বিশেষ রিপোর্ট : ভারতবাসীর অজান্তেই গঙ্গা বাঁচাতে ১১১ দিন অনশন করে মৃত্যুবরণ করলেন পরিবেশবিদ জি ডি আগরওয়াল। এর আগেও, গঙ্গা বাঁচাতে ১১৫ দিন অনশন করে রহস্যজনক ভাবে মারা গিয়েছিলেন নিগমানন্দ সরস্বতী বা স্বামী নিগমানন্দ।
১৯৭৬ সালের ২রা আগস্ট বিহারের দারভাঙ্গা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন স্বরূপম কুমার ঝা, ডাকনাম গিরিশ। দিল্লিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়ই ১৯৯৫ সালে ২ রা অক্টোবর গান্ধীর জন্মদিনে, গিরিশ সত্যের খোঁজে দেশ ভ্রমনে বেরিয়ে পরেন। গোটা উত্তর ভারত ঘুরে বেড়ান সত্যের খোঁজে। ৩ বছর পর গিরিশের বাবা মা জানতে পারেন, তাঁদের ছেলে হরিদ্বারের মাতৃমন্দির এ আছেন স্বামী শিবানন্দের শিষ্য হয়ে। নাম, নিগমানন্দ সরস্বতী বা স্বামী নিগমানন্দ।
এই সেই মাতৃমন্দির যেখানে ২ দিন আগেই গঙ্গা রক্ষায় অনশনে মারা যান পরিবেশবিদ জি ডি আগরওয়াল। কিন্তু ভারতবাসীর জানা নাই, ভারতের প্রথম পরিবেশবিদ যিনি গঙ্গা রক্ষার জন্য অনশন করে প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁর নাম স্বরূপম কুমার ঝা, ডাকনাম গিরিশ বা নিগমানন্দ সরস্বতী বা স্বামী নিগমানন্দ।
১৯৯৭ সালে হরিদ্বারে গঙ্গার তীরে মাতৃমন্দির প্রতিষ্ঠাই হয় দুর্নীতি, পরিবেশ দূষণ ও গঙ্গা দূষণ এর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য। গঙ্গা দূষণ রোধ ও গঙ্গার ধারে বেআইনি মাইনিং এর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন স্বামী নিগমানন্দ। এক দশক ধরে তিনি লড়াই চালিয়ে যান গঙ্গা রক্ষার জন্য।
প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তিনি অনশন আন্দোলন শুরু করেন ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে। এরপরে ওই বছরের জুনেও অনশন আন্দোলন করেন। ৭০ দিনের অনশন আন্দোলনেও প্রশাসনের টনক নড়ে নি। এগিয়ে আসে নি কোন রাজনৈতিক দল। একা লড়ে গেছেন দীর্ঘ এক দশক।
গঙ্গা রক্ষায় ২০১১ সালে ফেব্রুয়ারিতে স্বামী নিগমানন্দ শেষবারের মত আমরণ অনশন আন্দোলন শুরু করেন। ২৭ শে এপ্রিল, অনশনের ৬৮ দিনের মাথায় তাঁকে জোর করে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। ভর্তি করা হয় হিমালয়ান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। সেখানে কোন অচেনা ব্যক্তি তাকে ইনজেকশন দেবার নামে শরীরে বিষ ঢুকিয়ে দেয়।
শরীরে বিষ নিয়েও অনশন আন্দোলন চালিয়ে যান স্বামী নিগমানন্দ। ২০১১, ১৩ জুন মারা যান গঙ্গা রক্ষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ স্বামী নিগমানন্দ। মৃত্যুর কারণ অনশন বলা হয়। সেই সঙ্গে রক্তে পাওয়া যায় বিষ। গঙ্গার ধারে বেআইনি মাইনিং বন্ধ করতে যাদের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন, তাদের ভাড়া করা খুনিই তাকে বিষ দেয় বলে অভিযোগ ছিল।
এই রহস্যজনক মৃত্যুর সেইভাবে কোন তদন্তই হয় নি। তবে গঙ্গা রক্ষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ স্বামী নিগমানন্দ-র আত্মবলিদান পুরোটা বিফলে যায় নি। গঙ্গা দূষণ রোধ না হলেও এই আন্দোলনের জেরে উত্তরাখন্ড সরকার গোটা হরিদ্বার জেলাতেই মাইনিং বন্ধ করে দেয়।
আমরা, ১১১ দিন অনশন করে মৃত্যুবরণ করা শহীদ জি ডি আগরওয়ালকেও চিনি না। আর গঙ্গা রক্ষায় প্রথম শহীদ নিগমানন্দ সরস্বতী বা স্বামী নিগমানন্দ-র নামও শুনি নি। এরা দুজনেই মনে করতেন গঙ্গা নদী ভারতের লাইফলাইন। আর ভারতের লাইফলাইন রক্ষায় নিজেদের লাইফ হেলায় বলিদান দিয়েছেন দুই শহীদ।