The News বাংলা, শিলিগুড়িঃ এখনও অধরা শচীন! হাতি, খাঁচা, ক্যামেরা, ড্রোন, তল্লাশি, নজরদারি, সব ব্যর্থ, উধাও চিতা বাঘ শচীন। আদৌ সে সাফারি পার্কে আছে তো? পিঠ বাঁচাতেই কি লোক দেখানো খোঁজাখুজি? পার্কে শচীনের অস্তিত্ব নিয়ে এবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এদিকে চিতা পগারপার শোনার পর, আতঙ্কে সূর্য ডুবলেই শুনশান হয়ে যাচ্ছে গোটা এলাকা।
আরও পড়ুন: বাঘ খুঁজতে ব্যর্থ হাতি, উত্তরের জঙ্গল সাফারিতে উড়বে ড্রোন
তিন দিন অতিক্রম হয়ে গেছে, এখনও নজরবন্দি পর্যন্ত হল না ‘মহারাজ’ শচীন। মঙ্গলবার ভোর থেকেই উধাও চিতা বাঘ শচীন। বৃহস্পতিবারও তার সন্ধান পাওয়া যায় নি। তিনদিন ধরে, সাফারি পার্কের তৃণভোজি অঞ্চলের বেশ কিছু জায়গায় চিতার উপস্থিতি উপলব্ধি করেছেন বলে জানিয়েছেন, পার্কে কর্মরত বনকর্মী ও আধিকারিকরা। তবে সেটাও যে কতটা সত্যি, তিন দিন পর সেই প্রশ্নও উঠে গেল।
আরও পড়ুন: টানা ২ দিন ধরে সন্ধান নেই ‘শচীনের’, বিপদ চিন্তায় প্রশাসন
আরও পড়ুন: নতুন বছরের প্রথম দিনেই চিতা বাঘ দেখতে গিয়ে বড় বিপদের সামনে
‘চিতা সাফারি পার্কেই আছে’, এই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই এখনও পর্যন্ত সবকিছু চলছে। আর সেই কারনেই বৃহস্পতিবার থেকে তল্লাশির ধরণধারণ কিছুটা পরিবর্তন করে জোর দেওয়া হয়েছে শচীনকে খাঁচা বন্দি করতে। সেইমত আরও দুই কুনকি হাতি দিয়ে তল্লাশির পাশাপাশি, এদিন সকাল হতেই ব্যবহার করা হল বিশেষ একধরনের ড্রোন।
আরও পড়ুনঃ EXCLUSIVE: নতুন বছরে সুখবর, রাজ্য সরকারি কর্মীরা পাচ্ছেন বকেয়া ডিএ
যে সব অঞ্চলে হাতি কিংবা মানুষের প্রবেশে বাধা রয়েছে, সেইসব অঞ্চলে ড্রোন উড়িয়ে চিতা বাঘটির খোঁজ জারি রাখতে চায় পার্ক কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে প্রায় তিন দিন ধরে জঙ্গলে অভুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে হিংস্র প্রকৃতির বাঘ, কিন্তু কোন একটিও তৃণভোজি প্রানীরই নিধন হয় নি এখনও পর্যন্ত। তাহলে কি সাফারি পার্কের সীমানা ছাড়িয়েছে শচীন?
আরও পড়ুনঃ বাংলায় আবার নক্ষত্র পতন, চলে গেলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক
আদৌ সে পার্কের মধ্যে আছে? তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। হাতি, খাঁচা, ক্যামেরা, ড্রোন, তল্লাশি, নজরদারি, সব ব্যর্থ। ৩ দিনেও লবডঙ্ক্যা। পাশাপাশি সাধারণ পর্যটকদেরও প্রবেশ এবং পার্কে ঘুরে বেড়াতে, একই নিয়ম বহাল রাখছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: ‘রাম’কে ছেড়ে আসা লক্ষণকে ‘হাতে’ নিয়ে বাংলায় তুলকালাম
চিতা শচীনকে ধরার জন্য গত দুদিন ধরে কুনকি হাতি দিয়ে তল্লাশি, ছটি স্কয়্যাড করে তল্লাশি, ১৫টি খাঁচা পাতা, সাফারি জুড়ে প্রায় সাতটি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো, ইত্যাদি সব চেষ্টাই বিফল। বৃহস্পতিবার পার্কের ঘন বনাঞ্চলে করা হল ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তল্লাশিও। বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলল ড্রোন দিয়ে চিতা নজরবন্দী করার প্রয়াস। পাশাপাশি বন্দুক হাতে গাড়ি নিয়েও নজরদারি চালালেন বনকর্মীরা। রেজাল্ট সেই শূন্যই।
আরও পড়ুন: কংগ্রেস ছেড়ে মমতার ‘মহানায়িকা’ এবার মোদীর বক্স অফিসে
বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও রাজ্য জু অথরিটির মেম্বার সেক্রেটারিয়েট বিনোদ কুমার যাদব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর সহ অন্যান্য আধিকারিক ও বনকর্মীদের নিয়ে প্রায় গোটা এলাকা ঘুরে দেখেন। দিনভর তল্লাশির পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক প্রেস বিবৃতি দিয়ে পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায় যে, ‘আজও চিতাবাঘ ধরা যায় নি। দেখাই যায় নি চিতাটিকে’।
আরও পড়ুনঃ ছেলেকে টিউশনে দিয়ে ফেরার পথে গৃহবধূকে গণধর্ষণ
সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছেন যে, এখনও তাঁরা চিতাবাঘটির অবস্থান সনাক্ত করতে পারেন নি। কিন্তু সিঙ্গিঝোড়া বরাবর তিনটি স্থানে তার পায়ের চিহ্ন দেখা গিয়েছে। ঘন বন এলাকা স্ক্যান করার জন্য দুটি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল। সাতটি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে, কিন্তু চিতাবাঘের কোন গতিবিধি লক্ষ করা বা রেকর্ড করা যায় নি।
১০০ জনেরও বেশি কর্মী এই তল্লাশি অভিযানে বিভিন্ন জোন ভাগ করে বিভিন্ন এলাকায় প্যাট্রোলিং-এ নিযুক্ত করা হয়েছে। আরও ১০টি খাঁচা পায়ের চিহ্ন বরাবর রাখা হয়ছে। চারটি হাতি ঘন বন তল্লাশি করতে থাকবে। যতদিন না তাকে পাওয়া যাচ্ছে, ততদিন তল্লাশি অভিযান চলবে। তবে প্লান-বি এর এই তল্লাশি অভিযানে কতটা সাফল্য পেতে পারে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ, তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মহল।
আরও পড়ুন: শীতের বাংলায় বৃষ্টি আনতে আন্দামান থেকে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘পাবুক’
তাদের প্রশ্ন এত হিংস্র একটি বন্য প্রানী তিন দিন ধরে উধাও। একপ্রকার অভুক্তই বলা যেতে পারে। এদিকে সাফারি পার্কের দাবী চিতা বাঘটি তৃণভোজি বনাঞ্চলেই বিচরন করছে। তার ওপর একটিও তৃণভোজি প্রানী কিংবা অন্য কোন মৃত প্রানীর দেহাবশেষ মেলেনি পার্কের কোন অঞ্চলেই।
আরও পড়ুন: নারী ঢোকায় ‘অপিবত্র’ শবরীমালা, ‘শুদ্ধ’ করার জন্য বন্ধ মন্দির
তাহলে কি আদতে চিতা বাঘটি সাফারি পার্কেই নেই? শুধুমাত্র চাকরি বাঁচাতেই এত খোঁজাখুজি করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ? বাস্তবে হয়ত সাফারি পার্ক ছেড়ে মহানন্দা ওয়াল্ড লাইফ হয়ে তরাইয়ের বনাঞ্চলীয় মালভুমির পথে বহুদূর পাড়ি দিয়েছে শচীন, এমটিই ধারণা করছে বিভিন্ন মহল। এদিকে চিতা পগারপার শোনার পর আতঙ্কে সূর্য ডুবলেই শুনশান এলাকা। অন্ধকারে কেউ বেরচ্ছেন না বাড়ি ছেড়ে।
আরও পড়ুনঃ দেশপ্রেম বাড়াতে স্কুলের রোল কলে এবার ‘জয় হিন্দ’ ও ‘জয় ভারত’
তবুও সেদিকে আপাতত কোন কর্ণপাত না করেই চিতাকে খুঁজে পেতে কোন রকম ফাঁক-ফোঁকরই রাখতে চাইছে না পার্ক কর্তৃপক্ষ। এখন দেখার আর কতদিনই আপন মেজাজে, নিজের খেয়ালে মুক্তমনা শচীন থাকবে অবাধ বিচরণে। আর যদি আশঙ্কা সত্যি করে সাফারি পার্কের বাইরে চলে যায় চিতাটি, তাহলে কি আদৌ তার কোন সন্ধান পাওয়া যাবে? প্রশ্ন কিন্তু উঠে গেছে।