ভগবান যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন ও বড়দিনের না জানা গল্প

530
ভগবান যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন ও বড়দিনের না জানা গল্প/The News বাংলা
ভগবান যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন ও বড়দিনের না জানা গল্প/The News বাংলা

The News বাংলা: মঙ্গলবার বড়দিন। জানেন কি বড়দিনের তাৎপর্য? জেনে নিন বড়দিনের না জানা অনেক বড় কথা।

আধুনিক বিশ্বে বর্তমান সময়ে বছরের যে দিনটিকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে ছোট-বড় সব মানুষের প্রবল আগ্রহ, উৎসাহ, উদ্দীপনা তা হচ্ছে ২৫ ডিসেম্বর, বড়দিন। যেটা যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন। এই দিনটি সবার কাছে পুণ্যময় বড়দিন বলেই পরিচিত।

আরও পড়ুনঃ ‘বজরঙ্গী ভাইজান’ হয়ে ভারত পাকিস্তানকে বাস্তবে মিলিয়ে দিল বাংলা

খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিষ্টের জন্ম হয় অলৌকিক ভাবে। খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস মতে, যিশু খ্রিষ্ট পৃথিবীতে মানুষের রূপ ধরে জন্মগ্রহণ করেন এই পৃথিবীর সকল পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে। মানুষে মানুষে বন্ধনকে আরও সুসংহত করতে।

তাঁর এই তাৎপর্যপূর্ণ আগমনের তিথি স্মরণ করে তাঁর অনুসারীরা বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে জাঁকজমকের মধ্য দিয়ে এই শুভ বড়দিন উৎসব পালন করে থাকে। পুণ্যময় বড়দিন যে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব তা বলা বাহুল্য।

আরও পড়ুনঃ লোকঠকানির লোন মাপ, রাহুলকে লজ্জায় ফেলে আত্মঘাতী কৃষক

তাদের কাছে এই দিনটির ধর্মীয় তাৎপর্য ও গুরুত্ব অসামান্য। আধুনিক বিশ্বে বছরের অন্য যেকোনো দিন ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক এমনকি রাজনৈতিকভাবেও এতটা তাৎপর্যপূর্ণ নয়।

তবে বড়দিন উৎসব নিয়ে বিপুল এই আগ্রহ এখন শুধু মাত্র আর খ্রিষ্টানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সব ধর্মের বর্ণের মানুষের কাছে তাই এর আবেদন ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী।

আরও পড়ুনঃ EXCLUSIVE: কলকাতা থেকে পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের টাকা যাচ্ছে জঙ্গিদের হাতে

যিশু খ্রিষ্টের জন্ম কি ২৫ ডিসেম্বরেই হয়েছিল? পবিত্র বাইবেলে যিশুর খ্রিষ্টের যে জন্মকাহিনির বর্ণনা আমরা পাই, সেখানে তাঁর জন্মদিন সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো উল্লেখ নেই! তাহলে কীভাবে এই পৃথিবীতে ২৫ ডিসেম্বর হয়ে উঠল বড়দিন উৎসব পালনের দিন?

বড়দিন উৎসব উদ্‌যাপনের রহস্য জানতে আমাদের যেতে হবে যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও বহু বছর আগে, মানবসভ্যতার গোড়ার দিকে। রোম সাম্রাজ্যের শাসনামলে ইউরোপে সব থেকে বড় উৎসব ছিল তাঁদের কৃষি দেবতা ও শনি গ্রহের সম্মানে এক বিশেষ ‘উৎসব’।

এই উৎসবটি শীতকালের মাঝামাঝিতে ২৫ ডিসেম্বরের দিকে পালন হতো। ওই সময় রোম সাম্রাজ্যের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকত। সে উৎসবে সবাই ছোট-বড়, ধনী-গরিবের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে যেত কিছুদিনের জন্য। সেই সময় যিশুর অনুসারীরা এই উৎসবকে ‘বিধর্মী উৎসব’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

আরও পড়ুনঃ EXCLUSIVE: দিল্লীর নির্ভয়া ধর্ষণ কাণ্ডের পরেও নিরাপত্তাহীন কলকাতার বাস

যিশুর জন্ম দিন সম্পর্কে তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন না বলে তাঁরা তাঁর পুনরুত্থানের দিনের কাছাকাছি সময়কেই তাঁর জন্মদিন হিসেবে পালন করতে শুরু করেন। তাঁদের কেউ কেউ ৬, ১০ জানুয়ারি আবার কেউ কেউ ১৯, ২০ এপ্রিল আবার কিছু অংশ ২০ মে আবার অনেকেই ১৮ নভেম্বরকে বড়দিন উৎসব হিসেবে পালন করতেন।

তাঁর অনুসারীরা এও বিশ্বাস করত ২৫ মার্চেই পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে এবং এই দিনেই যিশুকে ক্রুশে দিয়ে হত্যা করা হয়। পুরাতন বাইবেল বা ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুযায়ী পুরোহিতগণ বিশ্বাস এবং প্রচার করতেন যে, “প্রবক্তাগণ সকলেই পূর্ণ বছর বাঁচেন এবং জন্ম দিনেই তাঁদের দেহত্যাগ ঘটে।”

আরও পড়ুনঃ মানব জীবনে সঙ্গীতের অসংখ্য উপকারিতা

যুক্তি হিসেবে তাঁরা বলতেন, “ঈশ্বর অসম্পূর্ণতা বা ভগ্নাংশ পছন্দ করেন না।” পুরোহিতদের এই বিশ্বাসকে অকাট্য প্রমাণ করতেই, ২৫ মার্চকে ঠিক করা হয় একটি মহান দিন হিসেবে। যে দিনে স্বর্গ-মর্ত্যের স্রষ্টা, রাজাধিরাজ, সর্ব শক্তিমান ঈশ্বর তাঁর মহাদূত গ্যাব্রিয়েলকে কুমারী মরিয়মের কাছে পাঠিয়ে এই সংবাদ দেন যে, “ঈশ্বরের ইচ্ছায় ও অলৌকিক ক্ষমতায় মরিয়ম গর্ভবতী হবেন এবং ঈশ্বরের পুত্রকে গর্ভে ধারণ করবেন। তাঁর নাম রাখা হবে যিশু।”

কুমারী মরিয়ম গর্ভবতী হওয়ার দিন থেকে ৯ মাস হিসেবে ২৫ ডিসেম্বর যিশু খ্রিষ্টের দিন। ৩৩৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে রোমান বর্ষপঞ্জিতে ২৫ ডিসেম্বরকে বড়দিন উৎসব হিসেবে উদ্‌যাপন করার নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানা যায়। রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্ট ধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দিনে দিনে বড়দিন উৎসব আরও প্রাণ পেতে শুরু করে।

আরও পড়ুনঃ শহীদ জওয়ানকে সম্মান নয়, সেনাকে পাথর ছুঁড়ে দেশদ্রোহীরাই ভারতে ‘নায়ক’

ইউরোপে যিশুর অনুসারীরা নিশি জাগরণ, প্রার্থনার পাশাপাশি উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে বড়দিন পালন করা শুরু করে। বড়দিন উৎসবে তাঁরা ‘ক্রিসমাস ক্যারল’ বা আনন্দ গানের আয়োজন করে। আর এই সংস্কৃতি আমাদের পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিতেও ‘বড়দিনের গান’ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।

গোয়াল ঘরে যিশুর মনোরম ‘জন্মদৃশ্য’ এবং এর ‘ভাস্কর্য’ বা চিত্রকলার ব্যবহার রীতি এখন খুব প্রচলিত। মধ্যযুগে এর প্রচলন করেছিল যিশুর অনুসারীরাই এবং তাঁরা ছিলেন ইউরোপিয়ান। উত্তর ইউরোপের অনুসারীরাই বড়দিন উৎসবের অন্যতম আনন্দ উপাদান ‘ক্রিসমাস ট্রি’র প্রবর্তক। তারাই এই রীতিকে লালন করে এই পর্যায়ে এনেছে এতে সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন: ২২ বছর পর ফের ভূস্বর্গে রাষ্ট্রপতি শাসন

বর্তমান সময়ে ‘বড়দিন উৎসব’-এর অতিমাত্রায় বাণিজ্যিকীকরণ এবং বাণিজ্যিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আরও আড়ম্বরপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখন বড়দিন আর কেবল ‘ক্রিসমাস ট্রি’ সাজানোর মধ্যে থেমে নেই।

এতে যোগ হয়েছে আলোকসজ্জা, শুভেচ্ছাকার্ড বিনিময়, উপহার দেওয়া-নেওয়া, চকলেট আদান-প্রদান, ঘুরতে যাওয়া, বড়দিনের পিঠা বানান, কেক কাটা ও মিলন ভোজ-সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় উচ্চাসনে থাকা প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়।

আরও পড়ুনঃ ‘কৃষি ঋণ মকুব’, মানুষ ও মিডিয়াকে চরম বোকা বানিয়ে ছলচাতুরী কংগ্রেসের

আর এই বড়দিনের শুরুতেই আমাদের রাত ১২ টাতেই সান্তা ক্লস প্রচুর উপহার নিয়ে আসেন শিশুদের জন্য। এমনটাই কথিত আছে। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চলা শিশুরাও অপেক্ষা করে থাকে বড়দিনের উপহারের জন্য। এই কারণেও শিশুদের কাছেও বড়দিনের শুরুটা অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

বড়দিনের আনন্দকে এ সব আয়োজন, আচার অনুষ্ঠান বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয় সত্যি। অর্থনীতির চাকা হয়ে উঠে গতিময়। মানুষের আয় বাড়ে, ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে। জীবন হয় কিছুদিনের জন্য আনন্দময়।

আরও পড়ুনঃ নরেন্দ্র মোদীর হাতেই উদ্বোধন হচ্ছে ভারতের দীর্ঘতম দোতলা সেতু

সবকিছুতে অতি বাণিজ্যিকীকরণের ফলে বড়দিন উৎসব এখন অনেকটাই আনুষ্ঠানিক ও আচার সর্বস্ব অনুষ্ঠান। তথাপি যিশু খ্রিষ্টের অনুসারীদের কাছে এই দিনটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।

পবিত্র বাইবেল ও ধর্মীয় দিক থেকে যদি দেখি, ২৫ ডিসেম্বর দিনটি শুধুমাত্র মানবজাতির ত্রাণকর্তা যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন নয়, বরং চিরমঙ্গলময় ঈশ্বর এবং মানুষের মাঝে ভালোবাসার এক উজ্জ্বল স্বাক্ষর।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন