মালদহঃ দশভূজা নয়, চতুর্ভূজা রুপে পুজিত হন দেবী। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এমনই রুপে দেবীর পুজো হয়ে আসছে পুরান মালদহের মুচিয়ার চক্রবতী বাড়িতে। নামে বাড়ির পুজো হলেও এখন পুজো হয়ে উঠেছে সর্বজনীন।
পুজোর চারটে দিন অরন্ধন থাকে পুরো মহাদেবপুর গ্রাম। পরিবারের প্রবীণ নাগরিক সন্তোষ চক্রবতী বলেন, “এখনকার বাংলাদেশ আগে ছিল পাকিস্থান। সেই পাকিস্থানের ভোলাহাটে আমাদের পূর্বপুরুষ স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের পুজো শুরু করেছিলেন। দেশ ভাগের সময় আমরা এপারে চলে আসি। তবে ভোলাহাটের মায়ের বেদীর মাটি নিয়ে এসে এখানে আমরা নতুন করে বেদী তৈরি করেছি। পূর্ব পুরুষদের নিয়ম মেনেই আজও আমরা বৈষ্ণব মতে মায়ের পুজো করে আসছি।”
পুরাতন মালদহের মুচিয়া গ্রামপঞ্চায়েতের মহাদেবপুর গ্রাম। এই গ্রামেই বসবাস করেন সন্তোষ চক্রবতী। প্রাচীন কাল থেকেই চক্রবতী বাড়িতে পুজো হয়ে আসছে। তাই চক্রবতী বাড়ির পুজো নামে পরিচিত গ্রামে। গ্রামের প্রত্যেকেই সামিল হন পুজোতে। নিয়ম ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেবীর আরাধনা করা হয়। রথযাত্রার দিন থেকে শুরু হয়ে যায় পুজো। ওইদিনই শুরু হয় মুর্তি গড়ার কাজও। আর মহালয়ার দিন মায়ের চক্ষুদান হয়। ওই দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় বাড়িতে চন্ডীপাঠ। দেবীর রুপ এখানে মৃন্ময়ী।
দেবী মূর্তির উচ্চতা চার ফুট। একচালাতেই থাকেন কার্তিক, গণেশ, লক্ষী ও সরস্বতী। ষষ্ঠীতে বোধন দিয়ে শুরু হয় পুজা। পঞ্চ বাজনা বাজিয়ে মহানন্দা নদীতে স্নান করানো হয় কলাবউকে। চক্রবতী বাড়ির সাত নদীর জল নিজেরাই সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন পরিবার সহ গ্রামের লোকেরা।
পুজোকে ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে নানান অলৌকিক কাহিনী। গ্রামের অনেকে এখানে এসে প্রার্থনা করেন। গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবার পুজোর কটা দিন বাড়িতে উনন জ্বালান না। প্রত্যেকেই খাওয়া দেওয়া করেন চক্রবতীর বাড়িতে। ওই বাড়ির প্রবীণ এক সদস্য ছায়া চক্রবতী বলেন, “বাংলাদেশে আমাদের বাড়িতে এক শাঁখারু শাখা পড়াতেন। আমাদের বাড়ির মেয়ে পরিচয় দিয়ে জমিতে এক অপরুপা যুবতী দুই হাতে দুজোড়া শাঁখা পড়েন। আর দাম নিতে বলেন আমাদের পরিবারের কাছে। সেই থেকে আমরা মাকে দু’জোড়া করে শাঁখা পড়াই। আমরা নিজে হাতে মায়ের পায়ে আলতা পড়িয়ে দিই।”
বির্সজনেও চমক রয়েছে। বাংলাদেশে দেবীকে বির্সজন দেওয়া হত মহানন্দা নদীতে। সেই প্রথা মেনে আজও সেই মহানন্দা নদীতে বির্সজন দেওয়া হয় চতুর্ভূজার। আর সেই বির্সজন দেখতেই নদীর দুপাড়ে ভিড় জমান দুই বাংলার মানুষ।