২১৫ বছর আগে কেরালার রাজা ছিলেন ত্রিভাঙ্কুর। তার আমলে পুরুষরা গোঁফ রাখতে চাইলেও কর দিতে হতো। আর নারীদের দিতে হত স্তনকর। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হত-‘মূলাক্করম’! নিজের স্তন কেটে এই প্রথা বন্ধ করেছিলেন এক বিপ্লবী মহিলা।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বজুড়ে বাড়ছে নারীদের স্তন ক্যানসার, ভয়াবহ এই রোগের প্রধান ৮টি লক্ষণ
আইনটি ছিল এরকম। ব্রাহ্মণ ব্যতীত হিন্দুধর্মের অন্য কোন নারী তার স্তন আবৃত করে রাখতে পারবে না। নারীদের স্তন রাখতে হবে অনাবৃত, উন্মুক্ত। আবৃত করতে হলে বা স্তন ঢেকে রাখতে চাইলে দিতে হবে স্তনশুল্ক। আবার এই শুল্কের পরিমাণ নির্ভর করবে স্তনের আকারের উপর। যার স্তন যতবড় তার শুল্ক ততো বেশী। এই স্তনশুল্কের মোটা অংশ চলে যেত পদ্মনাভ মন্দিরে। গিনেস বুকের তথ্য অনুযায়ী, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মন্দির!
আরও পড়ুনঃ এই গাছের পাতা খান, পৃথিবীর কোন রোগ আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না
৩৫ বছর বয়সী কৃষ্ণবর্নের অতীব সুন্দরী এক নারীকে প্রায়ই কাজের জন্য বাইরে যেতে হত। তবে সে সবসময় তার স্তন ঢেকে রাখত।
হঠাৎ একদিন সে শুল্ক সংগ্রাহকের নজরে পড়ল। শুল্ক সংগ্রাহকরা তার কাছে স্তনশুল্ক দাবী করল। অস্বীকৃতি জানিয়ে মেয়েটি বললো, “স্তন আমার, তাকে আবৃত রাখব, নাকি অনাবৃত রাখব তা ঠিক করার তুমি কে!
আরও পড়ুনঃ ইন্ডিয়ান আর্মি অফিসারদের কম্যান্ডো ট্রেনিং দিচ্ছেন এক নারী
আমি শুল্ক দেবো না”, জানিয়ে দেয় মেয়েটি। কিন্তু প্রতিদিন রাজার শুল্ক সংগ্রাহকরা তার বাড়িতে এসে তাকে শুল্ক দেওয়ার জন্য চাপ দিতে লাগল। দিনে দিনে বাড়তে থাকল করের বোঝাও।
অবশেষে একদিন কর দিতে রাজী হয় মেয়েটি। শুল্ক সংগ্রাহকদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলে দরজা বন্ধ করে ঘরের ভিতরে চলে যায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলে তার স্তন দুটি! তারপর নিজের স্তনদ্বয়কে কলাপাতার আবরণে মুড়িয়ে শুল্ক সংগ্রাহকের হাতে শুল্কস্বরূপ তুলে দেয়।
আরও পড়ুনঃ টিভি চ্যানেল দেখা নিয়ে ভুল বোঝাচ্ছে কেবল অপারেটররা
তার রক্ত মাখা স্তন! বলে, যে জিনিসের জন্য আমাকে অতিরিক্ত শুল্ক গুনতে হয়, সেই জিনিসই আমি রাখব না। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় শুল্ক সংগ্রাহকসহ পাড়াপ্রতিবেশী সবাই!
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মেয়েটির মৃত্যু হয়। পুরো ভারতে ছড়িয়ে পড়ে এই ঘটনা। কয়েকদিন পর রাজা ত্রিভাঙ্গুর স্তনশুল্ক সহ সকল প্রকার অবৈধ শুল্ক বাতিল করতে বাধ্য হন। নিজের অজান্তেই মেয়েটি ১৮৫৯ সালে ভারতে সংগঠিত কাপড় সংগ্রামের বীজ বপন করে যায়।
আরও পড়ুনঃ চিলেকোঠায় পাওয়া গেল টিপু সুলতানের বন্দুক
নিজেকে কতটা ভালবাসলে এমনটা করা যায় ভাবতে পারেন? এই আত্মপ্রেমী নারীর নাম নাঙেলি। আত্মত্যাগের বিনিময়ে পুরো কেরালার নারীদের আব্রু রক্ষা করেছিল এই বীরাঙ্গনা নাঙেলি!
সেও পারত বাকী সব নারীদের মতো স্তনশুল্ক মেনে নিতে। শুল্ক দেওয়ার মত সক্ষমতাও তার ছিলো। কিন্তু পৃথিবীতে কেউ কেউ বুকে আগুন নিয়ে জন্মায়। কোন অন্যায় তাদের সামনে আসলেও তা তাদের বুকে স্থান পায় না, বুকের আগুনে ভস্মিভূত হয়ে যায় সব অন্যায়গুলো। তাইত নিজের সুখ-শান্তি, চাওয়া-পাওয়া সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে নারীদেরকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছিল বিপ্লবি নাঙেলি!
আরও পড়ুনঃ প্রেমিকাকে নিজের করে পেতে কি কি করতে হয় পুরুষকে
কাহিনী এখানেই শেষ নয়। নাঙেলির শরীর তখন চিতায় দাউদাউ করে জ্বলছে! হঠাৎ একটা লোক দৌড়ে এসে সেই চিতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে! লোকটা নাঙেলির স্বামী। ভারতের ইতিহাসে, স্ত্রীর সঙ্গে সহমরণে যাওয়া কোন পুরুষের এটাই প্রথম এবং শেষ ঘটনা।
ইতিহাস এই প্রেমিক পুরুষের নাম খোদাই করার তাগিদ অনুভব করে নি। কিন্তু প্রতিবাদের যে আগুন নাঙেলি জ্বালিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় নারীদের মনে, তা আজও জ্বলজল করছে।
আরও পড়ুনঃ নির্বাচন কমিশনের নতুন অ্যাপ সি ভিজিল, জনতার অভিযোগে ১০০ মিনিটের মধ্যে ব্যবস্থা
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।