‘পেলেই ছিঁড়ে খাবে’, কঠিন লড়াই করে বেঁচে ইরাকের নারীরা

907
কঠিন লড়াই করে বেঁচে ইরাকের নারীরা/The News বাংলা
কঠিন লড়াই করে বেঁচে ইরাকের নারীরা/The News বাংলা

The News বাংলা, কলকাতাঃ কঠিন লড়াই করে বেঁচে আছেন ইরাকের নারীরা। ইরাকে নারীদের জীবন এমনিতেই বেশ কঠিন। জাতিসংঘ বলছে, দেশের মোট নারীদের প্রায় অর্ধেক কোন না কোনভাবে পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের হিংসা ও লালসার শিকার হয়েছেন। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক অভিযানের পর ইরাকে নারী পাচারও বেড়েছে। কিন্তু সরকার এসব নারীকে রক্ষা করতে পারছে না।

ইয়ানার মোহাম্মদ হলেন এমনি এক নারী যিনি গত ১৫ বছর ধরে হিংসার শিকার নারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে আসছেন। ইয়ানার বলছেন, ‘আমরা যেসব নারীকে আশ্রয় দিই তাঁদের মধ্যে অনেককেই পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে’।

কঠিন লড়াই করে বেঁচে ইরাকের নারীরা/The News বাংলা
কঠিন লড়াই করে বেঁচে ইরাকের নারীরা/The News বাংলা

ইয়ানার মোহাম্মদ বলেন, ‘নারী পাচারকারী কিংবা যৌনকর্মী হিসেবে তাঁদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। অনেকেই পরিবারের ভেতরে যৌন হেনস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন। আমরা এঁদের রক্ষা করার চেষ্টা করছি। আর সেকারণেই এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকেও গোপন রাখতে হচ্ছে’।

আরও পড়ুনঃ খিদের জ্বালায় কান্না ভুলেছে ৫০ লাখ শিশু

তিনি আরও বলেন, ‘আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকে অবশ্যই গোপন রাখতে হবে। তার কারণ, যারা নারীদের ওপর নির্যাতন চালায়, তারা প্রায়ই তাদের অনুসরণ করার চেষ্টা চালায়। তারা এঁদের অপহরণ করতে চায়, হত্যা করতে চায়। আর অন্যদিকে সরকারের হাত থেকেও এঁদের রক্ষা করতে হবে। সরকার বলে আমাদের এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলো অবৈধ’।

আরও পড়ুনঃ ‘যাকে পছন্দ তার সব ইচ্ছে পূরণ’ কাকে ভালোবাসার বার্তা দিলেন ট্রাম্প

বাগদাদে এই ধরনের গোপন নারী আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে চারটি। এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করেন যেসব নারী, তাঁরা নিজেরাও একসময় হিংসার শিকার হয়েছেন। সাত বছর আগে বাসমাকে তাঁর পরিবারের এক সদস্য খুন করতে চেয়েছিল। তার বাবা এবং তার গোত্রের সদস্যরা এখনও তাঁর খোঁজ করছে। কিন্তু তারপরও তিনি এই গোপন আশ্রয় কেন্দ্রটি পরিচালনা করছেন।

আরও পড়ুনঃ জাপান উপকূলের কাছে দুটি মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস

কিন্তু এখানে তাঁর নিজের কিংবা তাঁর সাথে থাকছেন যেসব নারী, তাঁদের নিরাপত্তা নিয়েও তিনি চিন্তিত। তিনি বারবার বলেন, ‘অবশ্যই আমি চিন্তিত। আমাদের সবার অবস্থা একই রকম। আর সে কারণেই একে অন্যকে সাহায্য করা বেশি দরকার। কারণ আমি যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছি, এখন তারাও সেই একই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে’।

কঠিন লড়াই করে বেঁচে ইরাকের নারীরা/The News বাংলা
কঠিন লড়াই করে বেঁচে ইরাকের নারীরা/The News বাংলা

বাসমা আরও বলেন, ‘আমার পরিবার যদি আমাকে ধরতে পারে, তাহলে তারা আমাকে মেরে ফেলবে। এদেরও একই অবস্থা। পুলিশের কাছ থেকেও আমি ভয়ের মধ্যে আছি। যদি পুলিশ এদের ধরতে পারে, তাহলে তারা আইডি কার্ড চাইবে। কিন্তু এই নারীরা অনেকেই সেই কার্ড ছাড়াই বাড়ি থেকে পালিয়েছে’।

এসব আশ্রয় কেন্দ্রে মোট ৫২ জন বাসিন্দা রয়েছেন। কিন্তু ইরাকে যেসব নারী মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, এই সংখ্যা তার তুলনায় খুবই নগণ্য। পঁচিশ বছর-বয়সী সালওয়া জানান, তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন ছয় বছর আগে। নিরাপত্তার স্বার্থে সালওয়ার নামধাম গোপন রাখতে হচ্ছে। চার বছর বয়সে সালওয়ার মা মারা যায়। তারপর থেকে তিনি দুটি বাড়িতে গৃহ পরিচারিকার কাজ করতেন।

আরও পড়ুনঃ সপ্তশৃঙ্গর পর সপ্ত আগ্নেয়গিরি, বিশ্বরেকর্ডের দোরগোড়ায় বাঙালি

সালওয়া জানাছেন, তাকে নিয়মিতভাবে মারধর করতো। একবার তাদের বাসায় এক অতিথি ‘মেহমান’ এসেছিল। সে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমি লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করতাম। ওই পরিবারটি যখন বিদেশে চলে গেল, তখন আমি আরেকটি পরিবারে কাজ শুরু করি। কিন্তু আমার জীবনে কোন পরিবর্তন এলো না। ওই পরিবারের কর্তাও আমাকে ধর্ষণ করেছিল’।

কিন্তু সালওয়া কেন সেখান থেকে পালিয়ে গেলেন না? তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি আমি পালানোর কথা মোটেই ভাবছিলাম না। আমি চেয়েছিলাম আত্মহত্যা করতে। জীবনটা এমন এক পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল যে পশুর জীবন আর সহ্য হচ্ছিল না’।

কঠিন লড়াই করে বেঁচে ইরাকের নারীরা/The News বাংলা
কঠিন লড়াই করে বেঁচে ইরাকের নারীরা/The News বাংলা

গত পাঁচ বছর ধরে ‘অর্গানাইজেশন ফর দ্য উইমেন্স ফ্রিডম ইন ইরাক’ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় এক হাজার নারীকে নিরাপদ আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করেছে। সালওয়া এখন বিবাহিত। তার দুটি বাচ্চা রয়েছে। যে শৈশবের স্বাদ তিনি নিজে পাননি, তাঁর আশা তার সন্তানরা সেই জীবন, সেই শিক্ষার সুযোগ পাবে।

তার জীবন এখন কতখানি বদলে গেছে জানতে চাইলে সালওয়ার মুখ হাসিতে ভরে যায়। তিনি বলেন, ‘সেই পুরনো সালওয়া এখন আর নেই। আমি এখন নতুন সালওয়া। আমি এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। আমি এখন নিজেকে রক্ষা করতে পারি। এখন আমাকে আর চুপ করানো যাবে না’।

বাসমা, সালওয়া কিংবা অন্যান্য যারা ইরাকের এসব আশ্রয়কেন্দ্রে দিনযাপন করছেন, তাঁরা জানেন কতটা ঝুঁকির মধ্যে তাঁরা রয়েছেন। বেঁচে থাকার জন্য তাঁদের এই লড়াই আসলে প্রতিদিনকার লড়াই।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন