মোদীর হেলিকপ্টারে তল্লাশি, সাসপেনশন তুলে নিয়ে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ

508
হেলিকপ্টারে তল্লাশি চালানোর জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সাসপেন্ড হন মহম্মদ মহসিন/The News বাংলা
হেলিকপ্টারে তল্লাশি চালানোর জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সাসপেন্ড হন মহম্মদ মহসিন/The News বাংলা

নরেন্দ্র মোদীর হেলিকপ্টারে তল্লাশি চালিয়ে ভুল করিনি, দাবি করলেন মহম্মদ মহসিন। কর্ণাটক ক্যাডারের ১৯৯৬ ব্যাচের আইএএস মহম্মদ মহসিন কিছুদিন আগে খবরের শিরোণামে আসেন, যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হেলিকপ্টারে তল্লাশি চালানোর জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সাসপেন্ড হন।

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ওড়িশার সম্বলপুর লোকসভা কেন্দ্রে সাধারণ পর্যবেক্ষক হিসাবে মহম্মদ মহসিনকে নিয়োগ করেছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ১৬ই এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন তাঁর পরের দিন নির্ধারিত র‍্যালির জন্য সম্বলপুর লোকসভা কেন্দ্রে যান তখন, অভিযোগ ওঠে আদর্শ নির্বাচন বিধি মানা হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য মোদীর কপ্টারে তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দেন মহসিন।

এরপরই স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপের মধ্যে থাকা কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ধরণের তল্লাশি চালানো বেআইনি, এই প্রশ্ন তুলে জাতীয় নির্বাচন কমিশন মহসিনকে সাসপেন্ড করে। তবে আপাতত কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন তিনি। সাসপেনশন তুলে শুধুমাত্র বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কর্ণাটক সরকারকে।

এই ঘটনার প্রায় দেড় মাস পরে অবশেষে মুখ খুললেন মহম্মদ মহসিন। সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁর বক্তব্য রাখার সময় তিনি জানান যে তিনি কোনও বেআইনি কাজ করেন নি। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে কি প্রকৃত অভিযোগ সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চাইলেও কমিশন তার কোনও উত্তর দেয় নি। এই পরিস্থিতিতে তিনি মূলত অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়েই তাঁর লড়াই লড়ছেন।

তাঁর সাসপেনশনের বিরুদ্ধে মহসিন সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালে (ক্যাট) মামলা করেন। সেই মামলার শুনানিতে ক্যাট জানায় নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন এসপিজি সুরক্ষা পান এরকম কোনও ব্যক্তিকে বেশ কিছু বিশেষ সুবিধা দেওয়া যেতেই পারে, কিন্তু তাই বলে তাঁরা যেকোনও সুবিধা পাওয়ার অধিকারী নন।

ক্যাটের এই মনোভাব জানার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নির্বাচন কমিশন, গত বৃহস্পতিবার, মহসিনের ওপর থেকে সাসপেনশন আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়, যদিও তার সঙ্গে কমিশন কর্ণাটক সরকারের কাছে সুপারিশ করে মহসিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করার জন্য।

সংবাদ মাধ্যমের কাছে মহসিন দাবি করেন যে ঘটনার সময় তিনি হেলিপ্যাডের কাছেই ছিলেন না। তাই সেখানে কি ঘটেছে সে বিষয়ে তাঁর কোনও ধারণাও নেই। যদিও সেদিনের ঘটনাকে তিনি অস্বীকার করতেও পারেন নি। ঘটনার দিনের বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি জানান যে তাঁর কাজ ছিল ভিডিও সারভেইলেন্স টিম কেমন কাজ করছে তার তত্ত্বাবধান করা।

সেজন্যই তিনি সেইদিন পাঁচ মিনিটের জন্য হেলিপ্যাড পরিদর্শনে গিয়েছিলেন এবং সেখানকার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ছিলেন। তারপর তিনি রিপোর্ট পাঠানোর পরেই আচমকা রাত সাড়ে এগারোটার সময় তাঁকে সাসপেনশনের নোটিস পাঠায় কমিশন।

এর বিরুদ্ধে মহসিন ক্যাটে মামলা করেন, যার ভিত্তিতে শুনানির পরে ক্যাট কমিশন এবং মহসিন দু পক্ষকেই তিন সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপরেই কমিশন মহসিনের ওপর জারি করা সাসপেনশন তুলে নেয়।

সংবাদ মাধ্যমের কাছে মহসিনের বক্তব্য তিনি ক্যাটের থেকে স্থগিতাদেশ পেলেও সমগ্র বিষয়টি বিচারাধীন। পরবর্তী পদক্ষপে নিয়ে তিনি তাঁর আইনজীবির সঙ্গে পরামর্শ করছেন বলে তিনি জানান। তবে তাঁর আশা যে তিনি তাঁর বিবেকের কাছে তাঁর কাজ সম্পর্কে অত্যন্ত পরিষ্কার এবং তিনি আইনী মাধ্যমে সুবিচার পাবেন।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন