The News বাংলা, বুলন্দশহর: যোগীর রাজ্যে যোগীর পুলিশের খাতায় এবার যোগীর দলের নেতাদেরই নাম। উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে গরু নিয়ে খুন ও ঝামেলায় উঠে এল এক বিজেপি নেতার নাম। উঠে এসেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ভিএইচপি ও বজরং দলের বেশ কয়েকজন নেতার নাম।
আরও পড়ুনঃ জনগণকে ‘গাধা’ বানিয়ে ‘শিক্ষাগুরু নেহেরু’র যোগ্য ছাত্র সব রাজনীতিবিদ
গরু নিয়ে খুন ও হিংসায় যোগীর রাজ্য পুলিসের খাতায় উঠে এল বিজেপি, বজরং দল ও ভিএইচপি সদস্যদের নাম। সোমবারের তান্ডবের ঘটনায় পুলিশের এফআইআর-এ গেরুয়া বাহিনীর নেতাদেরই নাম। এদের প্রত্যেককেই খুঁজছে পুলিশ।
উঠে এসেছে বজরং দলের জেলা প্রধান যোগেশ রাজ এর নাম। এছাড়াও ভিএইচপি র উপেন্দ্র রাঘব ও বিজেপি যুব মোর্চার শিখর আগারওয়াল এর নামেও এফআইআর করা হয়েছে। আর এটাই চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে কেন্দ্রের শাসক দলকে। যোগীর রাজ্যে যোগীর পুলিশ এর এফআইআর-এই যোগীর দলের নেতাদের নাম।
আরও পড়ুন: ‘ভগবান’ সরাসরি টাকা নিয়ে হাজির ভক্তের সমস্যা মেটাতে
উত্তরপ্রদেশে গোরক্ষকদের তাণ্ডব এর তদন্ত করবে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম। বেআইনিভাবে গোহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সোমবার জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুলিশ ফাঁড়ি। পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষে মৃত্যু হয় পুলিশ ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিংহের। পুলিশের গুলিতেও মৃত্যু হয় সুমিত (২০) নামে এক স্থানীয় তরুণের। জেলাশাসক অনুজ কুমার ঝা গুলি চালানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালিয়েছে।
সোমবার, বুলন্দশহরের মৌ-এর বাসিন্দারা গ্রামের পাশে জঙ্গলে গরু ও বাছুরের দেহাংশ পড়ে থাকতে দেখেন। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে সেই দেহাংশ নিয়ে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রামবাসীদের একাংশ এবং একাধিক হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা।
অবরোধ করা হয় বুলন্দশহর-গড় হাইওয়ে। অবরোধ তুলতে গেলে হিংসা ছড়ায় বলে অভিযোগ। শুরু হয় ইটবৃষ্টি। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের গাড়িতে। তিন ঘণ্টা ধরে চলে তাণ্ডব। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এর মধ্যেই গুলি লেগে মারা যায় পুলিশ ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিংহ ও এক বিক্ষোভকারী সুমিত।
আরও পড়ুন: ‘তিন মাস বিয়ে বন্ধ’ তুঘলকি নির্দেশে বিতর্কে যোগী সরকার
মীরাট জোনের এডিজি প্রশান্ত কুমার জানিয়েছেন স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট গড়া হয়েছে, তারাই তদন্ত করবে এই ঘটনার। এছাড়াও এডিজি (গোয়েন্দা) ও ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি দু’দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছেন। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তদন্ত রিপোর্ট পেলেই মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য এবং দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে যোগী সরকার। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, প্রশাসন ছেড়ে এখন পাঁচরাজ্যে নির্বাচনের প্রচার নিয়েই বেশি ব্যস্ত বিজেপির হিন্দুত্বের পোস্টার বয় যোগী। বিরোধীদের কটাক্ষ, যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী ভোটের প্রচারে ভিনরাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সেখানে তো আইনশৃঙ্খলার এই হালই হবে!
আরও পড়ুন: Exclusive: ভারতবাসীকে ‘জ্ঞান’ দেওয়া প্রিয়াঙ্কা নিজে কি করলেন
২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এই গো-রক্ষকদের তাণ্ডবেই হিংসা ছড়িয়েছিল উত্তরপ্রদেশেরই মুজাফ্ফরনগরে। বিজেপির বিরুদ্ধে উঠেছিল মেরুকরণের রাজনীতির অভিযোগ। পরে লোকসভা থেকে বিধানসভা ভোটে বিপুল জয় পায় বিজেপি।
কিন্তু, সম্প্রতি উপনির্বাচনে যোগী আদিত্যনাথের লোকসভা কেন্দ্র গোরক্ষপুর এবং উপ মুখ্যমন্ত্রী কেশবচন্দ্র মৌর্যর লোকসভা কেন্দ্র ফুলপুরেও হেরে যায় বিজেপি। তাই অনেকেরই প্রশ্ন, ২০১৯-এর লোকসভার আগে ফের কি সেই গোরক্ষার নামে মেরুকরণের রাজনীতিতেই ফিরছে গেরুয়া শিবির?
উত্তরপ্রদেশের এই পরিস্থিতির নিন্দা করে সরব হয়েছে সব ক’টি বিরোধী দল। তাদের বক্তব্য, একের পর এক জায়গার নাম পাল্টে হিন্দুত্বের জিগির তুলছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। এতে ধর্মীয় উন্মাদনা বাড়ছে। পাশাপাশি, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ক্রমশ ভেঙে পড়ছে। খুন-ধর্ষণ-ধর্মীয় গোলমালের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
এখন দেখার বিষয় এটাই যে, যোগীর প্রশাসন নিজের দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ও হিন্দু সংগঠনের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে আদৌ কোন ব্যবস্থা নিতে পারে কিনা।