পিকনিক আর বিয়ের লম্বা মরসুম৷ চিকেন, মাটন সহযোগে ভুরিভোজ৷ কিন্তু যে চিকেনটা খাচ্ছেন তা ক্ষতিকর নয় তো? চিকেন নিয়েও চিন্তা করার সময় এসে গেছে৷ সম্প্রতি একটি গোপন রিপোর্টে এমন মারাত্মক তথ্যই উঠে এল চিকেন বা মুরগীর মাংস নিয়ে৷
মারাত্মক অসুস্থ রোগীদের যে রোগীদের যে ওষুধ খাওয়ানোর কথা তা খাওয়ানো হচ্ছে মুরগীদের৷ ভাবুন একবার৷ চিন্তা বাড়ল চিকেন নিয়েও৷ মুরগীকে খাওয়ানো হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে কলিসটিন ওষুধ৷ যে কলিসটিন ওষুধ সাধারনতঃ খাওয়ানো হয় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের৷ ভয়ংকর রিপোর্ট বের করেছে The Bureau of Investigative Journalism৷
কি হয় কলিসটিন ওষুধ শরীরে গেলে?
চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে কলিসটিন একটি শক্তিশালি অ্যান্টিবায়োটিক৷ কলিসটিন ওষুধ শরীরে গেলে তা যে কোন ড্রাগ প্রতিরোধের কাজ করে৷ অর্থাৎ কলিসটিন ওষুধ শরীরে গেলে আর কোন ওষুধই আপনার শরীরে কাজ করবে না৷ এই কলিসটিন ওষুধটাই ড্রাগ প্রতিরোধকের কাজ করবে৷
হায়দরাবাদের রঙ্গারেড্ডি জেলার বেশ কয়েকটি পোল্ট্রি ফার্মে অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে চিকেনদের কলিসটিন ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে৷ যে ওষুধ মরণাপন্ন রোগীদের শেষ আশা বলে খাওয়ান হয়৷
কলিসটিন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেয়ে মুরগী সুস্থ থাকে, ওজন বাড়ে তাড়াতাড়ি৷ ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন জানিয়েছে কলিসটিন ওষুধ মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ৷ WHO এর তরফ থেকে এই কলিসটিন ওষুধ মানুষ ছাড়া কোনরকম প্রাণীকে খাওয়ানোর ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা আছে৷ আর আইন ভেঙে সেই গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ খাওয়ান হচ্ছে মুরগীকে৷
চিকেনের মাধ্যমে এই ওষুধ মানুষের শরীরে গেলে শরীরের মধ্যে ড্রাগ প্রতিরোধক ব্যাকটেরিয়া তৈরি হবে৷ তারপর, আর কোন অ্যান্টি-বায়োটিক ওষুধেই কোন কাজ হবে না৷ ফলে ওষুধ খেয়ে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাই হারিয়ে যাবে মানুষের৷ ভয়ংকর এক বিপদের সামনে হাজির ভারতবাসী৷
রিপোর্ট বলছে, আমেরিকা থেকে হাজার হাজার টন কলিসটিন ওষুধ ভিয়েতনাম, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়াতে পাঠানো হয়৷ ২০১৬ সালে কয়েক লক্ষ টন কলিসটিন ওষুধ এসেছে ভারতে৷ তার পুরোটাই ব্যবহার করা হচ্ছে পশু পাখীদের শরীরেই৷ ভারতের বেশ কিছু কোম্পানী প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপণও করে কলিসটিন ওষুধের৷ যেটা অত্যন্তঃ বিপদজনক৷
ভারতে দুটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী এই কলিসটিন ড্রাগ উৎপাদন করে৷ কিন্তু ভারত প্রায় ১৫০ টন এই ওষুধ বাইরের দেশ থেকে নিয়ে আসে বলেই রিপোর্টে প্রকাশ৷ ২০১৬ তে এই আমদানীর পরিমাণ হাজার টন ছুঁয়েছে বলেই রিপোর্টে প্রকাশ।
ভেঙ্কি কোম্পানী এই কলিসটিন ওষুধের বিজ্ঞাপন করে৷ তারাই আবার কেএফসি ও ম্যাকডোনাল্ডে মুরগীর মাংস সাপ্লাই করে৷ The Bureau of Investigative Journalism এর রিপোর্টে দাবী করা হয়েছে যে, তারা বিনা প্রেসক্রিপশনে ভেঙ্কি স্টোর থেকে কলিসটিন ওষুধ নিয়ে এসেছে৷ পাশাপাশি তারা একটি পোলট্রি খাবারের দোকান থেকেও বিনা প্রেসক্রিপশনে ভেঙ্কির স্ট্যাম্প মারা প্যাকেটে কলিসটিন ওষুধ পেয়েছে৷
যদিও ভেঙ্কির তরফ থেকে দাবী করা হয়েছে, কলিসটিন ওষুধ বিক্রী করে তারা কোন অপরাধ করে নি বা আইন ভাঙে নি৷ তাদের তরফ থেকে এও দাবী করা হয়েছে তারা যে চিকেন ম্যাকডোনাল্ড, পিজ্জাহাট, ডমিনোস বা কেএফসিতে বেচে তাতে কলিসটিন ব্যবহার করা হয় না৷
ড্রাগ প্রতিরোধক ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রতিবছর বিশ্বে ৭ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়৷ ২০৫০ সালের মধ্যে সেই মৃত্যুর হার গিয়ে পৌঁছাবে প্রায় ১ কোটিতে৷ যার মধ্যে এশিয়া মহাদেশেই প্রায় ৫০ লাখ মৃত্যু হবে প্রতিবছর৷
রিপোর্টে বলছে, কলিসটিন অ্যান্টিবায়োটিক শুধু মুরগীর নয়, ছড়িয়ে পরছে পোল্ট্রি ফার্মে কাজ করা মানুষের শরীরেও৷ চিকেন খাবারের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ছে মানুষ শরীরে৷ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের মানুষ শরীরে প্রতিরোধক সৃষ্টি করা নিয়ে গবেষণা করা টিমোথি ওয়ালশ জানিয়েছেন, এই ওষুধ মরণাপন্ন রোগীদের শরীরে ব্যবহার করা হয়৷ এই ওষুধ কোনরকমেই মুরগীর বা অন্য কোন পশুপাখীর শরীরে ব্যবহার করা উচিত নয়৷
উন্নতশীল দেশগুলিতে ইতিমধ্যেই কলিসটিন জাতীয় ড্রাগগুলিকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ কিন্তু সেই ওষুধই পশু পাখীর খাদ্য হিসাবে ভারত সহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে রপ্তানী করে দেওয়া হচ্ছে৷ তাতে ক্ষতির সামনে পড়ছেন ভারতের মত গরীব দেশের কোটি কোটি মানুষ৷ তাই এবার চিকেনেও যে চিন্তা বাড়ল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷