আজমল কাসভের একে ৪৭ এর বুলেটের সামনে দুই নার্স

1134
Mumbai Attack Nurse Story/The News বাংলা
Mumbai Attack Nurse Story/The News বাংলা

অঞ্জলি কুলঠে ও মাধুরী রাহাতে। নাম দুটো কারোর জানা নেই। না থাকারই কথা। কারন, আমরা কোনদিনই যোগ্য মানুষদের সম্মান দিতে পারি নি। অঞ্জলি কুলঠে ও মাধুরী রাহাতে হলেন সেই ১৫ জন নার্সের অন্যতম, যারা ১৪ বছর আগে ১৫০ জন রোগীর প্রাণ বাঁচিয়ে ছিলেন আজমল কাসভের একে-৪৭ এর বুলেট থেকে।

Mumbai Attack Nurse Story/The News বাংলা
Mumbai Attack Nurse Story/The News বাংলা

২৬/১১/২০০৮, দিনটা তাঁরা কোনদিন ভুলবেন না। সেদিন তাঁদের নাইট ডিউটি ছিল। মুম্বাই এর কামা হাসপাতালের এন্টিন্যাটাল ওয়ার্ডে। ডিউটি করতে করতে হঠাৎ তাঁরা যেন কিসের শব্দ পেলেন। ভয়ংকর শব্দ। ফটফট ফটফট শব্দ। গুলির শব্দ। সিনেমার মত নয়। ছুটে গেলেন কাঁচের জানালায়।

আরও পড়ুনঃ ‘কাসভের বেটি’, জঙ্গি চিনিয়ে দেবার ‘পুরষ্কার’ পাচ্ছে দেবিকা

দেখলেন, তাঁদের হাসপাতালের দুই রক্ষীর রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। আর লাফিয়ে হাসপাতালে ঢুকছে দুই জ’ঙ্গি। পরে যাদের তাঁরা সনাক্ত করেছিলেন আজমল কাসভ এবং আবু ইসমাইল হিসাবে। ভয়ে তাঁরা ছুটে গিয়ে বন্ধ করে দেন ওয়ার্ডের দুটো দরজা। কারণ তখন তাঁদের দায়িত্বে ১৫০ জন রোগী, আর তার মধ্যে ২০ জন মেয়ে যারা প্রত্যেকে মা হওয়ার অপেক্ষায়।

Mumbai Attack Nurse Story/The News বাংলা
Mumbai Attack Nurse Story/The News বাংলা

জঙ্গি দুজন একের পর এক ফ্লোর পার করছে। গুলি চালাচ্ছে। গ্রেনেড ছুঁড়ছে। হাড়হিম করা পরিস্থিতি। কিন্তু তাঁরা জানেন, যে তাঁদের ভয় পেলে চলবে না। যে নার্সের পোশাক তাঁরা পরে আছেন,তাতে জড়িয়ে আছে প্রত্যেক মা এবং তাদের গর্ভস্থ সন্তানকে রক্ষার দায়িত্ব। তাঁরা ঠিক করে নিলে্‌ তাঁদের বাঁচতে হবে আর সবাইকে বাঁচতেই হবে।

আরও পড়ুনঃ একে ৪৭ এর গুলি বুকে নিয়েও কাসভকে ছাড়েন নি তুকারাম

নার্সরা প্রথমেই সকল মেয়েদের নিয়ে গেলেন, ওয়ার্ডের একেবারে কোণায় প্যান্ট্রি ঘরে। তারপর ডাক্তারদের সতর্ক করলেন এবং খুব গোপনে ফোন করলেন পুলিশকে। প্রত্যেকটা মুহূর্তে স’ন্ত্রাসীদের অস্ত্র থেকে গুলি নিক্ষেপে কেঁপে কেঁপে উঠছে গোটা হাসপাতাল। তাঁদের সহকর্মী এক আয়ার গায়ে লাগল গুলি, জানালা ভেদ করে।

Mumbai Attack Nurse Story/The News বাংলা
Mumbai Attack Nurse Story/The News বাংলা

রক্তাক্ত কলিগকে শুশ্রূষা করছেন। ওই ভয়াল অবস্থায় এক মেয়ের গর্ভযন্ত্রনা উঠলে তাকে ধরে ধরে লেবার রুমে নিয়ে গেছেন। কারণ প্রায় সব আলো নেভানো ছিল। বাঁচার জন্য। সন্ত্রা’সীদের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য। চিকিৎসক এবং সহকর্মীদের সহায়তায় নতুন প্রাণকে পৃথিবীর আলো দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। এক ফ্লোর থেকে আর এক ফ্লোরে গেছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। আজমল কাসভ এবং আবু ইসমাইল এর সামনে পরে গেলেই, বিদায় নিতে হবে পৃথিবী থেকে।

চারপাশে সন্ত্রাসের আঁধার, আর তার ভেতরে নতুন প্রাণের আগমন। মাত্র একটা টিউবলাইটের আলোয়। একমাত্র তাঁদের সাহসের জন্য সম্ভব হয়েছিল পুরো ব্যাপারটা। তাঁদের ডিউটি ড্রেসই হয়ে উঠেছিল তার শক্তির উৎস। দুজনের নেতৃত্বে ওই ১৫ জন নার্সই প্রাণ বাঁচিয়েছেন ১৫০ জন মানুষের।

Mumbai Attack Nurse Story/The News বাংলা
Mumbai Attack Nurse Story/The News বাংলা

এরপরে পুলিশ এসেছে। আঁধার রাত কেটেছে। অঞ্জলি কুলঠে নিজে গিয়ে আজমল কাসভকে সনাক্ত করেছেন। পুলিশকর্মীরা তাকে অভিবাদন জানিয়েছেন। আজমল কাসভের ফাঁসিও হয়েছে। ওইদিন রাতে এক ভয়ংকর অবস্থায় বিন্দুমাত্র মনের জোর না হারিয়ে অঞ্জলি কুলঠে ও তাঁর নার্স বাহিনী, এতজন মা এবং তাদের গর্ভস্থ সন্তানদের সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। সেই অসামান্য বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার জন্য তাঁদের কুর্নিশ জানাতে পারে নি কেউই।

Image Source: Google

কারণ, তাদের এই অসামান্য লড়াইকে সামনে আনা হয় নি। প্রসংসার আলো সবটাই নিয়ে গেছেন ডাক্তাররা। তাঁদের সাহস দেখে মাইনে বাড়িয়ে দেবার ঘোষণা করা হয়েছিল। সেটাও ঠিকমত হয় নি।

আজ ২৬/১১ এর চোদ্দ বছর অতিক্রান্ত। আমরা আজ সেইদিনের লড়াকু সাহসী শহিদদের কথা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি। যারা দেশমাতাকে রক্ষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। তাদের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিপরীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এতজন মানুষকে সন্তানসম আগলে রেখে নতুন জীবনের আলো আনলেন যে অসমসাহসি নার্সরা, তাঁরাও নিজ অবদানে সমানভাবে উজ্জ্বল।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন