দাঁড়িয়েছিলেন প্রথম পোস্টে। ফুটবল সম্রাট পেলের হেডটা ছিল একেবারে সেকেন্ড পোস্টের নিচের দিকে কোনায়। হেড করেই পেলে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন গোল বলে। গোটা মাঠের দর্শকও ভেবেছিলেন নিশ্চিত গোল। কিন্তু এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় পোস্টে থাকা গোলকিপার বাজপাখির মত প্রথম পোস্টে ঝাঁপিয়ে, পেলের হেড করা নিশ্চিত গোলের বল এক হাতে তুলে দিলেন বারের উপর দিয়ে। গোটা পৃথিবী একটাই শব্দ বলেছিল, ‘অবিশ্বাস্য’। সেই অবিশ্বাস্য গোল বাঁচানোর নায়ক মঙ্গলবার চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়েই।
এযেন ফুটবলের নক্ষত্রপতন। প্রয়াত ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি গোলকিপার গর্ডন ব্যাঙ্কস। ফিফা-র ছবারের বর্ষসেরা গোলকিপার ৮১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। ব্যাঙ্কসের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ফুটবল মহলে। নিজ বাড়িতেই রাতে ঘুমের মধ্যে মারা যান ৮১ বছর বয়সী ব্যাঙ্কস। তার পরিবার নিশ্চিত করেছে এই কিংবদন্তির মৃত্যুর বিষয়টি।
১৯৬৬ বিশ্বকাপজয়ী গোলকিপার স্মরণীয় হয়ে আছেন ১৯৭০ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে পেলের শট অবিশ্বাস্যভাবে বাঁচানোর জন্য। ফুটবলের আশ্চর্য সেভ ধরা হয় সেটিকে। পেশাদার ফুটবলে ১৯৫৮ সালে অভিষেক হয় ব্যাঙ্কসের। জাতীয় দলে ঢোকেন ১৯৬৩ সালে। ঘরের মাঠে ৬৬ বিশ্বকাপে তার কাঁধেই ছিল গোলপোস্ট সামলানোর ভার। প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে নেমেই জিতে নিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়নশিপের কাপ।
ব্যাঙ্কস তাঁর ক্লাব ক্যারিয়ারের বেশি সময় স্টোক সিটিতে কাটিয়েছেন। শুরুর দিকে লেস্টারসিটিতে খেলেছিলেন তিনি। ১৯৬৩ সালে ইংল্যান্ড দলে অভিষেক হয় তার। দেশের হয়ে ৭৩ ম্যাচ খেলা ব্যাঙ্কস ছয়বার ফিফার বর্ষসেরা গোলরক্ষক হন। আচমকা ১৯৭২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ডান চোখ হারালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে বিদায় দিতে হয়। দুবার ক্যান্সারও জয় করেছেন তিনি। কিন্তু মৃত্যুর কাছে শেষ অবধি হার মানতেই হলো তাঁকে।
ব্রাজিল ম্যাচে গোল পোস্টের একদিক থেকে অন্যদিকে উড়ে গিয়ে পেলের ‘নিশ্চিত গোল’ বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। এরপরই রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান ইংল্যান্ডের গোলকিপার। বলা ভাল, কিংবদন্তী হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পরপর ছয়বার ফিফার বিচার বর্ষসেরা গোলকিপার নির্বাচিত হন ব্যাঙ্কস। অসাধারণ সব সেভ করে ম্যাচে নির্ভাবনায় রাখতেন বাকী সতীর্থদের। তারই ধারাবাহিকতায় ৬৬তে ওয়েম্বলির বিশ্বকাপ ফাইনালে তৎকালিন পশ্চিম জার্মানিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে নিজেদের একমাত্র বিশ্বকাপ শিরোপাটি জেতে ইংরেজরা।
ব্যাঙ্কসের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ইংলিশ ফুটবল সহ বিশ্বের ফুটবল মহলে। শোক প্রকাশ করেছে ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও ইংল্যান্ড জাতীয় দল। তার বিশ্বকাপজয়ী সতীর্থ স্যার ববি চার্লটন শোক বার্তায় জানান, “গর্ডন ছিলেন একজন অসাধারণ ফুটবলার। ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরাদের একজন তো অবশ্যই। তাকে আমার সতীর্থ হিসেবে পেয়েছিলাম ভাবতেই গর্ব হয়”।
ফুটবল বিশ্বে সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলকিপার হিসেবেই গণ্য করা হয় ব্যাঙ্কসকে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ফুটবল অ্যান্ড হিস্ট্রি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্সের বিচারে ব্যাঙ্কসই বিংশ শতকের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ গোলকিপার। তাঁর আগে শুধু রাশিয়ার দুর্ভেদ্য প্রাচীর লেভ ইয়াসিন। তবে অনেকে ব্যাঙ্কসকেও এগিয়ে রাখেন তাঁর কিছু অবিশ্বাস্য গোল বাঁচানোর জন্য।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।