তারপরেই আজ শুক্রবার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা রায়ই জানান, এই মুহূর্তে অবস্থা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। নিশীথের হয়েই লড়াইয়ের ময়দানে বিজেপি সমর্থকরা পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। আপাতত নিজেদের মধ্যে পরিচয় করিয়ে, বুঝিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুনঃ বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, বাংলায় বিজেপি প্রার্থীদের নাম
এক সময় প্রয়াত তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি রানা বোসের হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছিলেন নিশীথ প্রামাণিক(বিট্টু)। দিনহাটার ভেটাগুড়ি বাজার এলাকার যুবক নিশীথের সাথে তৃণমূলের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে রানা বোসের মাধ্যমেই। তিনি প্রয়াত হওয়ার পর কোচবিহারে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক করা হয় নিশীথকেই।
আরও পড়ুনঃ বারাণসী থেকে লড়বেন মোদী, গান্ধীনগরে আডবানির পরিবর্তে অমিত শাহ
২৮ ফেব্রুয়ারি দিল্লীতে বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিশীথ প্রামাণিককে দলে যোগদান করায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। মাধ্যম ছিলেন সেই মুকুল রায়। দলে যোগদানের সময়ই নিশীথের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানা যায়। আর সেই সম্ভাবনাই শেষ পর্যন্ত বাস্তব হয়েছে। কিন্তু তাঁকে প্রার্থী করা নিয়ে কোচবিহার বিজেপিতে চূড়ান্ত বিরোধ তৈরি হয়েছে। বিজেপির এই ক্ষোভ বিক্ষোভে তৃণমূল শিবির খুশি।
আরও পড়ুনঃ বাবুলকে হারাতে ১ কোটি টাকার কাজের টোপ, বিতর্কিত ঘোষণা মেয়রের
এদিকে ১১ এপ্রিল প্রথম দফায় কোচবিহারে ভোট হতে চলেছে। অর্থাৎ হাতে সময় মাত্র ১৯ দিন। তার মধ্যে মনোনয়ন প্রক্রিয়া রয়েছে। বাকি সময়ের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে কোচবিহারের বেশী সংখ্যক মানুষের ভোটকে নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে নিশীথ প্রামাণিক কতটা সক্ষম হন, এখন সেটাই দেখার। আপাতত কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত। কিন্তু বিজেপির নেতারা প্রচারে ঠিকঠাক অংশ নেবেন কিনা সেটাই এখন দেখার।
আরও পড়ুনঃ নির্বাচন কমিশনের নতুন অ্যাপ সি ভিজিল, জনতার অভিযোগে ১০০ মিনিটের মধ্যে ব্যবস্থা
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।