জয় হিন্দ, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের সোনার অক্ষরে লেখা ইতিহাস

616
জয় হিন্দ, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের সোনার অক্ষরে লেখা ইতিহাস/The News বাংলা
জয় হিন্দ, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের সোনার অক্ষরে লেখা ইতিহাস/The News বাংলা

সংবিধান প্রবর্তনের স্মৃতিতে প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি তারিখটি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। ভারতে প্রথমবার সাধারণতন্ত্র দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখে। ওইদিনই ভারত শাসনের জন্য ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইনের পরিবর্তে ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করে। এটি ভারতের একটি জাতীয় দিবস।

আরও পড়ুনঃ ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়

ভারতের স্বাধীনতার লড়াই

১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় গণপরিষদ সংবিধান কার্যকরী হলে ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। দীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের পরে ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পায় ১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ এ । এই স্বাধীনতা আন্দোলনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত, প্রায় সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ অহিংস অসহযোগ আন্দোলন ও আইন অমান্য আন্দোলন। ও দেশের বাইরে থেকে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ বাহিনীর ব্রিটিশ বিরোধী লড়াই।

স্বাধীনতা লাভের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয় যুক্তরাজ্যের সংসদে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাশ হওয়ার মাধ্যমে। এর ফলে ব্রিটিশ ভারত ভেঙে গিয়ে কমনওয়েলথ অফ নেশনস-এর অন্তর্গত অধিরাজ্য হিসেবে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়।

আরও পড়ুনঃ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আগে কোন কোন বাঙালি ভারতরত্ন হয়েছেন

ভারতের স্বাধীনতার পরেও ব্রিটিশদেরই ঔপনিবেশিক ভারত শাসন আইন

১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ এ ভারত স্বাধীন হলেও দেশের প্রধান হিসেবে তখনও বহাল ছিলেন ষষ্ঠ জর্জ এবং লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ছিলেন এর স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্ণর জেনারেল। তখনও দেশে কোনো স্থায়ী সংবিধান ছিল না। ব্রিটিশদেরই ঔপনিবেশিক ভারত শাসন আইনে কিছু রদবদল ঘটিয়েই দেশ শাসনের কাজ চলছিল কংগ্রেসের হাত ধরে।

১৯৪৭ খ্রিঃ ২৮শে আগস্ট একটি স্থায়ী সংবিধান রচনার জন্য একটি ড্রাফটিং কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ভীমরাও রামজি আম্বেডকর। ৪ঠা নভেম্বর ১৯৪৭ তারিখে কমিটি একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে গণপরিষদে জমা দেয়।

আরও পড়ুনঃ কালামের নামে ছাত্রদের তৈরি হালকা উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়ে নজির ভারতের

ভারতীয় সংবিধান গৃহীত

চূড়ান্তভাবে সংবিধান গৃহীত হওয়ার আগে ২ বছর, ১১ মাস, ১৮ দিন ধরে গণপরিষদ এই খসড়া সংবিধান আলোচনার জন্য ১৬৬ বার অধিবেশন ডাকে। এই সমস্ত অধিবেশনে জনসাধারণের প্রবেশের অধিকার ছিল। বহু বিতর্ক ও কিছু সংশোধনের পর ২৪ শে জানুয়ারি ১৯৫০ এ গণপরিষদের ৩০৮ জন সদস্য চূড়ান্ত সংবিধানের হাতে-লেখা দু’টি নথিতে (একটি ইংরেজি ও অপরটি হিন্দি) স্বাক্ষর করেন।

এর দু’দিন পর ২৬ শে জানুয়ারি ১৯৫০ সারা দেশব্যাপী এই সংবিধান কার্যকর হয়। আর ওইদিনটিকেই ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে পালন করা হয়। সাধারণতন্ত্র দিবস উদ্‌যাপনের প্রধান কর্মসূচী পালিত হয় ভারতের রাষ্ট্রপতির সামনে, জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লীতে। এই দিন রাজপথে আড়ম্বরপূর্ণ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয় যা ভারত রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। এবার দেশে ৭০তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপিত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মা দুর্গার সাক্ষাৎ অবতার, পোস্টার কংগ্রেসের

কেন পালিত হয় প্রজাতন্ত্র দিবস?

ভারত ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা পায় এবং তারপরে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতে সংবিধান কার্যকরী হয় এবং দেশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এই কারণেই প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী দিবস পালন করা হয়। পিআইবি (প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো, ভারত সরকার) অনুযায়ী এই দেশ ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০.১৮ মিনিটে গণপ্রজাতন্ত্রী দেশ হিসেবে নিজের ঘোষণা করে।

এর ছ’ মিনিট পরে ১০.২৪-এ রাজেন্দ্র প্রসাদ ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এই দিনই প্রথম রাষ্ট্রপতি ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিনন্দন গ্রহণ করেন। প্রথমবার তাঁকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়েছিল। এখন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে গার্ড অফ অনার প্যারেডে পরিবার ও প্রশাসনিক অফিসারদের নিয়ে থাকেন বিদেশের একজন রাষ্ট্রনেতাও।

আরও পড়ুনঃ জন্মদিনে নেতাজি সুভাষের মৃত্যুদিন নিয়ে ছেলেখেলা রাহুলের কংগ্রেসের

২০১৯ এর প্রজাতন্ত্র দিবসে অনুষ্ঠানে কি হবে?

রাজধানী দিল্লিতে ২৬ জানুয়ারির প্রজাতন্ত্র দিবসে অনুষ্ঠানে এই বছর ৯০ মিনিটের প্যারেড হবে। ৫৮ জন জাতীয় অতিথির উপস্থিতিতে, বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের ২২টি দল প্যারেডে অংশ নেবে। গণপ্রজাতন্ত্রী দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানটিতে ভারতীয় সেনা, আধাসেনা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী অংশগ্রহণ করবে। গণপ্রজাতন্ত্রী দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইন্ডিয়া গেটে অবস্থিত অমর জওয়ান জ্যোতিতে শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।

আরও পড়ুনঃ মোদীর মাস্টারস্ট্রোকে দেশ পেতে পারে প্রথম মহিলা বাঙালি সিবিআই প্রধান

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, শোভাযাত্রায় প্রতিটি রাজ্যের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও উন্নয়নের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত ২৬ জন শিশুও খোলা জিপে বসে প্রদর্শনীতে অংশ নেবে। মহাত্মা গান্ধীর সমাধির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় আধাসেনা বাহিনী সিআইএসএফ-এর দলও এই বার ১১ বছর পরে গণপ্রজাতন্ত্রী দিবসে অংশগ্রহণ করছে।

আরও পড়ুনঃ বাংলায় ক্ষোভ বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন বাড়াচ্ছে মোদী সরকার

এবছর গণতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি কে?

এই বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামফোসা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে যে, রামফোসা, তাঁর স্ত্রী ডাঃ শেপো মোসেপ, ৯জন মন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল, সিনিয়র অফিসার ও ৫০জন সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও যোগ দেবেন অনুষ্ঠানে। নেলসন ম্যান্ডেলার পরে রামফোসাই হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি যিনি গণপ্রজাতন্ত্রী দিবসে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন।

আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন