কৃষ্ণা দাস, The News বাংলা,শিলিগুড়িঃ ফুটফুটে ৫ টি শিশু। কিন্তু, মায়ের পেট থেকে বেরিয়েই তারা অনাথ। কারোরই বাবা-মায়ের কোন খোঁজ নেই। নিজেদের পাপ ঢাকতে এই ৫ শিশুকে ত্যাগ করেছে তাদের বাবা-মায়েরা। আর তাদের নিয়েই সমস্যায় পড়েছে শিলিগুড়ি মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুনঃ সাসপেন্ড ১১, বিষ মদে মানুষ মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১১
আমাদের সমাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, কোন কন্যা সন্তান জন্মালেই তাকে ফেলে দেওয়া, মেরে ফেলা, দান করে দেওয়া বা মেনে না নেওয়ার প্রবনতা রয়েছে। কিন্তু শিলিগুড়ি হাসপাতালের ক্ষেত্রে সম্পুর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা গেল। শিলিগুড়ি হাসপাতালে যে পাঁচটি ফেলে দেওয়া শিশু বেড়ে উঠছে, তাদের মধ্যে তিনটিই শিশুপুত্র, দুটি শিশুকন্যা। তাই বোঝাই যায়, নিজেদের পাপ ঢাকতেই ফেলে দেওয়া হয়েছে শিশুদের।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিছানায় শুয়ে ফুটফুটে শিশুগুলো তাদের পিতা মাতাকে খুঁজে চলেছে করুন নয়নে। কোনটার বয়স চার মাস, কোনটা আবার দেড় বছর। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় হাসপাতালের এই বিছানাই তাদের এখন একমাত্র ভরসা।
আরও পড়ুনঃ সাংসদ আলুওয়ালিয়াকে পাহাড়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ বিনয় তামাংয়ের
হাসপাতালের আয়া ও নার্সদেরই নিজেদের মা ভেবে তাদের কোলেই আদর পেতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কিন্তু কতক্ষনই তা সম্ভব! হাসপাতালের অন্যান্য রোগীদের শুশ্রুষা দিতে গিয়ে শিশুদের সবসময় দেখাশোনা করা সম্ভবও হয় না তাদের। তখন ছোট্ট ছোট্ট এই শিশুগুলি কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়ে।
জলপাইগুড়ি হোমকান্ডের পর শিশুপাচার চক্রের দুর্নীতি রুখতে রাজ্যের হোমগুলিতে শিশু আদান-প্রদানে কড়া আইন প্রনয়ন করা হয়েছে। যার ফলে, পিতামাতাহীন অনাথ বাচ্চাদের নিয়ে সমস্যায় পড়েছে শিলিগুড়ি মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুনঃ Exclusive: সাউথ সিটি মলে বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়ান নিষিদ্ধ
এদিকে সিডব্লিউসিত ও জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে জানিয়েও বাচ্চাদের অ্যাডপ্ট করতে গড়িমসি করছে সিডব্লিউসি। বাচ্চা দত্তক নেওয়ার জন্য হাসপাতালে কোনো গাইডলাইন না থাকায় সিডব্লিউসির ওপর নির্ভরশীল হওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এর।
তাই, শিলিগুড়ি হাসপাতালে ফেলে যাওয়া পাঁচ পাঁচটি শিশুকে নিয়ে রীতিমত দুশ্চিন্তায় রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই একটি শিশু ডায়রিয়াতেও ভুগছে। তার চিকিৎসা চলছে। কিন্তু, এভাবে হাসপাতালে পরে থাকলে যে কোন দিন বড় ধরনের সংক্রমনের শিকার হতে পারে শিশুগুলি। সিডব্লিউসি কবে চাইল্ড প্রটেকশান অ্যাক্ট অনুযায়ী শিশুগুলিকে নিয়ে যায় সেদিকেই তাকিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুনঃ সিঙ্গুরের মাটি থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু বামেদের
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে শিশু বিভাগে রয়েছে একটি শিশু কন্যা ও দুটি শিশু পুত্র। অন্যদিকে এসএনসিইউ তে রয়েছে একটি শিশুকন্যা ও একটি শিশু পুত্র। শিশুগুলির খাওয়া, পড়া, ওষুধ ও পোশাকের অভাব না থাকলেও অভাব রয়েছে তাদের নিরাপত্তা আর দেখভালের। হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষ এর আশঙ্কা, যে কোনো সময় হাসপাতালের কোন কর্মী মোটা টাকার প্রলোভনে শিশুগুলিকে বাইরে পাচার করে দিতে পারে।
হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মন্ডল জানান, একবার সে চেষ্টাও হয়েছিল। একটি শিশুর পিতা-মাতা সেজে এক দম্পতি হাসপাতালে এসে শিশুটির দাবী করেন। কিন্তু উপযুক্ত প্রমান চাইতেই তারা চম্পট দেয়। কিন্তু হাসপাতালে এভাবে শিশুগুলোকে রাখার ক্ষেত্রে এক তো তাদের সর্বক্ষণ দেখাশোনার জন্য লোক থাকতে হয়। এতে কাজের সময় অসুবিধা হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুনঃ একে ৪৭ এর গুলি বুকে নিয়েও কাসভকে ছাড়েন নি তুকারাম
অন্যদিকে হাসপাতালে নানা ধরনের রোগীদের নিত্য আনাগোনা। তার মধ্যে ছোঁয়াচে রোগীর সংখ্যাও কম নয়। এই বয়েসে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় যে কোনো সময় তাদের শরীরে রোগ সংক্রামিত হতে পারে। যদিও হাসপাতালে নার্স ও আয়াদের কাছ থেকে মাতৃতুল্য স্নেহে বেড়ে উঠছে তারা।
কিন্তু হাসপাতালে রোগীর চাইতে বেডের সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় সেখানে পাঁচটি শিশুর জন্য আলাদা বেড রাখতে গেলেও সমস্যা হচ্ছে। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুগুলিকে সিডব্লিউসি অ্যাডাপ্ট করে নিক। তারপর চাইন্ড প্রটেকশান অ্যাক্ট মেনে কেউ শিশুগুলিকে দত্তক নিতে পারে।
তবে হাসপাতাল থেকে শিশুগুলিকে দত্তক দেওয়ার কোনো অধিকার নেই বলে সুপার অমিতাভ মন্ডল জানান। শিশুগুলিকে কিভাবে দত্তক দেওয়া হবে তা সম্পুর্ন সিডব্লিউসি ঠিক করবে। বর্তমানে শিশুগুলিকে যত শীঘ্র সম্ভব সিডব্লিউসির হাতে তুলে দিতে চায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।