The News বাংলা, কলকাতা: দুই দেশে দুই বিধান। এক দেশে পার্লামেন্টে বসে সবার চোখের সামনে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান যায়। আর কলকাতার শপিং মলে বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়ান যাবে না। এগিয়ে বাংলা।
আরও পড়ুনঃ Exclusive: সাউথ সিটি মলে বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়ান নিষিদ্ধ
অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট অধিবেশন চলাকালিন দুই মাসের সন্তানকে বুকের দুধ খাইয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন কুইন্সল্যান্ডের সেনেটর লেরিসা ওয়াটার্স। ইতিহাসের অংশ হয়েছে তাঁর মেয়ে আলিয়া জয়ও। দেশটিতে ছোট্ট আলিয়াই সে দেশের প্রথম শিশু যে পার্লামেন্ট অধিবেশনে মায়ের কোলে বসে দুধ পান করলো।
আলিয়ার মা লেরিসা অস্ট্রেলিয়ান গ্রিন পার্টির আসিস্ট্যান্ট উপনেত্রী। মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে আলিয়াকে কোলে নিয়ে পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগ দেন। অধিবেশন চলাকালিন খিদেয় কাঁদতে থাকে আলিয়া। এরপর সেখানে বসেই মেয়েকে দুধ খাওয়ান সেনেটর লেরিসা।
আরও পড়ুনঃ একে ৪৭ এর গুলি বুকে নিয়েও কাসভকে ছাড়েন নি তুকারাম
তারপর টুইটারে লেরিসা গর্ব নিয়ে লেখেন, ‘আমার মেয়ে আলিয়াই প্রথম সৌভাগ্যবতী শিশু যে পার্লামেন্টে বসে দুধ পান করল’। অস্ট্রেলিয়ায় শিশুদের নিয়ে পার্লামেন্টে ঢোকবার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আগেই বাতিল করা হয়। আর এই নিষেধাজ্ঞার বিধান বাতিলের দাবিতে সবচেয়ে বেশি যারা সোচ্চার হয়েছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন এই লেরিসা ওয়াটার্স।
পরে অবশ্য জানা যায় যে আলিয়াই বিশ্বে প্রথম শিশু নয়, যে পার্লামেন্ট অধিবেশনে মায়ের দুধ খেয়েছে। এর আগে আইসল্যান্ডের ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টির এক এমপি পার্লামেন্টে বসে তাঁর একমাস বয়সী শিশুকে বুকের দুধ পান করিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনঃ ‘কাসভের বেটি’, জঙ্গি চিনিয়ে দেবার ‘পুরষ্কার’ পাচ্ছে দেবিকা
ব্রিটিশ হাউস অফ কমন্সে নিজের ৩ মাসের বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করিয়েছেন কারিনা গোল্ড। আর্জেন্টিনাতেও এই ঘটনা দেখা গেছে। বিশ্বের সব দেশেই যে কোন স্থানে শিশুকে নিজের বুকের দুধ খাওয়ান মায়েদের কাছে খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। শুধু কলকাতায় মায়েদের অনুমতি নিতে হবে। আর সেটা পাওয়াও যাবে না!
অবাক লাগলেও সত্যি। বাচ্চাকে নিজের দুধ খাওয়ানর অনুমতি নেই শুধু এই বাংলার শপিং মলে। নিষেধাজ্ঞা আছে কলকাতার অভিজাত শপিং মল সাউথ সিটিতে। অভিলাষা নামের এক মা তাঁর ছোট্ট সন্তানকে দুধ খাওয়াতে গেলে বাধা পান সেখানে। টয়লেটে গিয়ে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে বলা হয় তাঁকে।
বলা হয়, সাউথ সিটি নাকি বাচ্চাকে ফিড করানোর জায়গা নয়। বাচ্চাকে ফিড করানোর কোন কোন জায়গা সাউথ সিটি কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেটা এখনও জানা যায় নি।
বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে না পেরে তিনি সাউথ সিটির ফেসবুক পেজে অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে খারাপ রেটিং দিলে, তাঁকে এই উত্তর দেন কর্তৃপক্ষ। কি জানান তারা, আরেকবার দেখুনঃ নিষেধাজ্ঞা আছে কলকাতার অভিজাত শপিং মল সাউথ সিটিতে
নিরাপত্তার জন্যই বাচ্চাকে খাওয়ানো যাবে না এই মলে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন এখন একটাই, একটা মল এত সাহস পায় কি করে? কাদের জন্য এদের এত সাহস? একটা বাচ্চাকে খাওয়ানো নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস মল কর্তৃপক্ষকে কে দিল? গোটা পৃথিবীতে যেটার অনুমতি নিতে হয় না, কলকাতায় সেটাই নিষিদ্ধ!!!
আরও পড়ুনঃ অবিশ্বাস্য, ‘বাহুবলী’কে মাত করে বলিউডের মেগা হিট ‘বাধাই হো’
আর এখানেই বোঝা যায়, যতই ঝাঁ চকচকে সাউথ সিটিতে ঢুকে বিদেশি পোষাক পড়ি, আমাদের মানসিকতা সেই পুরোনো যুগেই পড়ে আছে। ইতিমধ্যেই কলকাতার বিভিন্ন মহল থেকে সাউথ সিটির এই নিষেধাজ্ঞার তুমুল সমালোচনা করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ পাপ ঢাকতে শিশু বলিদান, জন্মেই অনাথ শিশুরা অসহায়
শিশু যদি ক্ষুধার্তবোধ করে তবে সে পার্লামেন্টের অধিবেশন কক্ষই হোক আর শপিং মলই হোক, সে মায়ের দুধ পান করবে। কারণ এটাই হচ্ছে শিশুর মৌলিক অধিকার। আর এই শিক্ষাটাই নেই সাউথ সিটি কর্তৃপক্ষের।