The News বাংলা, বুলন্দশহরঃ উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে গো-রক্ষকদের তাণ্ডবের বলি পুলিশ ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংহকে কি পরিকল্পিত ভাবেই খুন করা হয়েছে? দাদরি-কাণ্ডের প্রথম তদন্তকারী আধিকারিক সুবোধকে খুনের পিছনে কি গেরুয়া বাহিনীর হাত রয়েছে? এই ঘটনায় বিজেপি, বজরং দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর নেতাদের নাম জড়ানোর পর এমনটাই অভিযোগ উঠছে। বৃহস্পতিবার নিহত পুলিশ কর্মীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
আরও পড়ুনঃ ‘গরু তাণ্ডবে’ যোগীর পুলিশের খাতায় বিজেপি-বজরং-ভিএইচপি নেতার নাম
তেলেঙ্গনায় ভোট প্রচারে থাকায় ঘটনার এতদিন পর বৃহস্পতিবার নিহত পুলিশ কর্মীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এই নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখে যোগী। নিহত পুলিশ কর্মীর পরিবার চক্রান্তের অভিযোগ তোলার পরই টনক নড়েছে যোগী আদিত্যনাথ সরকার এর, দাবী বিরোধীদের।
সুবোধ-খুনে পুলিশের এফআইআরে প্রধান অভিযুক্ত হিসাবে উঠে এসেছে বজরং দলের নেতা যোগেশ রাজের নাম। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে যোগেশ ছাড়া আরও চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ভিএইচপি নেতা উপেন্দ্র রাঘব ও বিজেপি যুবমোর্চা দলের নেতা শিখর আগরওয়ালও। আরও ৬০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধেও এফআইআর করা হয়েছে। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গোটা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যেই আসছেন যোগী আদিত্যনাথ।
আরও পড়ুনঃ জনগণকে ‘গাধা’ বানিয়ে ‘শিক্ষাগুরু নেহেরু’র যোগ্য ছাত্র সব রাজনীতিবিদ
এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে যোগী সরকার। অন্য পুলিশকর্মীরা সুবোধকে কেন উন্মত্ত জনতার সামনে একা ছেড়ে দিয়েছিলেন, তা-ও খতিয়ে দেখবে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল(এসআইটি)।
সুবোধের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর পরিবারকে ৪০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে যোগী সরকার। এ ছাড়া, তাঁর মা-বাবাকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে সুবোধের পরিবারের এক সদস্যকে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। তবে এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল বলেন,’উত্তরপ্রদেশেই এমনটা হচ্ছে কেন? সরকার তো পুলিশকর্মীদেরই সুরক্ষা দিতে পারছে না’।
আরও পড়ুনঃ ‘অনুগ্রহ করে সব টাকা নিন’ বিজয় মালিয়ার টাকা ফেরতের সিদ্ধান্ত
জেডিইউ নেতা পবন বর্মার দাবি, ‘হিংসা ও ঘৃণার ভিত্তিতে রাজনীতি এবং ধর্মকে মেলানো হচ্ছে। এমনটা হলে এই পরিণতিই হবে’। বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভি অবশ্য জানিয়েছেন,’বুলন্দশহরের ঘটনা মানবিকতার পক্ষে লজ্জাজনক। দোষীদের শাস্তিতে কড়া ব্যবস্থা নেবে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার’।
উত্তরপ্রদেশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) আনন্দ কুমার জানিয়েছেন, ৪৭ বছরের সুবোধ কুমার সিংহ দাদরি-কাণ্ডের প্রথম তদন্তকারী আধিকারিক ছিলেন। তিনি বলেন,’২০১৫-র ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে সে বছরের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ওই মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন সুবোধ।
পুলিশ সূত্রের খবর, দাদরি-কাণ্ডের তদন্তে নেমে বেশ কিছু পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছিলেন সুবোধ। এমনকি, গো-হত্যার গুজবে খুন হওয়া মহম্মদ আখলাকের বাড়ির ফ্রিজ থেকে মাংসের নমুনাও সংগ্রহ করেন তিনি। ওই তদন্তের মাঝপথেই তাঁকে বারাণসীতে বদলি করা হয়েছিল। মাস দুয়েক আগে বদলি হয়ে বুলন্দশহরের সানায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ রাহুলের ‘রাফায়েল’ অ্যাটাকের জবাবে মোদীর হাতে ‘মাইকেল’
সোমবার উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের সানা এলাকায় গ্রামের বাইরে জঙ্গল লাগোয়া একটি মাঠে প্রায় ২৫টি গরুর মাংস পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে বলে গুজব রটে। গো-হত্যার প্রতিবাদে ওই মাংস ট্রলি-ট্র্যাক্টরে ভরে সাতসকালেই এলাকায় পথ অবরোধ-বিক্ষোভ শুরু হয়। খবর পেয়ে সেই অবরোধ সরাতে সেখানে পৌঁছন সুবোধ কুমার সিংহ-সহ পুলিশকর্মীরা। মুহূর্তেই বিক্ষোভ-প্রতিবাদ তাণ্ডবে পরিণত হয়।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশি সংঘর্ষের বলি হন সুবোধ। সুবোধকে প্রথমে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। এর পর দুষ্কৃতীরা তাঁর সার্ভিস রিভলভার ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে গুলি করে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, সুবোধের বাঁ-চোখের নীচে গুলির ক্ষত ছিল। সুবোধ ছাড়াও এলাকার একজন ব্যক্তিও মারা যান।
আরও পড়ুনঃ ‘ভগবান’ সরাসরি টাকা নিয়ে হাজির ভক্তের সমস্যা মেটাতে
সুবোধ কুমারের গাড়ির চালক রাম আসর জানিয়েছেন, আহত পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সময় উত্তেজিত জনতা দ্বিতীয়বারের মতো তাদের আক্রমণ করে। জনতা তাদের গাড়ি ঘিরে ফেললে প্রাণ বাঁচাতে তিনি গাড়ি রেখে পালিয়ে যান। জনতা এরপর পুলিশ ফাঁড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয়।
মোবাইলে রেকর্ড করা একটি ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে, সুবোধ কুমার গাড়ির মধ্যে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছেন। গাড়ির কাঁচ চুরমার করা এবং দরজাগুলো খোলা। জনতা তাঁর সরকারি পিস্তল ও মোবাইল ফোনটিও নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনার তদন্ত করতে বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাওয়া দাঙ্গাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। চক্রান্তের অভিযোগ তোলা, নিহত পুলিশ অফিসার সুবোধ কুমারের স্ত্রী ও পরিবারকে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আজ কি সান্ত্বনা দেন তিনি সেটাই দেখার।