মাঠ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সর্ষে ক্ষেতে। পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগরে মতুয়াদের একটি সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সভার মাঠ নিয়ে শেষ অব্দি চলল ঝামেলা। পাওয়া গেল না ঠাকুরনগর মন্দির মাঠ। ঠিক হয়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার নামার কথা, সেই সর্ষে ক্ষেতের জমিতেই হবে সভা। আর নিজের সর্ষে খেতে সর্ষে নষ্ট করেও জমি দিলেন এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
আরও পড়ুনঃ জওহরলাল নেহেরুর গলায় মালা দিয়ে ৬০ বছর পরেও একঘরে ‘নেহেরুর বউ’
আগামী ২রা ফেব্রুয়ারী ঠাকুরনগরে মতুয়া সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজনীতি নয়, একেবারেই মতুয়াদের নিজস্ব অনুষ্ঠান এটি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সভার জন্য মাঠ পাওয়া গেল না। প্রধানমন্ত্রীর সভা যে মাঠে হওয়ার কথা ছিল, তা নাকি আগে থেকেই বুক করা রয়েছে। পুলিশ সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
২ ফেব্রুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুনগরে মন্দির লাগোয়া মাঠেই প্রথমে সভা করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু সেখানে ইতিমধ্যেই কীর্তনের জন্য মহকুমাশাসকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে রেখেছেন মমতাবালা ঠাকুর।
যে মাঠে মোদীর সভার আয়োজন করার কথা ছিল, সেখানে ওই দিনই সভা রয়েছে মতুয়াদের আরও একটি সংগঠনের। সেখানেই ভক্ত সমাগম হবে। মাঠ বুক করা রয়েছে ৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মাঠ বুক করা হয়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতাবালা ঠাকুরের নামে। ফলে ওই মাঠ প্রধানমন্ত্রীর সভার জন্য দেয়নি প্রশাসন।
আরও পড়ুনঃ সীমান্তের কাঁটাতার অগ্রাহ্য করে একদিনের জন্য এক হল ভারত বাংলাদেশ
জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, প্রতিবছরই ৩০ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি সেখানে কীর্তনের আসর বসে। তাঁর মতে, ঠাকুরনগরে অনেক মাঠ রয়েছে। সেখানে সভা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সভার প্রধান উদ্যোক্তা তথা মতুয়া মহাসংঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তন ঠাকুর প্রথমে বলেছিলেন, নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট জায়গাতেই প্রধানমন্ত্রীর সভা হবে। তৃণমূল পরিকল্পনা করেই প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে মাঠের দখল নিতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। ওইদিন বড়মা বীণাপানি দেবীর সঙ্গেও সাক্ষাতের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেলার মাঠে যে মোদীর সভা করা যাবে না তা বুঝতে পারেন তিনিও। আর এরপরেই প্রধানমন্ত্রীর জন্য এগিয়ে আসেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী প্রমথনাথ মন্ডল। নিজের জমি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী সভার জন্য। নিজের সদ্য বড় হওয়া সর্ষে নষ্ট হলেও জমিটি প্রধানমন্ত্রীর সভার জন্য দিয়েছেন তিনি। সভার ফলে তাঁর চাষ করা সব সর্ষে নষ্ট হয়ে যাবে। তবু শিক্ষকের উক্তি, “আমার সর্ষের চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঠাকুরনগরে আসা ও সভা করা অনেক দামি”।
আরও পড়ুনঃ মোদীর মাস্টারস্ট্রোকে দেশ পেতে পারে প্রথম মহিলা বাঙালি সিবিআই প্রধান
প্রশাসন প্রথমে তাঁর হেলিকপ্টার নামার জন্যও হেলিপ্যাডের অনুমতি দেয়নি। কিন্তু ঠাকুরনগরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী প্রমথনাথ মন্ডল তাঁর জমিতে হেলিপ্যাড বানাতে অনুমতি দেন। পরে সভার মাঠ না পাওয়ায় তিনি তাঁর পুরো জমিটাই ছেড়ে দিয়েছেন মোদীর সভার জন্য।
আরও পড়ুনঃ জয় হিন্দ, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের সোনার অক্ষরে লেখা ইতিহাস
তাঁর ১৯ বিঘা জমির সর্ষের চাষ নষ্ট করে, কাঁচা সর্ষে গাছগুলোকে নষ্ট করে নিজের ক্ষতি স্বীকার করে স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন এই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ঠাকুরনগরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবতরণের জন্য হেলিপ্যাডের নির্মাণ করতে ও পরে পুরো সভার জন্যই ছেড়ে দিয়েছেন জমি।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মহাশয়কে এই ক্ষতি স্বীকারের কারণ জিজ্ঞেস করায় উত্তরে উনি বললেন, “আমার ১৯ বিঘা জমির সর্ষের ফলন কি মাননীয় মোদীজির ঠাকুরনগরে আসার চেয়ে বেশি দামী? মানুষের বিকাশের চেয়েও বেশি দামী”?
বিজেপির তরফ থেকে কুর্নিশ জানান হয়েছে এই শিক্ষক মহাশয়কে। বিজেপির তরফ থেকে বলা হয়েছে,” শ্রী প্রমথনাথ মন্ডলের মতো এরকম একজন শিক্ষককে এবং তাঁর মতো মানুষদের যারা দেশের এবং দশের কাজে, সমাজের মঙ্গলের কাজে সদা জাগ্রত, তাদের প্রণাম”। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এত বিরোধিতা, অপপ্রচার সত্ত্বেও মোদীর সভা হচ্ছে বলেই জানান হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মা দুর্গার সাক্ষাৎ অবতার, পোস্টার কংগ্রেসের
রবিবার দুপুরে এই মাঠ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির নির্বাচনী সংযোজক মুকুল রায়। তিনি বলেন, ‘ঠাকুরনগরে মতুয়া সঙ্ঘের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী আসছেন। মতুয়া সঙ্ঘের মেলার মাঠে সভা হবে, এটাই কাঙ্খিত ছিল। বীনাপাণি দেবী সই করে অনুমতিও দিয়েছিলেন। সেই চিঠি আমি দেখেওছিলাম। কিন্তু তারপরেও জোর করে ঝঞ্ঝাট পাকানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে অসুবিধা নেই। পাশের মাঠে সভা হবে’।
আরও পড়ুনঃ কালামের নামে ছাত্রদের তৈরি হালকা উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়ে নজির ভারতের
মুকুল রায় এ দিন জানান, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু মতুয়া ধর্মসম্মেলনে যোগ দিতে আসছেন, তাই বিজেপি কর্মীরা ওই সভায় গেলেও দলীয় পতাকা নিয়ে যাবেন না। কোথাও বিজেপি-র পতাকা দেখা যাবে না। তবে চাষের জমিকে কয়েকদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সভার উপযুক্ত করারাটাও এখন শান্তুনু ঠাকুরদের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
তবে এযাত্রায় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গ বিজেপির মান রক্ষা করলেন বাংলার এক শিক্ষক। প্রধানমন্ত্রীকে পা রাখার জমি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, রাজনীতির ঊর্ধে দেশ, বলছেন মোদী ভক্তরা।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।