কাশ্মীরে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় রাজ্যের জওয়ানের মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ২। হাওড়ার পর এবার নদিয়ার আরও এক জওয়ানের মৃত্যু সংবাদ এসে পৌঁছেছে তাঁর গ্রামের বাড়িতে। ৪৪ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ হয়েছেন তার মধ্যে বাংলার এই দুই সেনা রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪৪ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ হয়েছেন। তার মধ্যেই আছেন বাংলার যুবক বাবলু সাঁতরাও। জইশ ই মহম্মদের করা এই আত্মঘাতী হামলায় ৪৪ জন সিআরপিএফ জওয়ান নিহত হয়েছেন। সিআরপিএফের জওয়ান বাবলু তাঁদেরই এক জন। হাওড়ার বাউরিয়ার চককাশি রাজবংশী পাড়ার বাসিন্দা বাবলু রেখে গেলেন স্ত্রী ও চার বছরের মেয়েকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাঁতরা পরিবার এই চরম দুঃসংবাদ জানতে পারেন। গোটা পাড়ায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
অন্যদিকে নদিয়ার তেহট্টের হাঁসপুকুরিয়া গ্রামের ছেলে সুদীপ বিশ্বাসও যোগ দিয়েছিলেন সিআরপিএফ-এ। সিআরপিএফ এর ৯৮ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ান ছিলেন সুদীপ। জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ের উপর সিআরপিএফ কনভয়ে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় শহিদ হয়েছে নদিয়ার জওয়ান সুদীপ বিশ্বাস বলেই তাঁর বাড়িতে খবর এসেছে। শুক্রবার সকালে তাঁর বাড়িতে ফোন করে এই দুঃসংবাদ দেওয়া হয়।
১৪ তারিখ বিকেল ৩টের সময়ও বাড়িতে ফোন করেছিল নিহত জওয়ান সুদীপ বিশ্বাস। এটাই ছিল বাড়িতে করা তাঁর শেষ ফোন। ফোনে কথা হয় বাবা ও মায়ের সাথে। খুব শীঘ্রই বাড়িতে ফিরে আসবে বলে জানিয়েছিল বাবা ও মাকে। হ্যাঁ বাড়ি ফিরছে সুদীপ অনেক আগেই তবে কফিনবন্দি হয়ে। সুদীপের মৃত্যূতে শোকের ছায়া নেমে এসে তাঁর গ্রামের বাড়ি সহ গোটা গ্রামে। বাড়ির লোকেরা ও প্রতিবেশীরা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে সুদীপ আর নেই।
ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই হাওড়ার সাঁতরা পরিবারে ও নদিয়ার বিশ্বাস পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দুই জেলার দুই বাড়িতেই ভিড় করেছেন গোটা পাড়ার মানুষ। দুই পরিবারই যাতে অসুবিধার মধ্যে না পরে, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবার করবে পাড়ার মানুষ। ইতিমধ্যেই রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে দুই শহিদ পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। দুই শহিদের বাড়িতেই ফোন করে সমবেদনা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক দিয়ে সিআরপিএফ জওয়ানদের ৫৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের একটি কনভয় যাচ্ছিল। প্রায় ২৫০০ জওয়ানের একটি দলকে জম্মু থেকে কাশ্মীর নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এই কনভয়েই একটি গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। জানা গেছে, এই গাড়িতেই ছিলেন হাওড়ার বাবলু সাঁতরা ও সুদীপ বিশ্বাস। প্রথমে সেই কনভয়ে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। সেনা সূত্রে খবর, বিস্ফোরক বোঝাই একটি গাড়ি গিয়ে ধাক্কা মারে সিআরপিএফ এর একটি গাড়িতে। প্রায় ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক ছিল ওই মহিন্দ্রা স্করপিও গাড়িতে।
জানা গিয়েছে, বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি চালাচ্ছিল জইশ জঙ্গি আদিল আহমেদ। বছর দেড়েক আগে জঙ্গি সগঠনে যোগ দিয়েছিল আদিল। এই বিস্ফোরণেই নিহত হন ৪৪জন জওয়ান। তারপর ছত্রভঙ্গ জওয়ানদের উপর গুলিবৃষ্টি করতে থাকে জঙ্গিরা। এই হামলার দায় নিয়েছে জইশ ই মহম্মদ। শুক্রবারই কাশ্মীরে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং, সঙ্গে সিআরপিএফ এর ডিজি। সকালেই উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সেনা সূত্রে খবর, জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়েতে অবন্তীপুরা এলাকায় হঠাৎই কনভয়ের মাঝে ঢুকে আসে একটি মহিন্দ্রা স্করপিও গাড়ি। যাতে প্রায় ৩৫০ কেজি আইইডি বোঝাই করা ছিল৷ সেনা কনভয়ের সঙ্গে ধাক্কায় প্রবল বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর কনভয়টিকে ঘিরে ফেলে জঙ্গিরা। লাগাতার গুলি চালিয়ে ঝাঁজরা করে দেওয়া হয় গাড়িটিকে। শহিদ হন ৪৪ জন সিআরপিএফ জওয়ান, গুরুতর জখম হয়েছেন আরও ১৫ জন। বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এখন আর কোন আলোচনা নয়, বদলার দাবি গোটা দেশ জুড়ে। জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হামলার ঘটনার নিন্দা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী। লোকসভা নির্বাচনের আগে জম্মু-কাশ্মীরে এই বড়সড় জঙ্গি হামলা ভোট বানচাল করা ও সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের বদলা বলেই দাবি করেছে জঙ্গি সংগঠন জইশ ই মহম্মদ। এই ঘটনায় পাকিস্তানের হাত আছে, পরিস্কার জানালেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।