‘পুলিশ হত্যা মামলা’তেও বাংলার পুলিশের মুখে চুনকালি

874
The News বাংলা
The News বাংলা

The News বাংলা, বীরভূম: এর চেয়ে লজ্জা বোধহয় আর কিছু ছিল না। দীর্ঘ চার বছর পর রায় ঘোষণা। এসআই অমিত চক্রবর্তী খুনের মামলায় প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস পেয়ে গেলেন ১৮ জন অভিযুক্তই। পুলিশের ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষুদ্ধ আদালত। নিজেদের সহকর্মীর হত্যা তদন্তেও লজ্জায় ডুবল বাংলার পুলিশ।

২০১৪ সালের ৩ জুন দুবরাজপুরের আউলিয়া গোপালপুর গ্রামে তৃণমূল-সিপিএম ওই সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে মারাত্মক জখম হন বীরভূমের দুবরাজপুর থানার টাউনবাবু অমিত চক্রবর্তী।

ওই পুলিশ আধিকারিককে ভরতি করা হয় দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে। ৫৫ দিন ধরে কার্যত যমে-মানুষের টানাটানি চলে। ২৮ জুলাই মারা যান এসআই অমিত চক্রবর্তী।

The News বাংলা
The News বাংলা

বীরভূমের দুবরাজপুর থানার এসআই ছিলেন অমিত চক্রবর্তী। একশো দিনের প্রকল্পের কাজকে কেন্দ্র করে সিপিএম ও তৃণমূলের সংঘর্ষ শুরু হয় যশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আউলিয়া গোপালপুর গ্রামে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশবাহিনী নিয়ে গ্রামে যান এসআই অমিত চক্রবর্তী। তখনই তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা মারা হয়।

৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। অভিযুক্ত ছিলেন শাসকদলের যশপুরের অঞ্চল সভাপতি তথা দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আলিম শেখ সহ এলাকার প্রায় ৩০ জন শাসকদলের কর্মী-সমর্থকের। চার্জশিটে নাম ছিল তিনজন সিপিএম কর্মীরও। গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২১ জনকে।

আরও পড়ুনঃ হাসপাতাল চত্বরে রাতভর ডিজে-নাচা-গানা নীরব পুলিশ

বিচার চলাকালীন মারা যান ২ জন অভিযুক্ত। জামিনে ছাড়া পান আরও ১জন। মামলার রায় ঘোষণা হওয়া পর্যন্ত জেলে ছিলেন ১৮ জন। শুক্রবার প্রমাণের অভাবে ১৯ জন অভিযুক্তকেই বেকসুর খালাস দিল সিউড়ি আদালত।

সোমবার, সিউড়ি আদালতের প্রথম অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সোমেশচন্দ্র পালের মন্তব্য, ‘ঘটনার সঠিক তদন্ত হয়নি। দায়সারাভাবে তদন্ত করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও তথ্য-প্রমাণ পেশ করতে পারেননি তদন্তকারীরা।

মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন প্রথম অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সোমেশচন্দ্র পাল। এদিকে রায় ঘোষণার পর আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত পুলিশকর্মীর স্ত্রী পুতুল চক্রবর্তী। নিজে পুলিশ কর্মী হয়েও পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফলতির অভিযোগ তুলেছেন তিনিও।

আরও পড়ুনঃ বাংলার প্রায় দর্শক শূন্য আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

সিউড়ি আদালতে চার বছর ধরে এসআই অমিত চক্রবর্তী খুনের মামলার শুনানি চলছিল। এই মামলাটি প্রথম থেকে ছিল নাটকীয়তায় ভরা। আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন ২০ জন। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনই পুলিশকর্মী।

সাক্ষ্য দিতে গিয়ে পুলিশ আধিকারিকরা কখনও অভিযুক্তদের চিনতে পেরেছেন, আবার কখনও পারেননি। এমনকী, একবার শুনানিতে সাক্ষীদের তালিকায় নিহত এসআই অমিত চক্রবর্তীর নামও উল্লেখ করেছিলেন তদন্তকারী অফিসার!

দুবরাজপুরের SI অমিত চক্রবর্তী হত্যা মামলায় নাটকীয় ভোলবদল হয় বেশ কয়েকবার। একবার আদালতে অভিযুক্তদের চিনতে পারেন নি মামলার প্রধান সাক্ষী দুই পুলিস কর্মী। এজলাসে দাঁড়িয়ে SI আদিত্য চন্দ্র মণ্ডল এবং ASI রণজিৎ বাউরি বলেছিলেন, অভিযুক্তদের তাঁরা চেনেন না।

আরও পড়ুনঃ গরু চুরি করতে এসে দড়ির ফাঁদে আটক বাঘমামা

এমন কি সকলকে অবাক করে, অভিযুক্তদের চিনতে অস্বীকার করেন মামলার অভিযোগকারী দুবরাজপুর থানার তৎকালীন OC ত্রিদিব প্রামাণিক। এমনকি, আলিম-সহ চার্জশিটে থাকা ৩৬ জনকে ‘নিরপরাধ’ বলে দাবি করে তাঁদের নাম ওই মামলা থেকে বাদ দেওয়ার আর্জি আদালতে জানান পাবলিক প্রসিকিউটর রণজিৎবাবু।

তাঁর দাবি ছিল, তিনি নিজে তদন্ত করে দেখে তাঁদের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত না থাকার প্রমাণ পেয়েছেন। ওই আর্জির কথা জানাজানি হতেই প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন রণজিৎবাবু। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, শাসকদলের লোকেদের মদত করতেই পুলিশ হত্যার মতো ঘটনায় জড়িতদের ‘ছাড়’ দেওয়ানোর চেষ্টা করেছেন তিনি।

এই সব কারণেই সব অভিযুক্তই বেকসুর খালাস পেয়ে গেলেন। রাজ্য পুলিশের কাছে সোমবার একটা কালো দিন হিসাবেই লেখা থাকবে। পুলিশের উপর থেকে সাধারণ মানুষের ভরসা একেবারেই উঠে যাবে এই ঘটনার পর।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন