নিউ দিল্লি: সিবিআই-য়ের মধ্যে ঝামেলা মেটাতে এবার হস্তক্ষেপ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হল সিবিআই-এর ডিরেক্টর অলোক বর্মাকে। একইসঙ্গে ছুটিতে পাঠানো হল স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানাকেও। সরকারি তরফে নির্দেশিকা দিয়ে এম নাগেশ্বর রাওকে অন্তবর্তীকালীন ডিরেক্টর নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে কাজে যোগও দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
আইপিএস নাগেশ্বর রাও সিবিআই-এর জয়েন্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজও করেছেন। সরকারি নির্দেশ নামায় বলা হয়েছে, তিনি সিবিআই-এর ডিরেক্টরের কাজ সামলাবেন। একইসঙ্গে ২ জয়েন্ট ডিরেক্টরকেও সরানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
ডিরেক্টর অলোক বর্মা এবং রাকেশ আস্থানার গণ্ডগোল গড়ায় দিল্লি হাইকোর্টে। মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্ট সিবিআইকে রাকেশ আস্থানার বিষয়ে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্থিতবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। শুনানি চলাকালীন সিবিআই-এর তরফে তোলাবাজি ও জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করা হয় রাকেশ আস্থানা এবং দেবেন্দ্র সিং-য়ের বিরুদ্ধে। দেবেন্দ্র সিংকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ আনেন অলোক বর্মা। সূত্রের খবর অনুযায়ী, সিবিআই-এর সদর দফতরের কয়েকটি তলা সিল করে দেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে তল্লাশি। দফতরে কাউকে ঢুকতে কিংবা বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না।
বর্তমানে, ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই কার্যত এক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। যা নরেন্দ্র মোদীর এনডিএ সরকারের জন্য বেশ বিব্রতকর। সংস্থার শীর্ষ দুই কর্মকর্তার মধ্যে প্রকাশ্য লড়াই শুরু হয়েছে। সিবিআইয়ের দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধেই ঘুষ গ্রহণের মামলা করেছে সিবিআই। অর্থাৎ সিবিআই-য়ের বিরুদ্ধেই ঘুষ নেবার অভিযোগ সিবিআই-য়ের।
ওদিকে রাকেশ আস্থানাও অভিযোগ তুলেছেন সিবিআই ডাইরেক্টর অলোক বর্মার বিরুদ্ধে। তিনি বলেছেন, তাকে তাড়ানোর চেষ্টা করছেন অলোক বর্মা। সরকারের কাছে তিনি লিখিত বিবৃতিও দিয়েছেন। তাতে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যে এফআইআর করা হয়েছে। একটি ঘুষ গ্রহণ মামলায় সংস্থাটি স্পেশাল ডাইরেক্টর রাকেশ আস্থানা’র নাম উল্লেখ করেছে।
সিবিআইয়ের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতিতে জড়িত থাকার তদন্ত করছে। আবার এ টিমেরও প্রধান তিনি। অভিযোগ আছে, মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশির কাছে ঘুষ দাবি করেছেন তিনি ও অন্যরা। শুধু তা-ই নয়। তাদের কাছ থেকে তারা ঘুষ নিয়েছেনও।
তবে এই তদন্তের আগে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন (সিভিসি)কে এ বিষয়ে অবহিত করেছে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম। তারা জানিয়ে দিয়েছে যে, আস্থানার বিরুদ্ধে ৬টি দুর্নীতির মামলায় তদন্ত করছে তারা। গোয়েন্দা এজেন্সি আরো দাবি করেছে, সিবিআই ডাইরেক্টর অলোক বর্মার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছিলেন আস্থানা।
একই সঙ্গে তিনি সিভিসি’তে অলোক বর্মার বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ পাঠিয়ে কর্মকর্তাদের ভীতি প্রদর্শন করছিলেন, বলেও অভিযোগ আনা হয়। দুবাইয়ের বাসিন্দা ‘ঘুষের’ মধ্যস্থতাকারী মনোজ প্রসাদকে গ্রেপ্তারের পর রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় বলেই জানিয়েছে সিবিআই।
২০১৪ সালে আয়কর বিভাগ, মইন কুরেশির বাড়ি ও দফতর ঘেরাও করে তল্লাশি করে। তিনি সিবিআইয়ের প্রাক্তন পরিচালক এ পি সিংয়ের কাছে যেসব এসএমএস পাঠিয়েছিলেন তাকে কেন্দ্র করে এ পি সিং ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিসেস কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে পদত্যাগ করেন।
২০১৭ সালে এই নিয়ে একটি মামলা করে সিবিআই। রাকেশ আস্থানা যতগুলো মামলা নিজের হাতে নিয়েছিলেন। তার একটি এটি। এ মামলার অভিযোগকারী সানা সতীশ ৪ঠা অক্টোবর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে রাকেশ আস্থানার নাম প্রকাশ করেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন, আরও অধিক অর্থ দেয়ার জন্য তাকে হয়রান করছিলেন সিবিআইয়ের কর্মকর্তারা। সতীশ আদালতে বলেন, তিনি কীভাবে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ১০ মাস সময়ে ৩ কোটি টাকা দেন সিবিআইয়ের মামলা থেকে দূরে থাকার জন্য।
দুই সিবিআই কর্তার ঝগড়া ও মামলায় গোটা দেশে মুখ পুড়েছে সিবিআই-য়ের। দেশের অন্যতম প্রধান গোয়েন্দা দফতর আজ সাধারণ মানুষের হাসির খোরাক। দুজনকেই সাময়িক ছুটিতে পাঠিয়ে আপাততঃ সেই ঝগড়া চাপা দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে এর মধ্যেই সিবিআই মানুষের যে বিশ্বাস হারিয়েছে তা কি ফিরে আসবে ? প্রশ্ন কিন্তু উঠেছে।