অদ্ভুত জেল যেখান থেকে আর বাড়ি ফিরতে চায় না কয়েদিরা

559
অদ্ভুত জেল যেখান থেকে আর বাড়ি ফিরতে চায় না কয়েদিরা/The News বাংলা
অদ্ভুত জেল যেখান থেকে আর বাড়ি ফিরতে চায় না কয়েদিরা/The News বাংলা

জেল বা কারাগার মানে অপরাধীদের শাস্তির জায়গা। যেটাকে সভ্য ভাষায় বলা হয়, সংশোধনাগার। কারাগার মানেই বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকা, দিনের পর দিন চার দেয়ালের মাঝে আটকে থাকা। কারাগারে একজন অপরাধীর খাওয়া-চিকিৎসার দায়িত্ব থাকে কর্তৃপক্ষের। বাইরের আয়েশি জীবন ছেড়ে কষ্টে দিন কাটাতে হয় তাকে। পরে থাকতে হয় কারাগারের নির্ধারিত কয়েদির পোশাক। সবই অপরাধের শাস্তির জন্য।

আরও পড়ুনঃ সারদা রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ডে মমতার পুলিশ কর্তাদের বারবার তলব গোয়েন্দাদের

কিন্তু যদি চাইলেই ইচ্ছে মতো প্রতিদিন কারাগার থেকে বের হয়ে যাওয়া যেত? বিয়ে করে কারাগারেই সংসার পাতা যেত? কেনা যেত টিভি, ফ্রিজ, গাড়ির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য? তাহলে কেমন হত? হ্যাঁ, অবাস্তব মনে হলেও এরকম কারাগার বাস্তবেও রয়েছে। আর সেটা রয়েছে ভারতেরই রাজস্থানে।

আরও পড়ুনঃ নতুন যুদ্ধ, রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ডে মমতার দুই অফিসারকে ডেকে পাঠাল ইডি

অদ্ভুত জেল যেখান থেকে আর বাড়ি ফিরতে চায় না কয়েদিরা/The News বাংলা
অদ্ভুত জেল যেখান থেকে আর বাড়ি ফিরতে চায় না কয়েদিরা/The News বাংলা

রাজস্থানের স্যানগানার নামের এই কারাগার থেকে প্রতিদিন সকাল হলেই কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পরে কয়েদিরা। তাদের কেউ দিনমজুর, কেউ কারখানার শ্রমিক, গাড়িচালক, আবার কেউ আছে যোগার শিক্ষক। এদের মধ্যে বিয়ে করে সংসার করছে রামচন্দ এবং সাগনা। আর এরা দুজনেই হত্যা মামলার আসামী।

আরও পড়ুনঃ সারদা চিটফান্ডে সর্বহারাদের দেখেই কি তাড়াতাড়ি ধর্ণা শেষ করলেন মমতা

রামচন্দ একটি স্কুলের বাস চালায় আর সাগনা একটি গার্মেন্টস দোকানে চাকরি করে। প্রতিদিন সকাল হলেই কারাগার থেকে বেরিয়ে পরে তারা। এখানেই আছে তাদের লোহার ছাদের ঘর। টিভি, ফ্রিজ, আসবাবসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এদের মধ্যে রামচন্দ একা ছিল, অন্যদিকে সাগনার পরিবার তাকে ত্যাগ করে। ফলে তাদের প্রতিবেশীরা তাদের বিয়ে দিয়ে দেয়। যাতে করে তাদের আর একা থাকতে না হয়। আর বিয়ের পর থেকেই এই স্যানগানার কারাগারে তারা সংসার করছে।

আরও পড়ুনঃ ধর্মতলার ধর্ণা মঞ্চ থেকে মোদীর বিরুদ্ধে লোকসভা ভোটের ‘সারদা ইস্যু’

আসলে স্যানগানার হলো একটি উন্মুক্ত কারাগার। রাজস্থানের জয়পুরের একটি কারাগার। এই কারাগারের চারপাশে কোন দেওয়াল নেই, কয়েদিদের দেখার জন্য নেই কোন নিরাপত্তারক্ষীও। এমনকি কয়েদিদের বাইরে যাওয়ার জন্য উৎসাহই দেওয়া হয়। বাস্তবে তাদের কাজের সন্ধানে শহরে যেতে বলা হয়। কারণ এই কারাগারে থাকতে দিলেও আসামীদের থাকা-খাওয়া, পরা ও চিকিৎসা খরচ নিজেদের বহন করতে হয়।

আরও পড়ুনঃ সারদা চিটফাণ্ড মামলায় রাজীবকে জেরা করতে কি কি প্রশ্ন সাজাচ্ছে সিবিআই

অদ্ভুত জেল যেখান থেকে আর বাড়ি ফিরতে চায় না কয়েদিরা/The News বাংলা
অদ্ভুত জেল যেখান থেকে আর বাড়ি ফিরতে চায় না কয়েদিরা/The News বাংলা

এই কারাগারে রামচন্দ ও সাগনার মতো এমন ৪৫০ জন বন্দি আছে। যারা স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে শুধু স্যানগানার নয়, রাজস্থানে এমন ৩০টি উন্মুক্ত কারাগার রয়েছে। এসব কারাগারে যে কেউ চাইলে প্রবেশ করতে পারে। এখানে যারা হত্যা মামলার আসামী, তারা এখানে সুখে রয়েছে বলেই জানিয়েছে। হত্যা মামলার আসামীদের মতে, এই কারাগার হলো একটি উন্মুক্ত ক্ষেত। সেজন্য তারা এখানে সুখেই আছে।

আরও পড়ুনঃ উঠল বিজেপি বিরোধী সত্যাগ্রহ ধর্ণা, ধর্মতলার ধর্ণা প্রধানমন্ত্রী করতে পারবে মমতাকে

তবে এই উন্মুক্ত কারাগারে আসতে হলে মোট সাজার দুই-তৃতীয়াংশ সময় কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যেই কাটিয়ে আসতে হবে। অনেক সময় আবদ্ধ কারাগার থেকে এই উন্মুক্ত কারাগারে এসে অনেক আসামীই আর যেতে চায় না। তাদের অনেকেই এখানে স্থায়ী চাকরি করছে, বিয়ে করে সংসার করছে, ছেলে-মেয়েদের পার্শ্ববর্তী স্কুলে ভর্তি করিয়েছে। ফলে সাজা শেষ হলেও তারা এখানেই থাকতে চায়। যে কারণে সরকারকেই মাঝে মধ্যে তাদেরকে উচ্ছেদ করতে অভিযান চালাতে হয়।

আরও পড়ুনঃ সিবিআই জেরা থেকে পালাতে পারবেন না রাজীব কুমার, মমতা বললেন ‘নৈতিক জয়’

এই কারাগারে থাকা নারী বন্দিরা জানিয়েছে, এখানে থাকা পুরুষদের বিয়ে করা সহজ। কারণ বাইরের লোকরা তাদেরকে বুঝতে চায় না। তাছাড়া একবার কারাভোগ করার পর বাইরের লোকজন তাদেরকে কাজে নিতেও চায় না। আর পালাতেও কেউ চায় না। ফলে এখানকার পুরুষদের বিয়ে করে সুখে থাকা যায়।

আরও পড়ুনঃ সারদা কাণ্ডে পুলিশ কমিশনারকে সিবিআই জেরা কবে, তা নিয়েও লড়াই তুঙ্গে

অদ্ভুত জেল যেখান থেকে আর বাড়ি ফিরতে চায় না কয়েদিরা/The News বাংলা
অদ্ভুত জেল যেখান থেকে আর বাড়ি ফিরতে চায় না কয়েদিরা/The News বাংলা

এই উন্মুক্ত কারাগারের অধিবাসী সাধারণের মতোই জীবনযাপন করে। তারা মোটরসাইকেল, স্মার্টফোন, টিভি, ফ্রিজ কিনতে পারে এবং তাদের কোনো কয়েদির পোশাক পরতে হয় না। প্রত্যেকের জন্য সরকার থেকে সারিবদ্ধ ছোট ছোট ঘর বরাদ্ধ থাকলেও তাদের খাবার, জল কিছুই সরবরাহ করে না কারা কর্তৃপক্ষ। যে কারণে প্রতিদিন এখানকার বন্দিদের কাজের সন্ধানে বাইরে যেতে হয়।

আরও পড়ুনঃ মমতার নির্দেশে সিবিআই অফিসারদের আটক করে বাংলার আইপিএসরা বিপদে

তবে উন্মুক্ত কারাগার মানে যে কারা কর্তৃপক্ষ একেবারেই বন্দিদের খোঁজ যে রাখে না, সেটা কিন্তু নয়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বন্দিদের হাজিরা নিশ্চিত করা হয়। প্রত্যেকের দেওয়া নম্বর অনুযায়ী তাদের ডাকা হয়। এই সময়টাতেই কেবল মনে হতে পারে যে এটা একটি কারাগার। প্রতিদিন মাইক্রোফোনের মাধ্যমে ১ থেকে ৪৫০ পর্যন্ত ডাকা হয়। এ সময় মাঝে মাঝে ডাকা বন্ধ করে থেমে যাওয়া হয়। কেউ তার ঘরের ময়লা বাইরে ফেলে এসেছেন এমন কাউকে লক্ষ্য করে নিন্দা জানানো হয়।

আরও পড়ুনঃ রাজীব কুমারকে সিবিআই দফতরে হাজিরার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট

মনে হতে পারে এ কারাগার থেকে একবার বেরিয়ে আর ফিরে না আসলেও তো হয়। কিন্তু সেটা আসলে সম্ভব নয়। কারণ এতে ওই কয়েদিই বরং বিপদে পরবে। কারণ তারা ফিরে না আসলে তাদেরকে ধরে আবার আবদ্ধ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে। এর চেয়ে তারা মনে করে, সংসার পেতে উন্মুক্ত কারাগারে ভালোই আছে তারা। তাই সকালে বের হলেও সন্ধ্যায় ঠিকই হাজিরায় উপস্থিত থাকে এইসব বন্দিরা। আর এভাবেই চলতে থাকে তাদের কারাবন্দি জীবন-সংসার।

আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন