যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত ও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানদের ইয়েল ও স্ট্যানফোর্ডের মতো বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ, দুর্নীতি ও প্রতারণা সংক্রান্ত একটি চাঞ্চল্যকর মামলা ঝুলছে দেশটির বিচারালয়ে। হলিউড অভিনেত্রী ফেলিসিটি হাফম্যান ও লরি লাফলিনের মতো তারকাসহ অন্তত ৫০ জন ব্যক্তি এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত, যেখানে অন্তত ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার লেনদেন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
আইনজীবীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কেলেঙ্কারির ইতিহাস অনেক পুরনো। এর মূল হোতা হিসেবে ভূমিকা রেখেছে ক্যালিফোর্নিয়ার নিউ পোর্ট বিচের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সহায়তা প্রতিষ্ঠান। এজ কলেজ অ্যান্ড ক্যারিয়ার নেটওয়ার্ক নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি কোচদের ঘুষ দিয়েছে, ভুয়া ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করেছে এবং খেলাধুলায় সম্পৃক্ত নয় এমন প্রার্থীকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিতে ফটো জালিয়াতি পর্যন্ত করেছে।
বোস্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অ্যাটর্নি বলেন, ‘এই মা-বাবারা হচ্ছেন সম্পদ ও সুবিধার প্রতিমূর্তি। এ ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে যখন একজন ছাত্র ভর্তি হয় তখন মেধাবী এক ছাত্রের ভর্তির সুযোগের ইতি ঘটে’।
এজ কলেজ অ্যান্ড ক্যারিয়ার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই প্রতারণায় নেতৃত্ব দেওয়ায় রিক সিঙ্গার (৫৮) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। সিঙ্গার পরিচালিত একটি দাতব্য সংগঠনে অনুদানের নাম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ছাত্র প্রতি ১ লাখ থেকে ২৫ লাখ ডলার পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।
আদালতে স্বীকারোক্তিতে সিঙ্গার বলেন,’প্রায় নিয়মিতই দলে স্থানের জন্য কোচকে ঘুষ দিতাম’। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাবেক সেইলিং কোচ জন ভ্যান্ডেমোরও এ অপরাধ চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের আদালতে উপস্থিত অন্তত ২০ বিবাদীর একজন হচ্ছেন হাফম্যান, যিনি ‘ডেসপারেট হাউজওয়াইভস’ টিভি সিরিজের মাধ্যমে পরিচিতি পান। এছাড়া রয়েছেন হাফম্যানের স্বামী উইলিয়াম এইচ ম্যাসি, যিনি অভিনয় করেছেন ‘ফারগো’র মতো সিনেমায় এবং ‘শেমলেস’-এর মতো হিট টিভি সিরিজে।
অপরাধীদের গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৩০০ সদস্য দেশজুড়ে অভিযান চালাচ্ছেন, যারা অভিযানটির নাম দিয়েছেন ‘অপারেশন ভার্সিটি ব্লউস। সিঙ্গারের সহযোগী হিসেবে কৌঁসুলিরা এ পর্যন্ত ৩৩ জন বাবা-মা ও ১৩ জন কোচের নাম পেয়েছেন।
অভিযুক্ত বাবা-মায়ের মধ্যে রয়েছেন বিশেষ আর্থিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান হারকিউলিস ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মানুয়েল হেনরিকজ, আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান উইকলি ফার অ্যান্ড গ্যালাগারের কো-চেয়ারম্যান গর্ডন ক্যাপলান, বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান পিমকোর সাবেক সিইও ডগলাস হজ প্রমুখ।
২৯ মার্চ বোস্টনে শুনানি শুরুর আগে আড়াই লাখ ডলার মুচলেকার বিনিময়ে হাফম্যানকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক আলেক্সান্ডার ম্যাককিনন। লস অ্যাঞ্জেলেসের জেলা আদালতে উপস্থিত সব বিবাদীকে মুচলেকার বিনিময়ে মুক্তি নিতে হতে পারে বলে এক ইমেইল বার্তায় জানান ইউএস অ্যাটর্নির কার্যালয়ের মুখপাত্র টম এমরোজেক।
এই প্রতারণা চক্রের মূল হোতা এবং এতে জড়িত অভিভাবকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০ বছরের মতো কারাদণ্ড পেতে পারেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স ও আল জাজিরা।