The News বাংলা, দূর্গাপুর: সলমন খান এর ‘বজরঙ্গী ভাইজান’ মনে আছে? সেখানে পাকিস্তানি একটি ছোট্ট শিশু, যে জন্ম থেকে কথা বলতে পারত না। তাঁর মা ভারত-পাকিস্তানের সমস্ত বাধা পেরিয়ে ভারতে আসে তাঁর ছোট্ট সোনার বাকশক্তি ফিরে পাওয়ার আশায়। অনেকেই দেখেছেন সেই সিনেমাটি। রূপোলী পর্দার সেই কাহিনী এবার বাস্তবে। আর সেটা হল এই বাংলার দূর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে।
আরও পড়ুন: মোদীর গেরুয়া রথকে আটকাতে পারল না মমতার সরকার
প্রতিদিন সীমান্তে চলছে গুলির লড়াই। এক সময় একই দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ আজ দুই দেশে ভাগ হয়ে আলাদা। প্রতিবেশী দেশ হলেও দুই দেশের মধ্যে প্রতিবেশীর কোনো ভাতৃত্বই আর দেখতে পাওয়া যায় না। দুই দেশের সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া। তবে আজও কিছু ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, মানুষের জীবন কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে রাখা যায় না।
আরও পড়ুনঃ EXCLUSIVE: কলকাতা থেকে পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের টাকা যাচ্ছে জঙ্গিদের হাতে
আরও পড়ুন: ‘রাজনীতিতে টিকে থাকতে গেলে তেল দিতেই হবে’ বিস্ফোরক তৃণমূল সাংসদ
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা শহরের বাসিন্দা মহম্মদ আসিফ ও তানি আসিফের চতুর্থ সন্তান রিধা। মাত্র দুই বছর বয়সের ছোট্ট রিধা জন্মের সময় থেকেই এক জটিল অসুখে ভুগছিল। চিকিৎসার পরিভাষায় এই অসুখের নাম ‘কমপ্লেক্স কনজেনিটাল সায়ানেটিক্যাল হার্ট ডিজিজ’ অর্থাৎ জটিল এক জিনের অসুখ, যার কারনে রক্ত চলাচলের সমস্যার কারনে শিশুর শরীর নীল হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ EXCLUSIVE: দিল্লীর নির্ভয়া ধর্ষণ কাণ্ডের পরেও নিরাপত্তাহীন কলকাতার বাস
বড় অস্ত্রপচার ছাড়া এই রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব নয়। কিন্তু রিধার জন্মভূমিতে সেই অস্ত্রপচার সম্ভব নয় কারন পাকিস্তানে উন্নতমানের অস্ত্রপচারের সেই পরিকাঠামো নেই। ফলে রিধাকে নিয়ে সমস্যায় পড়েন মহম্মদ ও তানি। তবে ভারতে যে এই অস্ত্রপচার সম্ভব তা জানতেন ওই দম্পতি।
আরও পড়ুনঃ Exclusive: ভারতবাসীকে ‘জ্ঞান’ দেওয়া প্রিয়াঙ্কা নিজে কি করলেন
কারন আজ থেকে বছর সাতেক আগে এই একই অসুখে ভুগছিল ওই দম্পতির ছেলে, রিধার দাদা আবদুল। তখন তারা যোগাযোগ করেছিলেন ভারতে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক যেমনই হোক না কেন জটিল চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট মানবিকতা দেখানো হয় বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক আধিকারিক।
আরও পড়ুনঃ মানব জীবনে সঙ্গীতের অসংখ্য উপকারিতা
বিভিন্ন মাধম্যের মারফত মহম্মদের সাথে যোগাযোগ হয় রোটারি ক্লাবের। তাদের থেকেই আবদুলের বাবা মহম্মদ জানতে পারেন যে দুর্গাপুরের বিধাননগরের একটি হাসপাতালে এই অসুখের চিকিৎসা হয়। তখন ওই দম্পতি দুর্গাপুরের সেই হাসপাতালে নিয়ে আসেন আবদুলকে আর সুস্থ করে নিশ্চিন্তে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান ছেলেকে।
কিন্তু বিধির বিধান, ফের সাত বছর পরে সেই একই অসুখ নিয়ে জন্ম নিল আবদুলের বোন রিধা। তবে এবারে আর ওই দম্পতিকে বেশি বেগ পেতে হয়নি। এতটুকু সময় নষ্ট না করে তারা রিধাকে নিয়ে সোজা চলে এলেন দুর্গাপুরের সেই হাসপাতালে।
আরও পড়ুন: মানুষের সর্বনাশে কারও পৌষ মাস, দূষণই লাভজনক ব্যবসা
হাসপাতালের চিকিৎসক শ্রীরূপ চ্যাটার্জীর তত্বাবধানে রিধার অস্ত্রপচার হয়, আর রিধা ফিরে পায় নতুন জীবন। আবদুলের অস্ত্রপচারও করেছিলেন এই চিকিৎসকই। শ্রীরূপবাবু বলেন, এই সমস্যাটির নাম টেট্রালজি অফ ফ্যালো। খুব কঠিন সার্জারির মাধ্যমে হার্ট কারেকশন করা গেলে তবেই এই অসুখ সারে।
আরও পড়ুনঃ শহীদ জওয়ানকে সম্মান নয়, সেনাকে পাথর ছুঁড়ে দেশদ্রোহীরাই ভারতে ‘নায়ক’
চিকিৎসক শ্রীরূপ চ্যাটার্জী বলেন, “রিধার দাদার কেসটি আমাদের কাছে প্রথম ছিল, আর আমরা সফলও হয়েছিলাম ওই শিশুটিকে সুস্থ করে বাড়ি ফেরাতে। ফলে রিধার ক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি আমাদের”।
আরও পড়ুন: ২২ বছর পর ফের ভূস্বর্গে রাষ্ট্রপতি শাসন
বর্তমানে রিধা একদম সুস্থ। বাকি জীবনটা সে কোনো রকম অসুস্থতা ছাড়াই কাটাবে হেসে খেলে। এই সাফল্য শুধু অস্ত্রপচারের নয়, এই সাফল্য শুধু প্রতিবেশী দেশের একটি পরিবারকে নিশ্চিন্তে দেশে ফেরানো নয়, এ হল কাঁটাতারের বেড়াজালকে ভেঙ্গে দিয়ে মনুষ্যত্বের সাফল্য।
আরও পড়ুনঃ শিক্ষিতদের বিধায়ক করল তেলাঙ্গানা, কবে শিখবে বাংলা
তাই তো দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে হাসি মুখে দেশে ফেরার আগে মহম্মদ আসিফ জানিয়ে গেলেন যে, “আমরা যে শত্রু দেশের বাসিন্দা তা ঘূণাক্ষরেও বুঝতে দেননি এখানকার কেউই। দেশের সাথে দেশের লড়াই কখনও মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে না। কৃতজ্ঞ রইল ভারতের প্রতি”।
ভারতের প্রতি যারা বিদ্বেষমূলক বিষ ছড়ান, ভারতে প্রতিদিন হামলা চালান, সেই পাক জঙ্গিদের কি বলবেন মহম্মদ আসিফ? সৌভাতৃত্বের মন্ত্রে দীক্ষিত বাঙালি এই প্রশ্নটা কোনদিন করতে পারবে না ফুটফুটে রিধার আব্বা মহম্মদ আসিফকে।