দেরদুন: গর্ভবতী হয়ে না পড়লে সামনে আসত না দেরদুনে স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা। চলতি বছরের আগস্ট মাসে গণধর্ষণের শিকার হয় দেরদুনের একটি স্কুলের ছাত্রী। সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখে ঠিক সময়ে মাসিক না হওয়ার কারণে ডাক্তার দেখালে, ধরা পরে ওই স্কুল ছাত্রী গর্ভবতী। তখনই জানা যায় আসল ঘটনা।
আগস্টের ১৪ তারিখে দেরদুনের স্কুলে ৪ জন সহপাঠি ধর্ষণ করে এক স্কুলছাত্রীকে। স্কুল ক্যাম্পাসের ভিতরে একটি ঘরে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ৪ জন সহপাঠি জোর করে তুলে স্কুলের একটি ঘরে নিয়ে যায় ওই মেয়েটিকে। তারপর এক এক করে ধর্ষণ করে তাকে। ধর্ষণের পর ভয়ও দেখান হয় মেয়েটিকে। ধর্ষণের ঘটনা কাউকে বললে, সবাইকে ছবি দেখিয়ে মেয়েটিকে বদনাম করে দেবার হুমকি দেওয়া হয়।
কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে মাসিক শুরু না হওয়ায় বিপদ বুঝে মেয়েটি মুখ খোলে। তারপর সব ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। মেয়েটি জানায় তার বন্ধুদের। শুধু তাই নয়, মেয়েটি জানায়, স্কুল এডমিনিষ্ট্রটিভ অফিসারের স্ত্রী ও হস্টেলের কেয়ারটেকরকে। সব ঘটনা জানান হয় স্কুল এডমিনিষ্ট্রটিভ অফিসারকেও। এই সময়ই ঘটে সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা। ওই তিন আধিকারিকই মেয়েটিকে গর্ভবতী হওয়া থেকে বাঁচতে একটি লোকাল ওষুধ খেতে বলেন।
তারপর পুরো ঘটনা জানানো হয় স্কুলের প্রিন্সিপালকে। যদিও রেপুটেশন নষ্ট হবার ভয়ে পুলিশের কাছে না যাওয়ার সিদ্ধান্তই নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। সমস্ত ঘটনা চেপে যান তারা। দেরাদুন চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন কবিতা শর্মা খবর পেয়ে সমস্ত ঘটনার তদন্ত করে আসল সত্য সবার সামনে আনেন। তারপরেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়।
POCSO কোর্টে স্কুলের পাঁচ জন এডমিনিষ্ট্রটিভ স্টাফ, ডিরেক্টর, প্রিন্সিপাল, এডমিনিষ্ট্রটিভ অফিসার আর তার স্ত্রী আর হস্টেল কেয়ারটেকারকে হাজির করানো হয় পুলিশের তরফ থেকে। এদের সঙ্গে অভিযুক্ত একজন সাবালককেও হাজির করানো হয়। POCSO কোর্টের বিচারপতি তাদের ছয়জনকেই ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। তিন নাবালাককে ধর্ষণের দায়ে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পাঠানো হয়েছে।
স্কুলের ডিরেক্টৰ ধর্ষিতা মেয়েটিকে ডেকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেবার ভয়ও দেখান। এমন তথ্যই জানিয়েছেন রাজ্যের চাইল্ড রাইটস প্রোটেকশন কমিশনের চেয়ারপারসন ঊষা নেগী। মেয়েটিকে এরপর একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রেগনেন্সি টেস্টের জন্য। দরকার পড়লে গর্ভপাত করানোর জন্য।
পরে মেয়েটির ছোট বোন যে নিজেও ওই স্কুলে পড়ে, বাড়িতে ফোন করে সব জানায়। পুলিশ তদন্তে প্রমাণিত হয় স্কুলের এডমিনিষ্ট্রটিভ অফিসার ও তার স্ত্রী মেয়েটির বাবা মা পরিচয় দিয়ে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যায়। একজন সাংবাদিকের কাছ থেকে খবর পেয়ে দেরদুনের এস এস পি নিবেদিতা কুক্রেতী স্কুল ক্যাম্পাসে তদন্তের জন্য যান। তারপরেই গণধর্ষণ এর ঘটনা পুরোপুরি সামনে আসে।
সাহাপুর পুলিশ, ৫ জন স্কুল আধিকারিক ও অভিযুক্ত ৪ ছাত্রের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ডি (গণধর্ষণ), ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ২০১ (প্রমান লোপাট) এবং পকসো আইনে মামলা দায়ের করেছে। জঘন্য ঘটনার জন্য স্কুলটির সমস্ত অনুমতি বাতিল করেছে সরকার। স্কুলটির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই জানান হয়েছে।