‘রাম’কে ছেড়ে আসা লক্ষণকে ‘হাতে’ নিয়ে বাংলায় তুলকালাম

637
'রাম'কে ছেড়ে আসা লক্ষণকে 'হাতে' নিয়ে বাংলায় তুলকালাম/The News বাংলা
'রাম'কে ছেড়ে আসা লক্ষণকে 'হাতে' নিয়ে বাংলায় তুলকালাম/The News বাংলা

The News বাংলা, কলকাতা: সদ্য ‘রাম’কে ছেড়েছেন লক্ষণ। না রাময়নের রাম-লক্ষণ নয়। সেপ্টেম্বরে গেরুয়া শিবির ছেড়েছিলেন প্রাক্তন কমরেড লক্ষণ শেঠ। শুভেন্দু অধিকারী ও স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে নেয় নি। বিজেপি ছেড়ে সিপিআইএম থেকে বিতাড়িত প্রাক্তন কমরেড এখন বাকি থাকা কংগ্রেসের দিকে। আর একসময়ের সেই দাপুটে লক্ষণ শেঠকে নিয়েই এবার তুলকালাম প্রদেশ কংগ্রেসে।

আরও পড়ুন: কংগ্রেস ছেড়ে মমতার ‘মহানায়িকা’ এবার মোদীর বক্স অফিসে

‘বৃহস্পতিবারই কংগ্রেসে যোগ দিতে চলেছেন সিপিআইএম ও বিজেপি ফেরত প্রাক্তন সাংসদ লক্ষণ শেঠ’। এমনটাই শোনা যাচ্ছিল গোপন সূত্রে। নানা মামলায় অভিযুক্ত তমলুকের এক সময়ের সাংসদ লক্ষণ শেঠের বিরুদ্ধে নন্দীগ্রাম-গণহত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগও আছে। সিপিআইএম তাড়িয়ে দেওয়ায় তিনি যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। এবার পা বাড়িয়েছেন বাকি থাকা কংগ্রেসের দিকে।

'রাম'কে ছেড়ে আসা লক্ষণকে 'হাতে' নিয়ে বাংলায় তুলকালাম/The News বাংলা
‘রাম’কে ছেড়ে আসা লক্ষণকে ‘হাতে’ নিয়ে বাংলায় তুলকালাম/The News বাংলা

সিপিআইএম তাড়িয়ে দেবার পর নতুন দল, তারপর বিজেপিতে। তবে, সুবিধা করতে পারেন নি। ফিরে পান নি বাম আমলের সেই দাপট। অন্যদিকে লক্ষণ শেঠকে নিয়ে মানুষের নিন্দার মুখে পড়েছিল বিজেপি। বলাই যায়, বিজেপিতে থাকাকালিন লক্ষন শেঠ হলদিয়ার বুকে রাজনৈতিক ভাবে তেমন কোন দাগ কাটতে পারেন নি। এমনকি লক্ষন শেঠকে নিয়ে বিজেপির মধ্যেও প্রচুর বিতর্ক হয়।

আরও পড়ুন: টানা ২ দিন ধরে সন্ধান নেই ‘শচীনের’, বিপদ চিন্তায় প্রশাসন

জেলাস্তরেও বিজেপি কর্মীরা হলদিয়ার প্রাক্তন সাংসদকে পাত্তা দিতেন না। নন্দীগ্রামের গনহত্যার জন্য পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিজেপি কর্মীরাও লক্ষণ শেঠকে প্রকাশ্যে দায়ি করতেন। এর ফলে হলদিয়ার প্রাক্তন সাংসদ দলে ক্রমেই একা হয়ে পড়েছিলেন। রাজনৈতিক ভাবেও তিনি ছিলেন নি:সঙ্গ।

আরও পড়ুন: নারী ঢোকায় ‘অপিবত্র’ শবরীমালা, ‘শুদ্ধ’ করার জন্য বন্ধ মন্দির

‌লক্ষণ শেঠ ও জেলা জুড়ে থাকা তার কয়েক হাজার অনুগামী লক্ষণের তৈরি ‘ভারত নির্মান’ পার্টি ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে পুরোনো বিজেপি ও নতুন বিজেপির মধ‍্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় জেলা জুড়ে। পাশাপাশি, লক্ষণের হাত ধরে পুরোনো সিপিএম নেতারা গেরুয়া পোষাক পরলেও তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে তাদের পুরোনো শত্রুতার কারনে জেলার বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হতে থাকে বিজেপি কর্মীরা।

'রাম'কে ছেড়ে আসা লক্ষণকে 'হাতে' নিয়ে বাংলায় তুলকালাম/The News বাংলা
‘রাম’কে ছেড়ে আসা লক্ষণকে ‘হাতে’ নিয়ে বাংলায় তুলকালাম/The News বাংলা

‌যা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে বিজেপি। ওদিকে হলদিয়া পুরসভা ভোটের পর দলে লক্ষণ শেঠের গুরুত্ব ক্রমশ কমতে থাকে। নন্দীগ্রাম কান্ডে অভিযুক্ত লক্ষণ বাবুকে দলে নেওয়ার কারণে জেলায় বিজেপির ভাবমূর্তি খারাপ হতে থাকে জেলার বড় অংশের মানুষের কাছে। তা থেকে মুক্তি চাইছিল বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে লক্ষণ শেঠের বিজেপি ছেড়ে দেওয়ার ফলে, খুশী হয়েছিলেন জেলার বিজেপি কর্মীরা।

আরও পড়ুনঃ শেখ হাসিনাকে প্রথম অভিনন্দন জানালেন নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বিজেপির মায়া কাটিয়ে এবার ‘নন্দীগ্রামের খলনায়ক’ এখন কংগ্রেসের পথে। আর এই নিয়েই কংগ্রেস শিবিরে শুরু হয়েছে তীব্র মতান্তর। ফলে আপাততঃ থমকে আছে, ‘হাতে’ লক্ষণ পাওয়ার ব্যাপারটা।

আরও পড়ুনঃ দেশপ্রেম বাড়াতে স্কুলের রোল কলে এবার ‘জয় হিন্দ’ ও ‘জয় ভারত’

অধীর চৌধুরী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন অনেকবার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও কংগ্রেসে ঢোকা সম্ভব হয় নি। অধীর চৌধুরীর আপত্তি ছিল লক্ষণে। তবে শোনা যাচ্ছে নতুন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রর অত ছুঁতমার্গ নেই লক্ষণের ব্যাপারে।

আরও পড়ুন: শুধুই হ্যাপি নিউ ইয়ার নয়, ১লা জানুয়ারী ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের কল্পতরু উৎসবও

সোমেন মিত্রর সঙ্গে ইতিমধ্যেই একাধিকবার বৈঠকও করেছেন লক্ষণবাবু। তবে প্রদেশ কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতৃত্ব লক্ষণ শেঠকে দলে গ্রহণ দেওয়ার সিদ্ধান্তে কড়া আপত্তি জানিয়েছেন। তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাঁরা।

'রাম'কে ছেড়ে আসা লক্ষণকে 'হাতে' নিয়ে বাংলায় তুলকালাম/The News বাংলা
‘রাম’কে ছেড়ে আসা লক্ষণকে ‘হাতে’ নিয়ে বাংলায় তুলকালাম/The News বাংলা

প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরের খবর, এই আপত্তিকে প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরে শীর্ষস্তর থেকে জানানো হয়, পূর্ব মেদিনীপুরে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করানোর লক্ষ্যেই লক্ষণ শেঠকে দলে গ্রহণ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ভোরবেলায় শবরীমালা মন্দিরে ঢুকে ইতিহাস সৃষ্টি ‘মা দুর্গার’

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন মামলায় ফেঁসে থাকা লক্ষণ শেঠের একটা রাজনৈতিক পরিচয় খুব দরকার। সিপিআইএম থেকে বিতাড়িত, গেরুয়া ছাড়ার পর একটা দলের ঝান্ডা এখনই দরকার লক্ষণের। স্বনামে ও বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক লক্ষণের নাম ও সম্পত্তি বজায় রাখতে রাজ্যের একটা নামি রাজনৈতিক দল দরকার। নাম, প্রতিপত্তি ও সম্পত্তি টিকিয়ে রাখতে রাজনীতির ব্যবসা ছাড়া আর কি আছে?

আরও পড়ুনঃ অবিশ্বাস্য জয়, ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসনে জিতে ফের ক্ষমতায় শেখ হাসিনা

অন্যদিকে বাংলা কংগ্রেসের টাকার দরকার। লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে, আন্দোলন করতে টাকার দরকার প্রদেশ কংগ্রেসের। অধীর চৌধুরী সভাপতি না থাকায় সেই দিকে একটা সমস্যায় সোমেনের কংগ্রেস। লক্ষণকে দলে নিয়ে তার ‘সাদা বা কালো টাকা’ কিছুটা হলেও পাবে কংগ্রেস।

আরও পড়ুনঃ নতুন বছরে পেট্রোল ডিজেলের দাম রেকর্ড কমতে চলেছে

ফলে লক্ষণ ও কংগ্রেসের একে অপরকে দরকার। তাই লোকসভা ভোটের আগেই লক্ষণকে হাতে চায় সোমেনের কংগ্রেস। রাজ্য সভাপতি হবার পরেই, তৃণমূলকে ছাড়া বাংলায় একা লড়ার কথা জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে বলে এসেছেন সোমেন মিত্র। তৃণমূল ও বিজেপির মত একা করতে চান ব্রিগেড সমাবেশও। আর লড়তে হলে জেলায় লক্ষণের অনুগামীদের পাশাপাশি রাজ্যে লক্ষণের অগাধ টাকার কিছুটা খুব দরকার কংগ্রেসের।

'রাম'কে ছেড়ে আসা লক্ষণকে 'হাতে' নিয়ে বাংলায় তুলকালাম/The News বাংলা
‘রাম’কে ছেড়ে আসা লক্ষণকে ‘হাতে’ নিয়ে বাংলায় তুলকালাম/The News বাংলা

আর তাই, আজ বৃহস্পতিবারই কংগ্রেসে যোগ দেবার কথা ছিল লক্ষণ শেঠের। তবে পূর্ব মেদিনীপুর ও রাজ্যের বিভিন্ন কংগ্রেস নেতাদের আপত্তিতে আপাততঃ সেটা হচ্ছে না। নন্দীগ্রাম গণহত্যার প্রধান অভিযুক্তকে দলে নেওয়ার খবর প্রচার হতেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেওয়া শুরু হয় পূর্ব মেদিনীপুর ও অন্যান্য জেলা এবং কলকাতার সাধারণ মানুষের তরফ থেকেও।

আরও পড়ুনঃ চিন সীমান্তে ভগবান হয়ে পর্যটকদের উদ্ধার ভারতীয় সেনার

তবে এই নিয়ে মুখ খুলতে চান নি অধীর চৌধুরী থেকে সোমেন মিত্র কেউই। কিছু বলতে চান নি লক্ষণ শেঠও। ‘কংগ্রেসের সব সিদ্ধান্ত হাইকমান্ড নেন’ বলেই জানানো হয়েছে। বাংলার কংগ্রেস নেতারা বুঝে গেছেন লক্ষণের টাকার সঙ্গে তার বদনামের ভাগীদারও হতে হবে। সেই তুলনায় তাকে নিয়ে রাজনৈতিক লাভ কতটা হবে, সেই হিসাবই আপাততঃ কষছেন তাঁরা।

সব নিয়ে আপাততঃ ‘লাল’ ও ‘রাম’ ছেড়ে আসা লক্ষণকে ‘হাতে’ নিচ্ছে না কংগ্রেস। তবে লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসে ঢুকতেই পারেন একসময়ের ‘মেদিনীপুরের সম্রাট’ লক্ষণ শেঠ। প্রাক্তন কমিউনিস্ট নেতা বাম থেকে গেরুয়া হয়ে ডানের হাতে কবে নিজেকে সঁপতে পারেন সেটাই এখন দেখার।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন