The News বাংলা, কলকাতা, বিশেষ রিপোর্টঃ ঠিক যেন বন্দী দশা। একবার বাসে উঠে বসে পড়লেই বাইরের কিছুই আর আপনার চোখে পড়বে না। বিজ্ঞাপনে ঢেকেছে গোটা বাস। কলকাতার এসি বাসে এখন চরম সমস্যায় মানুষ। বাইরে থেকে ভিতরে আর ভিতর থেকে বাইরে কিছুই দেখা না যাওয়ায় দিল্লীর ‘নির্ভয়া ধর্ষণ’ কাণ্ডের মত ঘটনাও যে কোনদিন ঘটতে পারে কলকাতার এসি বাসে।
আরও পড়ুনঃ EXCLUSIVE: ৫ রাজ্যে হারের প্রভাব, মোদীর বাংলা সফর বাতিল
আদালত আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই কলকাতার এসি বাসে বিজ্ঞাপন করছে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলি। এর ফলে যাত্রীদের দারুন অসুবিধার পাশাপাশি রয়েছে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিও। দিল্লীর ‘নির্ভয়া ধর্ষণ’ কান্ড এর পর এই নিয়ে সতর্ক করে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। তাতেও টনক নড়ে নি পরিবহন দফতরের। কলকাতার সরকারি এসি বাসে চরম নিরাপত্তাহীনতার ছবি।
আগে ছিল ট্রান্সপারেন্ট ভিনাইল বিজ্ঞাপন। তাতে খরচা বেশি বলে বিজ্ঞাপনদাতারা ফিরে গেছেন সেই পুরোনো ভিনাইল বিজ্ঞাপনেই। বাদ দেওয়া হয়েছে ‘ট্রান্সপারেন্ট’ বিষয়টি। এসি ১ ও এসি ৬ এ এই ধরণের বাসঢাকা বিজ্ঞাপনে তিতিবিরক্ত বাসযাত্রীরা।
আরও পড়ুনঃ একদিকে মোদীর সমালোচনা অন্যদিকে অনুসরণ, মমতার ‘নিজশ্রী’
শুধু ভিনাইল বিজ্ঞাপনে খরচা পরে প্রায় ২২ থেকে ২৫ টাকা প্রতি স্কোয়ার ফুটে। আর ট্রান্সপারেন্ট ভিনাইল বিজ্ঞাপনে প্রতি স্কোয়ার ফুটে খরচা পরে ৬০ থেকে ৬২ টাকা। প্রায় ৩ গুন তফাত। আর তাতেই ট্রান্সপারেন্ট বিজ্ঞাপন না দিয়ে সাধারণ বিজ্ঞাপন দিয়েই কাজ সারছেন বিজ্ঞাপনদাতারা।
আর এর ফলে বেজায় সমস্যায় বাস যাত্রীরা। বাসে একবার ঢুকে পড়লেই বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাবেন আপনি। AC1 ও AC6 সহ অন্যান্য এসি বাসগুলোতেও এখন একটি পান মশলা সংস্থার বিজ্ঞাপন। আর এই বিজ্ঞাপন নিয়েই প্রতিদিন ভুগছেন সাধারণ মানুষ। রাস্তা বা বাইরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে বাসের শেষের দিকে বসলে কিছুই দেখা যায় না। কোন স্টপ আসছে বা বাস কোথায় এল কিছুই বুঝতে পারছেন না তারা।
বাস কোথায় এল বুঝতে না পারায় বারবার বাসের কন্ডাক্টারকে জিজ্ঞাসা করতে হচ্ছে। কন্ডাক্টর টিকিট কাটায় ব্যস্ত থাকায় বলতে পারছে না কোথায় এল বাস। আর কন্ডাক্টর নিজেও দেখতে পারছে না , তো যাত্রীদের বলবে কি? অভিযোগ এমনটাই। প্রায়ই নির্দিষ্ট স্টপ পেরিয়ে যাওয়ার পরই মানুষ বুঝতে পারছেন।
আরও পড়ুনঃ সাবধান এবার ফেসবুকে বোমাতঙ্ক
ট্রান্সপারেন্ট না হওয়ায় বাইরে থেকেও বাসের ভিতরে কি হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না। যে কোন দিন ঘটতেই পারে ঠিক দিল্লীর মতোই ধর্ষণ কান্ড। দিল্লীর ঘটনার পর বাসের ভিতর যাতে দৃশ্যমান হয় তার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
কিন্তু মানুষের নিরাপত্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলছে রাজ্য সরকারের এসি বাস। এসি ১ ও এসি ৬ এর যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছে পরিবহন দফতরও। তবে তারা এই নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। কিন্তু আদালতের পরিষ্কার নির্দেশ আছে। বাসে মানুষের দৃষ্টি আটকানো যাবে না। ভিসিবিলিটি থাকতেই হবে কড়া নির্দেশ আদালতের। বাসের গায়ে ট্রান্সপারেন্ট টু ওয়ে বিজ্ঞাপনের কথাও বলা হয়েছে আদালতের নির্দেশে। আর এর কোনটাই মানা হচ্ছে না AC 1 বা AC 6 বাসে।
বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে ও পরিবহন সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করা হয়েছিল। যদিও তাঁরা কেউই ফোন ধরেন নি। এদের দুজনকেই এসি বাসের বাইরের ও ভিতরের ছবি দিয়ে whatsapp করা হয়েছে The News বাংলার তরফ থেকে। তবে, এখনও কোন উত্তর আসে নি।
আরও পড়ুনঃ ৫ টি প্রধান কারনে ৫ রাজ্যে হার মোদীর বিজেপির
পরিবহণ দফতরের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, এসি বাসের বিজ্ঞাপন টেন্ডার যারা পেয়েছে তারাই ঠিক করে কি বিজ্ঞাপন লাগান হবে, কিভাবে বিজ্ঞাপন লাগান হবে। তবে সেটা নিয়ম মেনে হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব অবশ্যই পরিবহন দফতরের। আর পরিবহন দফতর যে কতটা উদাসীন তা এসি বাসে উঠলেই প্রমান হয়ে যাবে।