যৌন হেনস্থার অভিযোগে এবার প্রশ্নের মুখে নরেন্দ্র মোদী সরকার

455
Image Source: Google Image

নিজস্ব সংবাদদাতা: সোশ্যাল মিডিয়ার মি টু (#Me Too) স্লোগান এবার আছড়ে পড়ল নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রীসভাতেও। যৌন হেনস্তার অভিযোগের ঘটনায় এবার নাম জড়াল ভারতের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরেরও। তবে মন্ত্রী থাকাকালীন নয়, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সেই সময়ের, যখন তিনি ছিলেন একজন সফল সম্পাদক ও সাংবাদিক। অভিযোগ যাঁরা করেছেন, সাংবাদিক হিসেবে তাঁরাও বেশ পরিচিত মুখ।

বিদেশ প্রতিমন্ত্রী আকবরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান নি বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। মঙ্গলবার বিদেশ মন্ত্রকের এক অনুষ্ঠানে একাধিক মহিলা সাংবাদিক এই বিষয়ে সুষমাকে প্রশ্ন করেন। তাঁরা জানতে চান, যৌন হেনস্তার গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। আপনি নারী এবং মন্ত্রণালয়ের প্রধান। এসব অভিযোগের কি কোনো তদন্ত হবে?

সুষমা প্রশ্ন শুনলেও কোনো মন্তব্য না করে নীরবে হেঁটে চলে যান। সুষমার দুই প্রতিমন্ত্রীর একজন হলেন এম যে আকবর ও অন্যজন দেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিং। আকবর এই মুহূর্তে বিদেশে। বুধবারই তাঁর দেশে ফেরার কথা।

হ্যাশট্যাগ মি টু (#MeeToo), সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলনের শুরুটা হয় মার্কিন মুলুকে। গত এক বছর ধরে মার্কিন মুলুকের সফল চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভে ওয়েইনস্টেনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগের ঝড় বয়ে যাচ্ছে যা ‘#মি টু’ নামে পরিচিত।

একের পর এক অভিনেত্রী ও অন্যান্য মহিলারা এই প্রযোজকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন, যেগুলো আদালতের বিচারাধীন। তারই রেশ ধরে ভারতেও শুরু হয়েছে এই ‘মি টু’ আন্দোলন।

সমস্ত পেশার মতোই সংবাদজগতেও এই ধরণের ঘটনা নতুন নয়। গোটা বিশ্বেই শিক্ষানবিশ ও নতুন আসা মহিলা সাংবাদিকদের যৌন হেনস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় বলেই অভিযোগ। তবে খুব কম মহিলাই কোন ঘটনা প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন।

ভারতে এই ঘটনা এখন একে একে প্রকাশ্যে আসছে। হিন্দি সিনেমার বাঙালি অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত, সম্প্রতি অভিনেতা নানা পাটেকার ও নৃত্য পরিচালক গণেশ আচার্যের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনেন। যেটা নাকি ঘটেছিল প্রায় ১০ বছর আগে। সেই থেকে একে একে শুরু হয়েছে অভিযোগের পালা।

অভিযোগের তালিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। ছাড় পান নি প্রবীণ অভিনেতা অলোকনাথও। তাঁর বিরুদ্ধেও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ শুধু ফিল্ম জগতেই সীমাবদ্ধ নেই। অভিনয় জগতের গণ্ডি পেরিয়ে তাতে জড়িয়ে গেছেন লেখক ও সাংবাদিকরাও। আকবরের নাম আসার সঙ্গে সঙ্গে এবার জড়িয়ে পড়লেন মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদরাও।

আকবরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ প্রথম এনেছিলেন সাংবাদিক প্রিয়া রামানি। যদিও এক বছর আগে লেখা সেই প্রতিবেদনে তিনি আকবরের নাম করেন নি। কিন্তু সম্প্রতি এক ট্যুইটে তিনি পুরোনো ঘটনা মনে করিয়ে সরাসরি আকবরের নাম নেন।

তার পর থেকে একাধিক মহিলা সাংবাদিক আকবরকে নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে থাকেন। কীভাবে হোটেলের ঘরে ইন্টারভিউর নামে মহিলা সাংবাদিকদের আকবর ডেকে পাঠাতেন, মদ খাওয়াতেন, ঘনিষ্ঠভাবে কাছে বসতে বাধ্য করতেন, অশালীন আচরণ করতেন, মহিলা সাংবাদিকেরা তার বিবরণ দিয়েছেন।

পরিচয় প্রকাশ না করা এক সাংবাদিক লিখেছেন তাঁকে হোটেলে ডাকার কাহিনি। ‘সম্পাদক মশাই’ তাঁকে জোর করে মদ খাওয়ালেন এবং জড়িয়ে ধরলেন। সেই মহিলা লিখেছেন, একটা সময় জোর করে আকবারকে ঠেলে দিয়ে, দরজা খুলে তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে আসেন।

আকবরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো প্রধানত সেই সময়ের যখন তিনি কলকাতায় ‘সানডে’ ম্যাগাজিন ও ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এর সম্পাদনা করছেন। এর পর তিনি ‘এশিয়ান এজ’ ও ‘দ্য সানডে গার্ডিয়ান’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। সাংবাদিকতা ছেড়ে আকবর প্রথমে যোগ দেন কংগ্রেসে। সাংসদও হন। পরে বিজেপিতে যোগদান ও মন্ত্রিত্ব লাভ।

আকবরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে সরকারিভাবে কেউ মুখ খোলেন নি। নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে তনুশ্রী দত্ত অভিযোগ করার পর কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী মানেকা গান্ধী শুধু বলেছিলেন, ‘অভিযোগ উড়িয়ে না দিয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন’।

বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নির্যাতনের অভিযোগকে ঘিরে সরকারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বিরোধীরা। ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি তুলেছে কংগ্রেস।

কংগ্রেস মুখপাত্র প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী এই প্রসঙ্গে মোদী সরকারের মৌন থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘নিজে মহিলা হওয়া সত্ত্বেও কী করে সুষমা স্বরাজ চুপ করে রয়েছেন? এম জে আকবরই বা চুপ রয়েছেন কেন? এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী জবাব দিন। যাঁরা বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও নিয়ে সরব, তাঁরা এই ইস্যুতে মৌনতা ভাঙুন’।

যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১০ বছর বা ২০ বছর আগের অভিযোগের কি তদন্ত হবে ? কি প্রমাণই বা পাওয়া যাবে ? কেউ মিথ্যা অভিযোগ করলেও কি তা বিশ্বাস করে নিতে হবে ?

লোকসভা ভোটের আগে সুদূর মার্কিন মুলুকের ‘মি টু’ আন্দোলন যে এইভাবে ভারতে ঢুকে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে বিপদে ফেলে দেবে আঁচ করেন নি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও। এম জে আকবরের ঘটনা কেন্দ্রীয় সরকার কি ভাবে সামলায় সেটাই এখন দেখার।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন