The News বাংলা, কলকাতা: মন্ত্রীত্ব থেকে শোভন চ্যাটার্জী ইস্তফা দেওয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে মেয়র পদ থেকেও ইস্তফা দিতে বলেন। কিন্তু এবার কলকাতা পুরসভার মেয়র পদে কে বসবেন তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। যে পদে একসময় ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, সেই পদে এবার কে?
বরাবরের মত এবারেও শোনা যাচ্ছে, মেয়র হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দুই মেয়র পারিষদ- অতীন ঘোষ ও দেবাশিস কুমার। মমতার নির্দেশে, শোভন চ্যাটার্জীর অবর্তমানে যাবতীয় কাজের দেখভালের দায়িত্ব আপাতত থাকবেন পুরসভার কমিশনার খলিল আহমেদ।
তবে, মেয়রের চেয়ারে কে বসবেন সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলেনি। এতদিন তৃণমূলে মেয়র হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন দক্ষিণ কলকাতার নেতারাই। সে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ই হোন বা শোভন চ্যাটার্জী, সেই সূচি মেনে দেবাশিস কুমারের সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন অনেকে।
কিন্তু কারও কারও মতে, উত্তর কলকাতার মেয়র পারিষদরা ভালো কাজ করলেও সেই স্বীকৃতি এতদিন পাননি। সেই কারণেই এবার মেয়র হতে পারেন অতীন ঘোষ।
আরও পড়ুনঃ কয়েক দশকের সম্পর্ক শেষ করে শোভনকে তাড়ালেন মমতা
এর বাইরে আরও একটি নামও শোনা যাচ্ছে, সেটি হল বর্তমানে পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায়৷ দীর্ঘদিন তিনি পুরসভার মেয়র পারিষদের দায়িত্ব সামলেছেন। যদিও মাঝে তাঁর সঙ্গে দলের দূরত্ব বেড়েছিল।
তিনি তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। কিন্তু ফের ঘাসফুলে ফিরলে, তাঁকে যোগ্য সম্মানই দিয়েছেন নেত্রী। সেক্ষেত্রে মালা রায়ের দিকেও পাল্লা ভারী বলে মনে করছেন অনেকে।
আরও পড়ুনঃ ঘাসফুল ছেঁটে মমতার ‘কাননে’ কি এবার পদ্ম
তবে শেষ পর্যন্ত উঠে এসেছে, রাজ্যের তিন হেভিওয়েট মন্ত্রীর নাম। সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস ও ফিরহাদ হাকিম। সুব্রতবাবু আগে কলকাতা করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ত্ব সফলভাবেই সামলেছেন। তবে এখন, সুব্রতবাবু মন্ত্রীত্বের পাশাপাশি মেয়র হতে চান না বলেই তৃণমূল সূত্রে খবর।
জোরদার লড়াই এখন অরূপ বিশ্বাস ও ফিরহাদ হাকিমের মধ্যে। ফিরহাদ হাকিমের পাল্লাই ভারী বলে মনে করছে মমতার খুব কাছের তৃণমূল নেতারা। কারণ তিনি আগে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ ছিলেন। তাছাড়া তিনি রাজ্যের পুরমন্ত্রীও। পুরসভার মেয়র ও পুরমন্ত্রী একজন হলে কাজে গতি আসবে বলে মনে করেন স্বয়ং মমতাও।
আরও পড়ুনঃ প্রেমের জয়ে বদনাম বিশ্ব সংসার ‘অ-শোভন’
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৯ এ লোকসভা ভোট আর ২০২১ এ বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে সংখ্যালঘু ভোট পুরোটাই নিজের ঝুলিতে রাখতেই ফিরহাদ হাকিমকেই কলকাতার মেয়র করবেন মমতা। তবে, পুরসভার আইন অনুযায়ী কাউন্সিলর না হলে কেউ মেয়র হতে পারবেন না। তাই, ফিরহাদ হাকিমকে মেয়র করতে হলে বিধানসভায় পুর আইন সংশোধন করতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে।
জোরদার লড়াইয়ে আছেন অরুপ বিশ্বাসও। তৃণমূল সূত্রের খবর, ফিরহাদ ও অরুপ দুজনেই এখন দিদির খুব পছন্দের। অরুপ বিশ্বাস নিজেও মেয়র হবার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। তবে, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মেয়র হবার দৌড়ে এগিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমই। তাই তাঁকে মেয়র পদে বসাতে কলকাতা পুরসভার আইন সংশোধন করতে চাইছেন মমতা, এমনটাই নবান্ন সূত্রে খবর।
আরও পড়ুনঃ মেয়রের পদত্যাগ দাবী করল তৃণমূল কংগ্রেস
শেষ পর্যন্ত কি পুরমন্ত্রীই হতে চলেছেন কলকাতার পরবর্তী মেয়র? সম্ভাবনা বাড়ছে। তবে, যিনি ঠিক করবেন তিনি এখনও ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেন নি বলেই খবর। আলোচনার বাইরে কোন বিশিষ্ট জনকেও তিনি কলকাতার মেয়র করতে পারেন বলে খবর।
এই পরিস্থিত ‘কাননে’র জায়গায় নেত্রী কাকে বসান, সেটাই এখন দেখার। অতীন-দেবাশীষ-সুব্রত-অরূপ-ফিরহাদ না এর বাইরে অন্য কেউ? সিদ্ধান্ত সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই। আর কে না জানে, নেত্রী সবসময় ‘আনপ্রেডিকটেবল’। তিনি কি করবেন একমাত্ৰ তিনিই জানেন।