কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে মমতা ও রাজনাথের স্বরাষ্ট্র দফতরের চরম সংঘাত

510
কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে মমতা ও রাজনাথের স্বরাষ্ট্র দফতরের চরম সংঘাত/The News বাংলা
কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে মমতা ও রাজনাথের স্বরাষ্ট্র দফতরের চরম সংঘাত/The News বাংলা

বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে মমতা ও মোদী সরকারের চরম সংঘাত ফের প্রকাশ্যে। রাজনাথ সিং এর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরে চিঠি দিয়ে ভোটের কাজের জন্য রাজ্যে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে নেবার জন্য চিঠি দেয়। মমতার স্বরাষ্ট্র দফতর শনিবার পাল্টা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে বাংলার জঙ্গল মহলে থেকে এক কোম্পানি বাহিনীও তোলা যাবে না। এর জেরেই শুরু হয়েছে নজিরবিহীন সংঘাত।

আরও পড়ুনঃ মোদীকে পুনরায় নির্বাচিত না করলে দেশ সংকটে পড়বে, মন্তব্য হেমা মালিনীর

রাজ্যের জঙ্গল মহলে এখন রয়েছে ৩৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। লোকসভা ভোটের জন্য সেই বাহিনীকে কাজে লাগাতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনেকটাই এখন রয়েছে জম্মু কাশ্মীরে। তাই ভোট পরিচালনার জন্য বাংলার জঙ্গল মহল থেকে ওই ৩৫ কোম্পানি বাহিনীকে তুলতে চায় কেন্দ্র। আর তাছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহুবার বলেছেন, রাজ্য মাওবাদী মুক্ত। আর এখানেই শুরু হয়েছে লড়াই। এখনও এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীও ছাড়তে চায় না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার।

আরও পড়ুনঃ মোদীর ব্রিগেড সভার অনুমতি নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দিল সেনা

বাম আমলে ২০০৯ সালের ১৭ জুন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পশ্চিমবঙ্গে অপারেশন গ্রিন হান্ট শুরু করে। মাওবাদীদের কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে সেটাই ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রথম উপস্থিতি। তারপরে কেটে গেছে দশটি বছর। সরকার বদলেছে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলেছে। চারিদিকে প্রচারে ছয়লাপ ‘জঙ্গলমহল হাসছে। উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে জঙ্গলমহল’। তা হলে অসুবিধাটা কোথায়, কেন রাজ্য সরকারের আপত্তি জঙ্গলমহল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে? এবং এটা একবার নয়, বারবার ঘটে চলেছে। প্রশ্ন কেন্দ্রের।

আরও পড়ুনঃ মোদীর মিশন শক্তির ঘোষণায় নির্বাচনী আচরনবিধি লঙ্ঘন হয়নি, জানিয়ে দিল কমিশন

স্বাভাবিকভাবে অনেকবারই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং প্রশ্ন তুলেছেন, এই অংশ থেকেও কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন প্রত্যাহার করা হবে না? রে-রে করে উঠেছে রাজ্য সরকার। জঙ্গলমহল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারে বারবার আপত্তি জানানো হয়েছে রাজ্যের তরফ থেকে। কিসের প্রয়োজন কেন্দ্রীয় বাহিনীর? প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে কেন আপত্তি তুলছে রাজ্য সরকার? বারবার এই প্রশ্ন করেছে কেন্দ্র সরকার।

আরও পড়ুনঃ ২৩ মে নয়, ভোটের ফল পিছতে পারে আরও ৬ দিন জানাল নির্বাচন কমিশন

একটা রাজ্য মাওবাদমুক্ত, এই তকমা যদি পাওয়া যায়, তা হলে সেটা তো সরকারের চূড়ান্ত সাফল্য! সরকার এই সুযোগ হাতছাড়া করছে কেন? কারণ হিসাবে আলোচনায় আসছে দুটি বিষয়। হয় মাওবাদীদের কোনও গোপন গতিবিধি সরকারের নজরে রয়েছে, অথবা মাওবাদকে কেন্দ্র করে যে বিশাল কেন্দ্রীয় আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়, তার অপব্যবহার করার একটি প্রচেষ্টা রাজ্য সরকারের তরফ থেকে রয়েছে। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

আরও পড়ুনঃ মদ বিক্রিতে ১০ হাজার কোটি টাকার সর্বকালিন রেকর্ড গড়ল মা মাটি মানুষের সরকার

ভোট-রাজনীতি নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে আবার কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত শুরু হয়েছে। এবারও রাজ্যের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা থেকে অবশিষ্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে। তবে জম্মু কাশ্মীরে অনেক কোম্পানি বাহিনী পাঠাতে বাধ্য হওয়ায় এবার আর বাংলা থেকে বাহিনী নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে।

আরও পড়ুনঃ শিলিগুড়িতে সভা নিয়ে কাটল জটিলতা, ৩রা এপ্রিলই হচ্ছে মোদীর জনসভা

অতি মাওবাদীপ্রবণ এলাকার কেন্দ্রীয় তালিকা থেকে আগেই বাদ গিয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বীরভূম জেলা। এ বার ‘সিকিওরিটি রিলেটেড এক্সপেন্ডিচার’ বা এসআরই তালিকা থেকেও সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির বাদ দেওয়া হবে। প্রশাসনিক ব্যাখ্যায় এসআরই-র অর্থ, মাওবাদীদের দৌরাত্ম্য না-থাকলেও বাড়তি সতর্কতার জন্য সংশ্লিষ্ট তালিকাভুক্ত এলাকাগুলির নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত নজরদারি।

আরও পড়ুনঃ ভোটের মধ্যেই নারদ মামলায় তৃণমূল নেতাদের চার্জশিট দেবে সিবিআই, খুশি পদ্ম শিবিরে

রাজ্যের সংশ্লিষ্ট জেলাগুলি একবার এসআরই তালিকার বাইরে চলে গেলে সেখানে নিজেদের বাহিনী আর না-ও রাখতে পারে কেন্দ্র। কিন্তু রাজ্য মনে করছে, এই মুহূর্তে তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না। সেটাই চিঠি দিয়ে ফের জানিয়ে দেওয়া হল।

আরও পড়ুনঃ দাঙ্গায় মদত দেওয়ার অভিযোগে হার্দিকের নির্বাচনে লড়তে নিষেধাজ্ঞা গুজরাট হাইকোর্টের

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মার্চের প্রথম সপ্তাহে মাওবাদী সমস্যাপ্রবণ রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব। বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য ছিল মাওবাদী অধ্যুষিত জেলার তালিকা পরিমার্জন। মাওবাদী দৌরাত্ম্য কোন জেলায় কতটা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হয় ওই বৈঠকে। যে-সব জেলায় আর মাওবাদী তৎপরতার প্রমাণ মিলছে না, সেগুলিকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।

আরও পড়ুনঃ ২৩ আসনেই জয় নিশ্চিত, বাংলা দখলের লক্ষ্যে অবিচল অমিত শাহ

এই রাজ্যের সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে দীর্ঘদিন কোনও মাওবাদী উপদ্রব হয়নি। তাই তালিকা থেকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বীরভূমকে পুরোপুরি বাদ দিতে চাইছে কেন্দ্র। কিন্তু রাজ্যের যুক্তি আলাদা। প্রশাসন মনে করছে, বীরভূম এবং পশ্চিম মেদিনীপুর অনেক ‘নিরাপদ’।

আরও পড়ুনঃ সেনার খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা তেজ বাহাদুর বারাণসীতে প্রার্থী মোদীর বিরুদ্ধে

কিন্তু পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম (পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ভেঙে তৈরি নতুন জেলা) ও বাঁকুড়াকে ‘এসআরই’ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত হবে না। প্রশাসনের অনেকের যুক্তি, অনেক দিন ধরেই জেলাগুলি শান্ত আছে। কিন্তু এসআরই তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে বাহিনী প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করে দেবে কেন্দ্র। তখনই পড়শি রাজ্য থেকে মাওবাদীরা বাংলায় ঢুকে নতুন করে সংগঠন গড়তে পারে।

আরও পড়ুনঃ লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিপুল উত্থান পদ্মের, ইঙ্গিত সমীক্ষায়

ছত্তীসগঢ় এর সুকমায় ভয়াবহ মাওবাদী হামলা হয়ে চলেছে এখনও। এই পরিস্থিতিতে বাংলার জঙ্গল মহল থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করলে ফের বাংলায় মাওবাদ মাথা চারা দেবে বলেই মত রাজ্যের। তবে এবার কাশ্মীর সমস্যার জন্য অন্য কোন উপায় নেই কেন্দ্রের। এই লড়াই শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন বা পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টে গড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ পাক জঙ্গিদের সাহায্যকারি দেশের বিশ্বাসঘাতকদের খুঁজতে ৮ সদ্যসের গোয়েন্দা দল

আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন