সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেছে, ভারতে আবারও কোনো সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে তাতে ভয়াবহ সমস্যার মধ্যে পড়বে পাকিস্তান। ভারতের কূটনৈতিক চাপে পাকিস্তানকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ আমেরিকার। বলছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের এক সিনিয়ার কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা দেখতে চাই পাকিস্তান জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম), লস্কর-ই-তৈয়বা সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে যথাযথ এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নিয়েছে। এই অঞ্চলে উত্তেজনা যাতে আর বৃদ্ধি না পায়, সে জন্য এই উদ্যোগ নিতে হবে”।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, “সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে পাকিস্তান যদি দীর্ঘমেয়াদি ও আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করে এবং ভারতে আবার কোন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে, তবে ভয়ংকর সংকটের মধ্যে পড়তে হবে দেশটিকে। এর ফলে আবারও উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে, যা দুই দেশের জন্যই বিপজ্জনক হবে”।
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পাক জঙ্গিদের আত্মঘাতী হামলায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ৪৯ জন জওয়ান শহিদ হন। ওই হামলার দায় স্বীকার করেছিল জেইএম। এরপর পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিমান হামলা চালায় ভারত। এরপরে আন্তর্জাতিক চাপে, পাকিস্তান দেশটির সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। যদিও মাসুদ আজহার বা ভারতের লিস্টে থাকা কোন জঙ্গির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি পাক।
এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে সেই কর্মকর্তা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহল দেখতে চায় যে পাকিস্তান ওই সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ‘অপরিবর্তনীয় ও দীর্ঘ মেয়াদি’ পদক্ষেপ নিয়েছে”। তিনি বলেন, এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ বিবৃতি দেওয়ার সময় এখনও হয়নি।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে পাকিস্তান প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সম্পদ জব্দ করেছে, কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়া জেইএমের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, “তবে আমরা আরও পদক্ষেপ দেখতে চাই। অতীতের বিভিন্ন ঘটনার কারণে পাকিস্তানের অপরিবর্তনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এর আগে তারা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং পরে তাদের ছেড়েও দিয়েছে। এ ছাড়া ওই সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছে পাকিস্তান”।
ওই কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ওই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পুলওয়ামায় হামলার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে তা প্রশমনে কাজ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই উত্তেজনা কমাতে চিন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহ, কাতার, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাহায্য নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তবে আমেরিকার এই চাপে পাকিস্তান কি কি ব্যবস্থা নেয় সেটাই এখন দেখার। তবে পাকিস্তানের কাছে নতুন কিছু আশা করছে না ভারত। তবে আমেরিকার হুমকিতে কতটা নত হয় পাকিস্তান, সেটাই এখন দেখার। তবে এটাকেও মোদী সরকারের কূটনৈতিক জয় বলেই দেখছে বিজেপি। ভোটে এটাকেও ইস্যু করতে চাইছে বিজেপি।