নিজস্ব সংবাদদাতা : ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের পর তিতলির প্রধান অভিমুখ এবার বাংলা। হঠাৎই গতিপথ পরিবর্তন করে বাংলা উপকূলের দিকেই আসছে তিতলি। ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি হয়েছে দিঘা, শংকরপুর, মন্দারমনি সহ বাংলা উপকূলে। হালকা থেকে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়।
প্রাথমিকভাবে দেখা গিয়েছিল, ঘূর্ণিঝড়ের প্রধান অভিমুখ রয়েছে উত্তর-পশ্চিম দিকে। উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে অগ্রসর হয়ে ঘূর্ণিঝড় তিতলি অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়তে চলেছে বলে জানিয়েছিলেন আবহাওয়াবিদরা।
কিন্তু, গত কয়েক ঘণ্টায় উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে তিতলি। যার ফলেই আবহাওয়াবিদদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। মনে করা হচ্ছে, এভাবে অগ্রসর হলে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলেই আছড়ে পড়তে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। সেক্ষেত্রে অপেক্ষা করে রয়েছে প্রবল দুর্যোগ। তবে, ঝড়ের চেয়ে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনার কথাই জানিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস।
এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে ভোরেই শক্তিশালী তিতলি ঝড় আছড়ে পড়ে৷ ওড়িশা উপকূলের গঞ্জাম জেলার গোপালপুরে ও অন্ধ্র উপকূলের পালসায় ভয়ঙ্কর ঘূর্ণীঝড় আছড়ে পড়ে৷ সেই সঙ্গে ঘণ্টায় ১৩০-১৪০ কিমি বেগে ঝড় শুরু হয়েছে। দুই রাজ্য উপকূল থেকে প্রায় ১০,০০০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে এখনও পর্যন্ত।
১১ তারিখ সকালেই অন্ধ্র ও ওড়িশা উপকূলে তিতলির আছড়ে পড়ার পূর্বাভাষ দিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গিয়েছিল, ১৪০-১৫০ কিলোমেটার বেগে বইবে ঝড়ো হাওয়া। সেই আশঙ্কা সত্যি করেই আসছে তিতলি। হাওয়ার বেগ আরও বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ইতিমধেই বঙ্গোপসাগরের উত্তর ভাগ ও ওড়িশার দক্ষিণ উপকূলে সবচেয়ে তীব্র হয়েছে তিতলির আক্রমণ। অন্যদিকে, ওড়িশার দক্ষিণ উপকূলে এর তীব্রতা রয়েছে ১০০-১২০ কিলোমিটার মতো।
বাংলা উপকূলের দিকে অভিমুখ পরিবর্তন করায় বেশ কয়েকটি জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তিতলির জেরে কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুরেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে৷ জানিয়েছে, আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা নাগাদ ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ে এই ভয়ানক ঝড়। আগেই ওড়িশা জুড়ে ভারী সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই ওড়িশা জুড়ে শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি। বেশ কয়েকটি জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
উপগ্রহ চিত্র পর্যবেক্ষণ করে জানা যাচ্ছে, কিছুটা হলেও ইতিমধ্যেই শক্তি হারিয়েছে ঘূর্ণিঝড় তিতলি। শেষ কয়েক ঘণ্টায় উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়। আর এর ফলে জোরালো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে তিতলির আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে এখবর জানা গেছে।
পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি আর বাড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পর ঝড়ের দাপট কম থাকবে বলেই মনে করছে হাওয়া অফিস। তবে, ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে। ইতিমধ্যেই দিঘা সহ সব উপকূলেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে পর্যটকদের। সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদেরও। মাইকিং করে সতর্কতা শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক ও অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু জরুরি বৈঠক করেছেন তিতলি এফেক্ট নিয়ে। দুই রাজ্যের তরফেই প্রশাসনিক স্তরে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীরা। জরুরিকালীন অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন অফিসারদের। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রশাসনিক স্তরে সবরকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।