চারদিনের উত্তরবঙ্গ সফরের প্রথম দিন, সোমবার শিলিগুড়িতে পা রেখে একপ্রকার ঝড়ের বেগেই এসে অষ্টম উত্তরবঙ্গ উৎসবের সূচনা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ উৎসবের সূচনা করেই বিজেপির সমালোচনা করে পাহাড়কে শান্ত থাকার অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়তে পারেনঃ রাজ্যের হাতে টাকা নেই বাজারে ধার, তারপরেও বিধায়কদের ভাতা বাড়ছে
দুপুরের বিমানে আরও তাড়াতাড়িই তাঁর আসার কথা ছিল। তাই দুপুর থেকেই অধির আগ্রহে স্কুলের ছেলেমেয়েদের থেকে শুরু করে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা অপেক্ষা করছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে। কিন্তু যান্ত্রিক গোলযোগের কারনে তার বিমান তিনঘন্টা দেরী করায় এদিন মঞ্চেই উত্তরবঙ্গবাসির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি।
তবুও এক সময় দেখা গেল গ্যালারী থেকে স্কুল পড়ুয়ারা দলে দলে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। তা দেখে স্কুলের শিক্ষকদের ঘোষনা করে তাদের আটকানোর অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল পড়ুয়াদের। বিকেল ৪টা ৪০মিনিটে বাগডোগরায় নেমে কাঞ্চনজঙ্ঘ স্টেডিয়ামে এসেই তিনি ঝড়ের বেগে এসে প্রথমেই উত্তরবঙ্গের নয়জন কৃতি ব্যক্তিদের বঙ্গরত্ন পুরস্কার তুলে দেন।
আরও পড়তে পারেনঃ ব্রিগেড থেকে ফিরেই ভোলবদল, মমতা নয় রাহুলকেই প্রধানমন্ত্রী চাইলেন নেতারা
মুখ্যমন্ত্রী তাদের গলায় শাল পড়িয়ে স্মারক ও ১ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী শক্তিকে আক্রমন করে পাহাড়কে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান। উৎসব মঞ্চে একদিকে যেমন উন্নয়নের ডালি মেলে ধরেন, তেমনই অন্যদিকে আগাগোড়াই এদিন কার্যত কেন্দ্রের বিজেপির বিরুদ্ধে সমালোচনা করে উত্তরবঙ্গে ২০১৯ এর লোকসভা যুদ্ধের ঘোষণা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
আরও পড়তে পারেনঃ বিহারী ভোট ধরতে বাংলায় বাবুলের বিরুদ্ধে বিহারীবাবু
এদিন তিনি শিল্প, সংস্কৃতির উৎসব মঞ্চে রাজনৈতিক প্রসঙ্গ একপ্রকার এড়িয়ে গেলেও বক্তব্য প্রসঙ্গে বারবারই কেন্দ্র সরকারের সমালোচনায় কার্যত মুখরই ছিলেন। তিনি বলেন “কেন্দ্র সরকার শুধু রাজনীতি করে, কোনো কাজ করে না। জাতীয় সড়ক থেকে শুরু করে রাজ্য সড়ক সবই রাজ্যের দান”।
পাশাপাশি পাহাড়বাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “দার্জিলিং নিয়ে অনেক চক্রান্ত হয়েছে। তাই কেন্দ্রের কাছে দরবার করার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনারা শান্তিতে থাকুন, যত সমস্যা আছে আমি সব কিছুর সমাধান করে দেব।” তিনি উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিনবঙ্গকে একসুতোয় গাঁথতে দুই বঙ্গকেই ভাই বোন বলে উল্লেখ করে দুই বঙ্গের শান্তি, সম্প্রীতি, মেলবন্ধনের ওপর জোর দেন।
আরও পড়তে পারেনঃ মার্চেই শুরুতেই ভারতে লোকসভা ভোটের ঘোষণা
তিনি বলেন, “দক্ষিনবঙ্গ যদি আমার ভাই হয় উত্তরবঙ্গ আমার বোন। দুই ভাইবোনকে একই সাথে রাখি বন্ধন করে সুন্দরভাবে যুক্ত করে সংযুক্ত করে কাজ করব।” এদিন উত্তরবঙ্গে আরও দুটি হিন্দি কলেজ করার কথা ঘোষনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি একটি হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয় করার কথা জানান।
আরও পড়তে পারেনঃ বাংলায় ক্ষোভ বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন বাড়াচ্ছে মোদী সরকার
এদিকে জলপাইগুড়ির সার্কিট বেঞ্চ কেন্দ্রের জন্য আটকে আছে বলেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, সার্কিট বেঞ্চের সবটাই রেডি হয়ে আছে শুধু কেন্দ্রের অনুমোদনের জন্য, শুরু হওয়াটা আটকে রয়েছে। “ওরা রাজনীতি করে কাজ করে না” বলে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়তে পারেনঃ ভোটের আগে মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে মোদী সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেট
তিনি এদিন উত্তরবঙ্গের জন্য তার উন্নয়নের ডালির একাধিক প্রকল্পের ও পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়ক, সেতু সমস্তটাই রাজ্য সরকার করছে। ভুটান বাংলাদেশ, নেপালকে রাজ্যের সাথে যুক্ত করা হচ্ছে। বঙ্গরত্ন পুরস্কার দিয়ে তিনি ফের কেন্দ্র সরকারের সমালোচনা করে বলেন, অনেক বড় বড় পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু জেলার কৃতিমানুষরা সে সব থেকে বঞ্চিত হন।
আরও পড়তে পারেনঃ শ্রীজাত হেনস্থা ঘটনায় বাংলার বুদ্ধিজীবিদের মুখোশ খুললেন তসলিমা
সে কারনেই উত্তরবঙ্গ উৎসবে প্রতিটি জেলা থেকে একজন করে মোট আট জেলার নয়জনকে বঙ্গরত্ন সম্মানে ভুষিত করা হল৷ তড়িঘড়ি তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করে পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
প্রশাসন সুত্রে খবর, সোমবার পাহাড়েই তার রাত্রী যাপনের পর আগামী কাল থেকে বেশ কিছু সরকারি বৈঠক ও জিটিএ’র সাথে আলোচনা ও বিভিন্ন জনজাতীদের সাথে বৈঠক রয়েছে তার। এরই মধ্যে ২৩ তারিখে দার্জিলিং-এর ম্যালে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের জন্মজয়ন্তি পালন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
আরও পড়তে পারেনঃ
বাংলায় দুর্গা পুজো বন্ধ করার চক্রান্ত করছে মোদীর বিজেপি, মারাত্মক অভিযোগ মমতার
মমতার বাছাইয়ে কারা হবেন বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী
মোদীর প্রকল্পে আর টাকা দেবেন না মমতা, কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক তলানিতে
একদিনে বহিষ্কৃত দুই তৃণমূল সাংসদ, দিদিকে ছেড়ে মোদীর দলে আর কে কে
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।