The News বাংলা, ঢাকা: রবিবার বাংলাদেশে ভোট। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে চলছে শেষ মুহূর্তের ভোট প্রস্তুতি। লড়াইটা সেই বর্তমানে দেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোট বনাম বিরোধী বিএনপির জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোট। শেখ হাসিনা বনাম খালেদা জিয়া, লড়াইটা গত তিন দশক ধরে একই আছে বাংলাদেশে। তবে বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া এখন জেলে আছেন।
আরও পড়ুন: গোটা বিশ্বের নিষেধ উপেক্ষা করে নতুন করে সমুদ্রে তিমি শিকার
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনসভা এক কক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ। জাতীয় সংসদ এর জন্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ৩০০ জন সংসদ সদস্যকে নির্বাচিত করা হয়। এছাড়াও ৫০ জন মহিলা সংসদ সদস্য সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে মনোনীত হন।
নির্বাচিত রাজনৈতিক দলের প্রধানমন্ত্রীই হবেন সরকার প্রধান। রাষ্ট্রের প্রধান হলেন একজন রাষ্ট্রপতি যিনি জাতীয় সংসদ কর্তৃক নির্বাচিত হন। ভারতের মতই, বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির পদ হলো আনুষ্ঠানিকতা, প্রকৃতপক্ষে সকল ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে সরকার প্রধানের হাতেই।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পের আঘাতে আগ্নেয়গিরিতে বিস্ফোরণ, পুড়ছে শহর
১৯৯১ সালের পর থেকে বাংলাদেশে দুই রাজনৈতিক দল কেন্দ্রিক নির্বাচন শুরু হয়েছে অর্থাৎ দুটি রাজনৈতিক দলই দেশের সকল প্রকার নির্বাচনের মূলে থাকে এবং বাকি দলগুলোর জন্য এককভাবে নির্বাচন করে সরকার গঠন করা অনেক কঠিন।
বাংলাদেশে রবিবার ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে। এবারের নির্বাচন প্রচারের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে হিংসার ঘটনার অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুনঃ ১৪ বছর আগের স্মৃতি ফিরিয়ে সুনামিতে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
বিএনপি এবং তাদের নির্বাচনী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সর্বশেষ অভিযোগ করেছে যে, তাদের প্রার্থী বা সমর্থকদের ওপর প্রায় দুশো সহিংস হামলার অভিযোগ বা উদ্বেগকে নির্বাচন কমিশন গুরুত্বই দেয়নি। কোন ব্যবস্থাও নিতে পারে নি।
আরও পড়ুনঃ ‘পেলেই ছিঁড়ে খাবে’, কঠিন লড়াই করে বেঁচে ইরাকের নারীরা
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিএনপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা অভিযোগ করছে যে ৫১টি জেলার ৮৮টি আসনে তাদের নেতাকর্মীদের ওপরই হামলা হয়েছে। এসব ঘটনার কারণে অনেক ভোটারই জানান যে, নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চয়তা না পেলে তারা ভোট দিতে যাবেন না।
আরও পড়ুন: বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্পের বেশ কিছু অজানা কাহিনী
কী ধরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে?
এই নির্বাচন যেন অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য দেশের তিনশো নির্বাচনী আসনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা কী হবে, সেই বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাসবাদীদের অত্যাচারে দেশ ছাড়ছে মানুষ
৩০০টি নির্বাচনী আসনকে মূলত মেট্রোপলিটন এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে এবং বিশেষ এলাকা (পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওড় ইত্যাদি) এই তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ পশ্চিম জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী বলে স্বীকৃতি অস্ট্রেলিয়ার
এই প্রত্যেকটি এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোকে আবার দু্ই ভাগে ভাগ করা হয়েছে: সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ। এলাকাভেদে মোতায়েন করা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা একেক রকম, বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুনঃ EXCLUSIVE: কলকাতা থেকে পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের টাকা যাচ্ছে জঙ্গিদের হাতে
দীর্ঘ ১০ বছর পর বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৫ই জানুয়ারি ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনটি নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে। তাই ১০ বছর পর ফের বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ জেল হতে পারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।
আরও পড়ুন: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ‘আজাদ লড়াই’কে সম্মান নরেন্দ্র মোদীর
রবিবারই ভোট শেষ হয়ে যাবার পর গণনা শুরু হয়ে যাবে। আগামীকালই সন্ধ্যের মধ্যে জানা যাবে বাংলাদেশে সরকার গড়বে কে। সবটাই নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভোটারদের উপর।
আরও পড়ুন: জেলেই সুমন চট্টোপাধ্যায়, সিবিআই নজরে বাংলার আরও তিন সাংবাদিক
এখানে প্রশ্নটা হচ্ছে, একজন গড়পড়তা বাংলাদেশি কী ভাবছেন? তারা এটা মনে করছেন কি যে, বর্তমান সরকার ১০ বছর সময় পেয়েছে, এখন পরিবর্তন দরকার, নাকি তারা মনে করছেন, দলটি বেশ ভালোই চালাচ্ছে। এর উপরই নির্ভর করবে ভোটের ফলাফল।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির পলিটিক্স অ্যান্ড গভর্নমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. আলি রিয়াজ বলেছেন, “দুটি কারণে বাংলাদেশের এবারের নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম কারণ হচ্ছে, একনায়কতন্ত্রের অভিমুখ থেকে দেশের গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়ার সময় এটা। দেশে গণতান্ত্রিক পরিসর ক্রমেই সংকুচিত করে বিরোধীদল দমন, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ এবং সাধারণভাবেই ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছে। আরেকটি কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের পতনের ইতিহাস”।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়বে সল্টলেক নিউটাউনের বাড়িঘর
“বাংলাদেশে কখনো এমন হয়নি যে, ক্ষমতাসীন দল পুনরায় নির্বাচিত হয়েছে। ২০১৪ কেবল এর ব্যতিক্রম। তবে বিএনপি বয়কট করায় ওটা কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছিল না। অতএব বাংলাদেশিরা পরিবর্তন চায় নাকি ধারাবাহিকতা সেটা তাদেরই ঠিক করতে হবে”, মন্তব্য আলি রিয়াজের।
আরও পড়ুন: হাজার হাজার রুটি নষ্ট করে কৃষক আন্দোলনে ইতিহাস বাংলার বামেদের
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “শেখ হাসিনার সব কর্মসূচির ইতিবাচক প্রভাবই পড়া উচিৎ নির্বাচনে। কিন্তু, এন্টি ইনকামবেন্সি অর্থাৎ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ, বিশেষ করে তার দলের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি তার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু, পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের বেলায় তার বিরোধী পক্ষ বিএনপির ভাবমূর্তি আরও বেশি খারাপ”।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, “বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে, সাংগঠনিকভাবে তারা একেবারেই ছত্রভঙ্গ। একটি নির্বাচনমুখী দল হয়েও বিএনপি যে ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করেছিল, সেটি ছিল তাদের জন্য আত্মহত্যার শামিল। তাদের সংগঠন যে কেবল শীতনিদ্রায় চলে গিয়েছে তাই নয়, অনেকেই দল ছেড়েছেন এবং সংগঠন অকার্যকর হয়ে পড়েছে”।
আরও পড়ুন: EXCLUSIVE: ভোটের আগে বাংলার বিখ্যাত সাংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ‘সরকারি’ সন্ধি মমতার
এখন দেখার কথা এটাই, বাংলাদেশের মানুষ কি সিদ্ধান্ত নেন। রবিবার সন্ধ্যের মধ্যেই জানা যাবে কি হতে চলেছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ভবিষ্যত। বাংলাদেশের পাশাপাশি গোটা ভারতও তাকিয়ে সেই দিকেই। ভারত সরকারও তাকিয়ে বাংলাদেশের ভোটের ফলের দিকে।