ভারতের বিভিন্ন জায়গাতে পালিত হয় অম্বুবাচী বা রজঃ উৎসব। অসমের কামাখ্যা দেবীর মন্দিরকে ঘিরে প্রতি বৎসর বিশাল অম্বুবাচী মেলার আয়োজন করা হয়। অম্বুবাচী শুরুর প্রথম দিন থেকে কামাখ্যা দেবীর দ্বার বন্ধ রাখা হয়।
অম্বুবাচীর সময় দেবী দর্শন নিষিদ্ধ থাকে। চতুর্থ দিন দেবীর স্নান ও পুজা সম্পূর্ণ হওয়ার পর কামাখ্যা মাতার দর্শন পান ভক্তরা। এ বছর অম্বুবাচী মেলা শুরু হবে ২২ জুন; শনিবার। শেষ হবে ২৬ জুন; কামাখ্যা মন্দিরও বন্ধ হবে ২২ জুন; শনিবার। খুলবে ২৫ জুন; মঙ্গলবার। ভক্তরা দেবীর দর্শন পাবেন ২৬ জুন; বুধবার থেকে।
আরও পড়ুন শিব ও পার্বতীর বিয়ের অদ্ভুত গল্প (পর্ব ১)
হিন্দুদের শাস্ত্রে; পৃথিবীকে মা বলা হয়ে থাকে। বেদেও; একই রকমই ভাবে পৃথিবীকে মা রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। পৌরানিক যুগেও পৃথিবীকে ধরিত্রী মাতা বলা সম্বোধন করা আছে। আষাঢ় মাসে মৃগ শিরা নক্ষত্রের তিনটি পদ শেষ হলে; পৃথিবী বা ধরিত্রী মা ঋতুমতী হন। সেই সময়টিতে অম্বুবাচী পালন করা হয়।
আবার এ সময়; যারা ব্রহ্মচর্য পালন করেন; ব্রহ্মচারী, সাধু, সন্ন্যাসী, যোগীপুরুষ, বিধবা মহিলা এনারা কোনও ভাবেই আমিষ খাদ্য গ্রহণ করেন না; নিরামিষ খেয়ে থাকেন। যেহেতু এরা কেউই অশুচি পৃথিবীর উপর আগুনের রান্না করা কিছু খান না। বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে এই তিন দিন কাটান।
আরও পড়ুন শিব ও পার্বতীর বিয়ের অদ্ভুত গল্প (পর্ব ২)
ধর্মীয় আচার হলেও; এরসঙ্গে প্রাচীন কৃষি ব্যবস্থা জড়িয়ে আছে। বর্ষার নতুন জলে; এই সময় জমি সিক্ত হয়ে উঠত। সেই সময়; জমিতে লাঙল দেওয়া হত না। বর্ষার জলে ভেজা পৃথিবীকে সে সময় ঋতুমতী হিসাবে ভাবা শুরু হয়। তিনদিন বাদে; অম্বুবাচী নিবৃত্তি হলে জমিতে চাষ করা হয়।
কামাখ্যা মন্দিরে প্রতি বছর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের থেকে আসে লক্ষ লক্ষ ভক্তেরা। মন্দিরের কীর্ত্তন; মন্দিরের বাহিরে প্রদীপ ও ধূপকাঠী জ্বালিয়ে দেবীকে প্রনাম করেন তারা। পান্ডারা ভক্তদের রক্তবস্ত্র উপহার দেন। দেবী পীঠের এই রক্তবস্ত্র ধারণ করিলে মনোকামনা পূর্ণ হয় বলে ভক্তেরা বিশ্বাস করেন। কামাখ্যা ধামের অম্বুবাচী মেলা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সম্প্রীতি রক্ষার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।