লোকসভা ভোটে আরও ল্যাজেগোবরে হত মমতার তৃণমূল; বাঁচিয়ে দিয়েছে সিপিএম। ভোটের রেজাল্টের পর এমনই নজরকাড়া তথ্য উঠে এসেছে; লোকসভা ভোটের রেজাল্টে।
বাম ভোট রামে গিয়েই; বাংলায় এবার বিজেপির জয় জয়কার। নিজেদের হারের জন্য বামেদের ভোট ব্যাঙ্ক ধ্বসকেই; দায়ী করছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে; বামফ্রন্টের ভোট এবার ২৬% থেকে কমে ৭.৫২%-এ নেমেছে। বিজেপির ভোট ১০.১৬% থেকে; বেড়ে হয়েছে ৪০.২৩%।
স্বাধীন বাংলার নির্বাচনী ইতিহাসে; এবারই রাজ্য দেখেছে ভোটের সর্বোচ্চ ‘স্যুইং’। শতাংশের হিসেব ধরে বামেদের ভোট; শুধু রাম-বাক্সে গিয়ে পড়া নিয়ে চর্চা হচ্ছে। কিন্তু ভোটের বাস্তব চিত্র বলছে; বাম ভোট পেয়ে রাম শিবির উপকৃত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু মমতার দলও আরও বড় বিড়াম্বনা এড়াতে পেরেছে এই বামেদের সৌজন্যেই। বামেরা রামকে না ঠেকালে; তৃণমূলের আরও ৮ প্রার্থীর এবার আর লোকসভায় যাওয়া হত না।
কিন্তু বাম ভোট যদি সবটাই বিজেপির হত; তা হলে গেরুয়া শিবিরের আসন ১৮ থেকে বেড়ে অন্তত ২৬ হত। বিজেপির পক্ষে ‘স্যুইং’য়ের দাপটে; আরও উইকেট হারিয়ে তৃণমূল নেমে আসত ১৪ তে। ভোট কেটে তৃণমূলের আরও উইকেট পতন বাঁচিয়ে দিয়েছেন বাম প্রার্থীরাই।
তৃণমূলের নবনির্বাচিত সংসদীয় দলের সহকারী নেতা হয়েছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার; মুখ্য সচেতক হয়েছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের তথ্য বলছে কাকলি-কল্যাণদের লোকসভায় ফেরা হত না; তাঁদের কেন্দ্রে বাম প্রার্থী যথাক্রমে হরিপদ বিশ্বাস ও তীর্থঙ্কর রায় ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৭২৩ এবং ১ লক্ষ ৫২ হাজার ২৮১ ভোট ধরে না রাখলে।
তৃণমূল নেতা সৌগত রায় হারতেন; যদি না দমদমে সিপিএম প্রার্থী নেপালদেব ভট্টাচার্য ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৫৯০ ভোট পেতেন। সৌগতবাবু বিজেপির শমীক ভট্টাচার্যকে হারিয়েছেন ৫৩ হাজার ভোটে। কৃষ্ণনগরে মহুয়া মিত্র, হাওড়ায় প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, বীরভূমে শতাব্দী রায়, বর্ধমান পূর্বে সুনীল মণ্ডল, আরামবাগে অপরূপা পোদ্দারদের জয়ও নিশ্চিত হয়েছে বামেদের ভোটের জন্য।
এই সব কেন্দ্রেই তৃণমূল যে ব্যবধানে বিজেপিকে হারিয়েছে; বাম প্রার্থীরা তার চেয়ে বেশি ভোট টেনেছেন। আরামবাগে তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা জিতেছেন মাত্র ১১৪২ ভোটে; সেখানে সিপিএমের শক্তিমোহন মালিক ১ লক্ষ ৫২০ ভোট পেয়েছেন। বর্ধমান পূর্বে তৃণমূলের সুনীল ৮৯ হাজার ৩১১ ভোটে জিতেছেন; সেখানে সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাসের ভোট ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৫৯২।
এমনকি, তৃণমূলের গড় দক্ষিণ কলকাতায় তৃণমূলের মালা রায়ের হাসতে হাসতে জয় (১ লক্ষ ৫৫ হাজার ১৯২ ভোটে) কঠিন হয়ে যেত সিপিএমের নন্দিনী মুখোপাধ্যায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার ২৭৫ ভোট না পেলে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর ওয়ার্ডেও যখন বিজেপি ‘লিড’ নিয়েছে, সেখানে নন্দিনীর লড়াই মালাকে সাহায্যই করেছে বলতেই হবে। তাই রামের হাত থেকে বাম যে তৃণমূলকে বাঁচিয়েছে তা বলাই যায়।