আজ ২৮শে জানুয়ারী। পাঞ্জাব কেশরী লালা লাজপত রায়ের জন্মদিন। না অনেকেই মনে রাখেন নি। জেনে নিন, আরেকবার সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। জন্মদিনে আর একবার স্মরণ করেনি এই মহান বিপ্লবীকে।
১৯২৭ সালে ভারতে নিযুক্ত হয় সাইমন কমিশন। ১৯২৮ সাইমন কমিশনের ভারতে আগমন, দেশ জুড়ে বয়কট আন্দোলন, সাইমন দূর হটো, লালা লাজপত রায়ের (শের-ই পাঞ্জাব) মৃত্যু। সব ঘটনাই আজও ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল।
আরও পড়ুনঃ মাঠ দিল না রাজ্য, মোদীর সভা ও হেলিকপ্টারের জন্য ফসল ত্যাগ শিক্ষকের
১৮৬৫ সনের ২৮ জানুয়ারি পাঞ্জাবে লালা লাজপত রায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম মুনসি রাধা কৃষ্ণণ আজাদ। তিনি কিছুসময় হরিয়াণার রোহতক এবং হিসার শহরে উকালতি করেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের অন্যতম নেতা ছিলেন।
বাল গঙ্গাধর তিলক ও বিপিন চন্দ্র পালের সঙ্গে তিনি ‘লাল-বাল-পাল’ নামেই বিখ্যাত ছিলেন। এই তিন নেতাই ভারতে সর্বপ্রথম, ব্রিটিশ থেকে ভারতের স্বাধীনতার দাবী করেন। পরবর্তি সময়ে সমগ্র ভারতবাসী এই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। তিনি স্বামী দয়ানন্দ সরসত্বীর সহিত আর্য সমাজকে পাঞ্জাবে জনপ্রিয় করে তোলেন। দুর্ভিক্ষের সময় তিনি অনেক স্থানে শিবির স্থাপন করে লোকের সেবা করেছেন।
আরও পড়ুনঃ জওহরলাল নেহেরুর গলায় মালা দিয়ে ৬০ বছর পরেও একঘরে ‘নেহেরুর বউ’
লালা লাজপত রায় একজন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাঁকে পাঞ্জাব কেশরী নামেও ডাকা হয়। তিনি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ও লক্ষী বিমা কম্পানী স্থাপন করেছিলেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের চরমপন্থী দলের সৈনিক ছিলেন। সেই বিখ্যাত লাল-বাল-পালের অন্যতম নেতা।
আরও পড়ুনঃ সীমান্তের কাঁটাতার অগ্রাহ্য করে একদিনের জন্য এক হল ভারত বাংলাদেশ
লাহোরে ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত মিছিলে অংশগ্রহন করেন তিনি। সেখানে তিনি পুলিশের লাঠি চার্জে গুরুতর আহত হন। ১৯২৮ সনের ৩০ অক্টোবর সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত মিছিলে পুলিশের লাঠি চার্জে গুরুতরভাবে আহত হয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমার শরীরে করা ব্রিটিশের প্রহার, ব্রিটিশের ধংসের কারণ হয়ে উঠবে”।
১৯২৮ সালের ১৭ নভেম্বর তারিখে তাঁর মৃত্যু হয়। লালার মৃত্যুর ফলে সমগ্র দেশ উত্তেজিত হয়ে উঠে। চন্দ্রশেখর আজাদ, ভগত সিং, রাজগুরু ও সুখদেব ও অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীরা লালাজির মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা নেয়।
ঠিক এক মাস পর ১৯২৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর তারিখে এই স্বাধীনতা সংগ্রামীরা লালার মৃত্যুর প্রতিশোধ স্বরুপ ব্রটিশ পুলিশ অফিসার স্যান্ডার্সকে গুলি করে হত্যা করে। স্যান্ডার্সকে হত্যা করার জন্য ও বোমা মারার জন্য রাজগুরু, সুখদেব ও ভগত সিংহকে ব্রিটিশ সরকার ফাঁসীর আদেশ দেয়।
আরও পড়ুনঃ জয় হিন্দ, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের সোনার অক্ষরে লেখা ইতিহাস
লালা লাজপত রায় হিন্দী ভাষায় শিবাজী ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনি রচনা করেন। তিনি ভারতে ও বিশেষ করে পাঞ্জাবেও হিন্দী ভাষা প্রসারের ক্ষেত্রেও সহযোগীতা করেছিলেন।
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার যে সংস্কার আইন প্রবর্তন করেছিলেন তা ব্যর্থ হয়। ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের দাবিদাওয়া ও অসন্তোষের মূল কারণগুলি অনুসন্ধানের জন্য একটি কমিশন গঠন করেন। ইংল্যান্ডের প্রখ্যাত সংবিধান বিশেষজ্ঞ স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে এই কমিশন গঠিত হয়েছিল বলে এটি সাইমন কমিশন নামে পরিচিত। এই কমিশনের সাতজন সদস্যই শ্বেতাঙ্গ এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন।
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ই ফেব্রুয়ারি কমিশনের সদস্যগণ দেশব্যাপী সমীক্ষা চালাবার জন্য ভারতে আসেন। কমিশনে কোনো ভারতীয় প্রতিনিধি না থাকায় ভারতীয়রা ক্ষুব্ধ হন। এরূপ কমিশন গঠন জাতীয় মান মর্যাদার পরিপন্থী, এই বলে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ সহ ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই কমিশন বর্জন করেন। বিক্ষোভ শুরু হয় গোটা দেশ জুড়ে।
আরও পড়ুনঃ কালামের নামে ছাত্রদের তৈরি হালকা উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়ে নজির ভারতের
পাঞ্জাবে লালা লাজপত রায়, উত্তরপ্রদেশে জওহরলাল নেহরু, গোবিন্দবল্লভ পন্থ, সাইমন কমিশন বিরোধী বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে নিগৃহীত হন। লাহোরে সাইমন কমিশন বিরোধী এক মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে লালা লাজপত রায় পুলিশের লাঠির আঘাতে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এই ঘটনার কয়েকদিন পর ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ১৭ নভেম্বর লালা লাজপত রায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুনঃ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মা দুর্গার সাক্ষাৎ অবতার, পোস্টার কংগ্রেসের
সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করে সবাই। ভারতের ইতিহাসে এ এক বিরল দৃষ্টান্ত। তাছাড়া প্রথম শ্রেণীর নেতাদের নিগ্রহ ও আত্মত্যাগ, সংবিধান রচনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ প্রভৃতি এই আন্দোলনকে এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে উন্নীত করেছিল যা পরবর্তীকালে জাতীয় আন্দোলনকে অনেক বেশি গতিময় করে তোলে। আর নিজের জীবন দিয়ে সেই ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন পাঞ্জাব কেশরী লালা লাজপত রায়। জন্মদিনে এই মহান বিপ্লবীকে শ্রদ্ধা।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।