The News বাংলা, নিউ দিল্লী: এ যেন ভুতের মুখে রামনাম। সব ব্যাংকের সমস্ত লোনের টাকা ফেরত দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন করলেন ব্যাঙ্ক ‘ঋণ খেলাপ’ করে পলাতক বিজয় মালিয়া। বুধবার, এক টুইটে এই ইচ্ছে প্রকাশ করলেন বিজয় মালিয়া। হেলিকপ্টার দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকার জন্য দুবাই থেকে ক্রিশ্চিয়ান মাইকেলকে উড়িয়ে আনার পরই কি ভয় পেয়ে গেলেন মালিয়া, উঠেছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুনঃ রাহুলের ‘রাফায়েল’ অ্যাটাকের জবাবে মোদীর হাতে ‘মাইকেল’
অবশেষে সুর নরম হল। কোটিপতি বিজনেস টাইকুন বিজয় মালিয়া আগেই দেশে ফিরে এসে দেশের আইনের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন বলে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সূত্রে জানা গিয়েছে। এবার সমস্ত ব্যাংকের সব লোন শোধ দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন তিনি। তবে, সেই ইচ্ছা কতটা বাস্তবায়িত হবে সেটাই প্রশ্ন।
অর্থ প্রতারণা মামলার তদন্ত চালানো ইডির আধিকারিকদের ইঙ্গিত অনুযায়ী, সরকারের পক্ষ থেকে নতুন আইন তৈরি করে বিজয় মালিয়ার সমস্ত সম্পত্তিকে বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্তের ফলেই এই ঘনঘন সুর বদল।
আরও পড়ুনঃ ‘গরু তাণ্ডবে’ যোগীর পুলিশের খাতায় বিজেপি-বজরং-ভিএইচপি নেতার নাম
কেন্দ্রের নতুন আইন অনুযায়ী, কোনও ‘অভিযুক্ত’ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া যাবে। আগেই বিজয় মালিয়কে এই আইনের আওতায় নিয়ে এসে তাঁকে ‘পলাতক’ বলে ঘোষণা করার অনুরোধ ইডি করেছিল আদালতের কাছে। আদালত সেই অনুরোধ মঞ্জুরও করে। তার সব সম্পত্তি নিলাম করার প্রক্রিয়া চলছে।
আরও পড়ুনঃ ‘ভগবান’ সরাসরি টাকা নিয়ে হাজির ভক্তের সমস্যা মেটাতে
যদিও, বিজয় মালিয়ার দেশে ফিরে আসার প্রস্তাবটির ব্যাপারে স্বয়ং মালিয়া এখনও পর্যন্ত কিছুই জানান নি। এর আগে ভারতের হাতে মালিয়াকে তুলে দেওয়ার জন্য ব্রিটেনের কাছে যে অনুরোধ করা হয়েছিল কূটনৈতিক স্তরে, তার প্রবল বিরোধিতা করেছিলেন বাষট্টি বছর বয়সী এই কোটিপতি ব্যবসায়ী।
ভারতের কাছে মালিয়ার প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত একটি মামলাও চলছে লন্ডনের আদালতে। আর তার মাঝেই এই ড্রিংকস ব্যারনের এই লোনের টাকা ফেরত দেবার ঘোষণা এল।
২০০৫ সালে শুরু করা কিংফিশার এয়ারলাইন্সের জন্য বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ৯০০০ কোটি টাকা ঋণ নেন এই ব্যবসায়ী। বিজয় মালিয়া সেই সমস্ত ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ না করেই ২০১৬ সালেই দেশ থেকে ফেরার হয়ে যান। কিংফিশার এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মাত্র সাত বছরের মধ্যেই।
আরও পড়ুনঃ ‘তিন মাস বিয়ে বন্ধ’ তুঘলকি নির্দেশে বিতর্কে যোগী সরকার
টুইট করে টাকা ফেরত দেবার কথা বললেও, আপাদমস্তক ধারে ডুবে রয়েছেন বিজয় মালিয়া। সব ধার শোধ করতে কোথায় ধার করবেন। সারা দেশে যত ব্যাঙ্ক রয়েছে, সব ব্যাঙ্কেই তাঁর ঋণের পরিমানটা চোখে পড়ার মতো। সংখ্যাটা সবই কোটির ঘরে।
একনজরে দেখে নিন বিজয় মালিয়ার ঋণের বহরঃ-
১) স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া- ১৬০০ কোটি টাকা ধার।
২) পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক- ৮০০ কোটি টাকা ধার।
৩) আইডিবিআই- ৮০০ কোটি টাকা ধার।
৪) ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া- ৬৫০ কোটি টাকা ধার।
৫) ব্যাঙ্ক অফ বরোদা- ৫৫০ কোটি টাকা ধার।
৬) ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া- ৪৩০ কোটি টাকা ধার।
৭) সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া- ৪১০ কোটি টাকা ধার।
৮) ইউকো ব্যাঙ্ক- ৩২০ কোটি টাকা ধার।
৯) কর্পোরেশন ব্যাঙ্ক- ৩১০ কোটি টাকা ধার।
১০) স্টেট ব্যাঙ্ক অফ মহীশূর- ১৫০ কোটি টাকা ধার।
১১) ইন্ডিয়ান অভারসিস ব্যাঙ্ক- ১৪০ কোটি টাকা ধার।
১২) ফেডেরাল ব্যাঙ্ক- ৯০ কোটি টাকা ধার।
১৩) পঞ্জাব সিন্ধ ব্যাঙ্ক- ৬০ কোটি টাকা ধার।
১৪) অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক- ৫০ কোটি টাকা ধার।
আরও পড়ুনঃ জনগণকে ‘গাধা’ বানিয়ে ‘শিক্ষাগুরু নেহেরু’র যোগ্য ছাত্র সব রাজনীতিবিদ
মঙ্গলবার রাতেই দুবাই থেকে ধরে আনা হয় অগাস্টা ওয়েস্ট ল্যান্ড ভিভিআইপি চপার দুর্নীতি মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ক্রিশ্চিয়ান মাইকেলকে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে বন্দী চুক্তি অনুযায়ী ভারত হাতে পায় তাকে। এই ভয়েই ব্রিটেনে লুকিয়ে থাকা বিজয় মালিয়া এই টুইট করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক উপদেষ্টারাও বলছেন এটা ধার শোধের ইচ্ছা নয়। শুধু ব্রিটেন প্রশাসন ও আদালতকে এটা বোঝানো যে সে টাকা শোধ করতে চায় কিন্তু ভারত সরকার সেটা চাইছে না। তবে মালিয়ার এই টুইট নিয়ে গোটা ভারত জুড়ে বুধবার দিনভর হাসাহাসি চলছে।