পঞ্চম দফা ভোটের আগে মোদী মমতা নিয়ে বিস্ফোরক বুদ্ধদেব

2680
পঞ্চম দফা ভোটের আগে মোদী মমতা নিয়ে বিস্ফোরক বুদ্ধদেব/The News বাংলা
পঞ্চম দফা ভোটের আগে মোদী মমতা নিয়ে বিস্ফোরক বুদ্ধদেব/The News বাংলা

উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও ধান্দাবাজ পুঁজিপতিদের; মোদী মডেলকে ভেঙে চুরমার করে দিতে হবে। এই মুহূর্তে জনগণের সামনে; এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। পঞ্চম দফা ভোটের আগে দলিয় মুখপত্রে একথাই বললেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তৃণমূল সরকারের আমলে যে রাজ্যে জীবনযাত্রা ও জীবনসংস্কৃতির অধঃপতন ঘটেছে; তার উল্লেখ করে ভট্টাচার্যের আহ্বান; তৃণমূল নামক বিপদকে এরাজ্যে পরাস্ত করুন। তা নাহলে রাজ্য বাঁচবে না।

আর কি কি বললেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য?
প্রশ্ন; এবারের লোকসভা নির্বাচনে মানুষের সামনে বিকল্প কী? বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য; দেশের উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও পুঁজিপতিদের মডেল। আসলে ধান্দাবাজ পুঁজিপতিদের কাছে মোদী বার্তা শুনিয়েছেন; আমি তোমাদেরই চৌকিদার। জনগণের সামনে দায়িত্ব হলো এই মডেলকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়া। সারা দেশেই বামপন্থা, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, স্বাধীন অর্থনৈতিক বিকাশই বিকল্প পথ।

আরও পড়ুনঃ মাওবাদী দমনে ব্যর্থ মোদী, মেদিনীপুরের সভা থেকে তোপ মুখ্যমন্ত্রীর

প্রশ্ন; ২০০৪ সালে প্রথম ইউপিএ সরকার গঠনে বামপন্থীরা নীতিনির্ধারক ভূমিকা নিতে পেরেছিল; এবারে সেইভাবে বিকল্প তুলে ধরা সম্ভব? বুদ্ধদেব; অবশ্যই সম্ভব। ২০০৪ সালে এটা প্রমাণিত হয়েছিল। প্রথমত; সেবার সাম্প্রদায়িক শক্তি যেমন কোণঠাসা হয়েছিল; তেমনি ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়াও সম্ভব হয়েছিল। দ্বিতীয়ত; সংসদে বামপন্থীদের শক্তিবৃদ্ধি ঘটেছিল। দেশে বামপন্থীদের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছিল।

প্রশ্ন; রাজ্যজুড়ে প্রকাশ্যেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে আপনার বক্তব্য কী? ভট্টাচার্য; মমতামোদী দুজনেই হিসাব করে চাল দিচ্ছেন। বিজেপি তৃণমূলের এই কাণ্ডকারখানার ফলে এরাজ্যে যেভাবে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটেছে; তা অতীতের সব ইতিহাসকে ছাপিয়ে গেছে। এরাজ্যে বিজেপিকে জায়গা করে দেওয়া; তাদের সঙ্গে আপসে লড়াই করে সাম্প্রদায়িকতার এক বিপজ্জনক পরিবেশ তৈরি করেছে তৃণমূল।

আরও পড়ুনঃ মহারাষ্ট্র ও ছত্তিসগড়ের মত ভোটে মাওবাদী হামলার আশঙ্কা বাংলায়

প্রশ্ন; পশ্চিমবঙ্গে কি অরাজক অবস্থা চলছে? ভট্টাচার্য; গ্রাম-শহরে এক ‌অরাজক অবস্থা, বিশেষ করে তরুণ সমাজের সামনে। তৃণমূল তাদের বিপথে চালিত করছে। একদিকে শিল্প নেই, কৃষি নেই। কিন্তু আছে প্রলোভন, প্ররোচনা। সমাজবিরোধীদের শিবির ফুলে ফেঁপে উঠেছে, কতদিন এভাবে, তা তারা নিজেরাও জানে না! বামপন্থীদের দায়িত্ব এই যুবসমাজকে সঠিকপথে নিয়ে আসা।

প্রশ্ন; এই অরাজক অবস্থাকে সামনে রেখে বিজেপি কি জায়গা করে নিতে চাইছে? ভট্টাচার্য; বিপদ আসছে; কিছু জায়গায় এসেছেও। আমাদেরই দায়িত্ব এই সর্বনাশা দিক থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনা। তৃণমূলের গরম তেলের কড়াই থেকে; বিজেপির জ্বলন্ত উনুনে ঝাঁপ দেওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ?

আরও পড়ুনঃ লোকসভা ভোটে দাঁড়ানোর যোগ্যতা নেই ভারতীর, বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রশ্ন; এই লোকসভা নির্বাচনে মানুষ অবাধে ভোট দিতে পারছে; বলে কি আপনি মনে করেন? ভট্টাচার্য; এখনও পর্যন্ত যা নির্বাচন হয়েছে; তা ন্যায়নিষ্ঠ নির্বাচন হচ্ছে বলা যাবে না। অতীতের থেকে হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে আংশিক উন্নতি হয়েছে; কিন্তু সামগ্রিক বিচারে পশ্চিমবাংলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে শাসক দল এবং পুলিশের একাংশ।

প্রশ্ন; এরাজ্যে বামপন্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনে মানুষের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। ব্রিগেডের সুবিশাল সমাবেশে তারই ছাপ। নির্বাচনে তার প্রতিফলন পড়বে? ভট্টাচার্য; অবশ্যই পড়বে। এই সময়ে যে আন্দোলন-সংগ্রামগুলি সংগঠিত হয়েছে; ব্রিগেডে ও অন্যত্র সমাবেশে তার প্রতিফলন ঘটেছে। নির্বাচনে আমরা অবশ্যই তার ফল পাবো; এই আশা রাখি।

আরও পড়ুনঃ দেশের সুরক্ষায় ২০০ ইসলাম ধর্ম প্রচারককে বিতাড়িত করল শ্রীলঙ্কা

প্রশ্ন; বাংলায় একটা ধারণা তৈরি হয়েছে; যে লড়াইটা বিজেপি আর তৃণমূলের। এই নিয়ে মানুষের সামনে আপনার বার্তা কী? ভট্টাচার্য; এরাজ্যের মানুষ যারা বামফ্রন্ট সরকারকে দেখেছেন; এখন তৃণমূল সরকারকেও দেখছেন; তাঁরা এই দুই সরকারের কর্মপন্থা আর ফলাফলও দেখেছেন। তাঁদের কাছে আমার আবেদন; আপনারা তুলনামূলক বিচার করুন। বিশেষ করে তরুণ সমাজকে আমি বলবো; সংশয়ের গভীরে যান; নিজেরাই এই দুই সরকারের পার্থক্যের মূল্যায়ন করুন।

প্রশ্ন; এরাজ্যে বামেদের সামনে যে চ্যালেঞ্জ তা আপনি কিভাবে দেখছেন? ভট্টাচার্য; বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালের তুলনায় তৃণমূলের সময়ে; এরাজ্যে জীবনযাত্রা ও জীবনসংস্কৃতির যে অধঃপতন ঘটেছে। তা সবাই অনুধাবন করছেন। এই পথেই এরাজ্যে বিজেপি-র অনুপ্রবেশ। তাই তৃণমূল নামক বিপদকে এরাজ্যে পরাস্ত করতেই হবে। আটকাতে হবে বিজেপি-কে। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদকে নির্মূল করতে হবে। গোটা দেশে ধান্দাবাজদের চৌকিদারকে হটাতেই হবে। এটাই মানুষের সামনে দায়িত্ব।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন