বছরে কত টাকা কাটমানি তোলেন তৃণমূল নেতারা, হিসাব দেখে চমকে যাবেন মুকেশ আম্বানিও

2069
বছরে কত টাকা কাটমানি তোলেন তৃণমূল নেতারা, চমকে যাবেন মুকেশ আম্বানিও/The News বাংলা
বছরে কত টাকা কাটমানি তোলেন তৃণমূল নেতারা, চমকে যাবেন মুকেশ আম্বানিও/The News বাংলা

কাটমানি কেলেঙ্কারি। আর কাটমানি নিয়েই তোলপাড় গোটা রাজ্য। কিন্তু বছরে কত টাকা কাটমানি তোলেন তৃণমূল নেতারা? জানেন কি হিসাব? হিসাব দেখলে চোখ কপালে উঠবে সবার। আর খাতায় কলমে অঙ্ক কষে; হিসাব দেখিয়ে দিলেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউট (আই এস আই)-র; অর্থনীতির অধ্যাপক ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত। কি লিখলেন অর্থনীতির অধ্যাপক ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত? পড়ে নিন।

“আপনাদের কোনো ধারণা আছে; তৃণমূলীরা বছরে বাংলা থেকে কত কাটমানি খায়? আনুমানিক হিসাব; এই চুরির অঙ্ক এবছরে কমপক্ষে ৩০০০০ কোটি টাকা। হাঁ ঠিক দেখছেন। বছরে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা; যা বাংলার একবছরে শিক্ষা খাতে খরচার সমান।

বিষয়টির ব্যাপকতা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করতে আমাদের জানা দরকার; গত বছর রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মোট মুনাফা ছিল ৪০০০০ কোটি টাকা। বাংলায় যে কোন সরকারী নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয়ের ১০-১৫ % কাটমানি হিসাবে যায় স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের পকেটে। ঠিক এর সমানুপাতে টাকা তৃণমূল নেতারা; বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প, যেমন কন্যাশ্রী, রুপশ্রী অথবা গৃহনির্মাণ প্রকল্প থেকে সরিয়েছে।

২০১৯-২০ আর্থিকবর্ষে; বাংলার প্রস্তাবিত বাজেট ব্যয় ২লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দায় (পেনশন, বেতন এবং সুদপ্রদান); এবং ঋণ পরিশোধের যৌথ মিলিত পরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ ৪০হাজার কোটি টাকা। অবশিষ্ট ১ লক্ষ কোটি টাকার; বেশিরভাগই খরচা ধরা হয়েছে পরিকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, নতুন প্রকল্প নির্মাণ এবং বিভিন্নভাবে ভর্তুকি প্রদানে।

এই সমস্ত কিছুই কাটমানির আওতায় পড়ে; এবং এগুলির থেকে কাটমানি নেওয়া হয়। এবছর নির্মাণ ও মেরামতি প্রকল্প এবং সাধারণ ভর্তুকি খাতে; আনুমানিক বরাদ্দ ৪০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। আমরা যদি ভালো মনে ধরেও নি যে; অন্য কোথাও কাটমানি নেওয়া হবে না; তবুও কমপক্ষে ধরলে ৫০০০ কোটি টাকা শুধু এখান থেকেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং তার পরিমাণ ১৫০০০ কোটি টাকা পর্যন্তও হতে পারে।

এর সাথে যোগ করুন সিন্ডিকেট রাজের ফলে; বেসরকারি নির্মাণ প্রকল্পগুলিতে ৩০% থেকে ৪০ % খরচা বৃদ্ধি। বেসরকারী নির্মাণ প্রকল্পগুলি; বাংলার গড় রাজ্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিএসডিপি)-র ১০% উৎপন্ন করে। এবং বেসরকারী নির্মাণ ক্ষেত্রের; প্রায় অর্ধেক অংশে এই অন্যায় জুলুমবাজির জন্য; সোজা হিসাবে কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকা; তৃণমূল নেতাদের পকেটে যায় বছরে।

শেষে যোগ করুন চাকরি দেওয়ার নাম করে এবং তা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে; একবারে মোটা টাকা নেওয়া। প্রভাব খাটিয়ে কোন কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে; রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের উপর ‘জরিমানা’ চাপিয়ে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রিক্সাওয়ালা এবং অটোচালকের কাছ থেকে; প্রতিদিন তোলার নামে কমপক্ষে বছরে আরও ৫হাজার কোটি টাকা।

এবারে দেখুন, কম করে ধরেও এই কাটমানির আনুমানিক হিসাব; বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা কিভাবে মিলে যাচ্ছে। এই অঙ্ক বাংলার প্রস্তাবিত মোট আয়ের ২% এবং গোটা শিক্ষা বাজেটে মোট বরাদ্দের সমান”।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন; গরিব ও গৃহহীনদের সরকারি বাড়ি প্রকল্পে ৩০০০০ টাকা করে কাটমানি নেওয়া হয়েছে। আবার মমতার সরকারি হিসাবে; রাজ্যে ৪০ লাখ এরকম বাড়ি তৈরি হয়েছে। সেই সোজা হিসাবেই; এই কাটমানিরই পরিমাণ দাঁড়াবে ১২০০০ কোটি টাকা।

তাই, রাজ্যের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলও অনেকটাই; এই কাটমানির হিসাবে একমত। গত বছর মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের; মোট মুনাফা ছিল ৪০০০০ কোটি টাকা। আর তৃণমূলের কাটমানির পরিমাণ বছরে ৩০০০০ কোটি টাকা। তৃণমূল নেতাদের ফুলে ফেঁপে ওঠার ব্যাপারটা; এই হিসাব দেখেই; অনেকটাই আন্দাজ করা যায়। তবে এই কাটমানির হিসাব; উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। তৃণমূলের বক্তব্য; অনেকেই এখন ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পরেছেন।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন