The News বাংলা, কলকাতা: একটি কৃষক মিছিল আর সেটাকে কেন্দ্র করেই ফের লড়াইয়ে ফিরতে চাইছে বাংলা বামফ্রন্ট। লোকসভা ভোট ও আসন্ন ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তুতি হিসাবে কৃষক মিছিল হাসি ফুটিয়েছে বাংলার বাম নেতাদের মুখে।
এপ্রিল মে-তেই দেশে লোকসভা ভোট। আর বামেরা বাংলায় মূল লড়াই শুরু করছে আগামী ৩রা ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশ এর মধ্যে দিয়ে। আর সারা ভারত কৃষকসভা ও সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে কৃষক মিছিল এই দুটির প্রস্তুতির শুরু বলে মনে করা হচ্ছে। আর দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বামেদের শুরুটা ভালো হল, বলছে রাজনৈতিক মহল।
বুধবার সিঙ্গুরের রতনপুর মোড় থেকে সকাল এগারোটা নাগাদ শুরু হয়েছিল সিপিএমের কৃষক সংগঠনের কলকাতামুখী মিছিল। কৃষক-খেতমজুরদের রাজভবন অভিযানের এই কর্মসূচিতে খুশি সিপিএম নেতৃত্ব। বস্তুত এই মওকায় ৩ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডের মহড়াও হয়ে গেল বলেই মনে করছে আলিমুদ্দিন।
আরও পড়ুনঃ সিঙ্গুরের মাটি থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু বামেদের
কৃষকসভার সম্পাদক অমিয় পাত্রর কথায়, ‘পালাবদলের পর এটাই সম্ভবত সংগঠনের সবচেয়ে বড় মিছিল’। সিঙ্গুরে শিল্প গড়ে তুলতে গিয়েই তৃণমূলের আন্দোলনের জেরে ভূপতিত হয়েছিল সিপিএম। আর তাই সেই সিঙ্গুর থেকেই মিছিল শুরু করে বামেরা।
সারা ভারত কৃষকসভা ও সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম ও শিল্পের দাবিতে বুধবার সকালে শুরু হওয়া সিঙ্গুর থেকে রাজভবন পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার পদযাত্রা এদিন রানী রাসমনি রোডে বিশাল সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।
বুধবার সকালে সিঙ্গুর রতনপুর মোড়ে এই পদযাত্রার সূচনা করেন সারা ভারত কৃষকসভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা। ১০হাজারের বেশি কৃষক ও খেতমজুর বুধবার ১৯ কিলোমিটার পথ হেঁটে ডানকুনিতে শেষ করেন প্রথমদিনের পদযাত্রা।
আরও পড়ুনঃ সাসপেন্ড ১১, বিষ মদে মানুষ মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১১
বৃহস্পতিবার সকালে বালিঘাট থেকে আবার শুরু হয় দ্বিতীয়দিনের পদযাত্রা। হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে মহানগরে ঢোকে লাল স্রোত। এদিকে কলকাতার এই সমাবেশে হাওড়া এবং শিয়ালদহ স্টেশন থেকে মিছিল করে আসেন অসংখ্য মানুষ।
এদিন সমাবেশে কৃষকনেতারা বলেন, ‘কৃষকদরদী সেজে তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে সরকারে আসার পর সাড়ে ৭ বছরে ১৮৭ জন কৃষক দেনার জ্বালায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন’। তাঁদের নাম, ঠিকানা সহ তালিকা কৃষকসভার কাছে আছে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সারা ভারত কৃষকসভার রাজ্য সভাপতি নৃপেন চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন সারা ভারত কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক অমিয় পাত্র ও রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষ। মিছিলেও হাঁটেন সিপিএম-এর সূর্যকান্ত মিশ্র, অমল হালদার সহ অন্যান্য নেতারা।
আরও পড়ুনঃ অনুপ্রবেশকারীদের সরকারী সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে বাংলায় এনআরসি-র দাবি
প্রায় আঠারো থেকে কুড়ি হাজার মানুষ সামিল হন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই মিছিলে। দুপুরে এই লং মার্চ পৌঁছায় রানী রাসমণী রোডে। সেখানে মূল জনসভার আয়োজন করা হয়। জনসভায় বক্তব্য রাখেন সূর্যকান্ত মিশ্র সহ সিপিএম-এর অন্যান্য নেতারা।
সেখানেই সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র তৃণমূল সরকারের তুমুল সমালোচনা করেন। পাশাপাশি বিজেপি-কেও কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি সূর্য্যকান্ত মিশ্র।
“বিজেপি রথ বার করছে আর তৃণমূল কার্নিভাল করছে। বেকারদের কাজ, কৃষকদের সমস্যা ও খেতমজুরের কাজ নিয়ে মোদী এবং দিদির কোনো মাথাব্যথা নেই, লড়ছেন একমাত্র বামপন্থীরাই”। বৃহস্পতিবার রাণী রাসমণি রোডের কৃষক সমাবেশে একথাই বলেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
আরও পড়ুনঃ পাপ ঢাকতে শিশু বলিদান, জন্মেই অনাথ শিশুরা অসহায়
সব মিলিয়ে ‘সিঙ্গুর কৃষক মার্চ’ লোকসভা ভোটের আগে উজ্জীবিত করল বামেদের। এই সমাবেশের পর, ভরা ব্রিগেড সমাবেশ থেকেই যে তাঁরা লোকসভা ভোটে ঝাঁপাতে পারবেন সেই নিয়ে কোন সন্দেহ নেই বাম নেতাদের। আর এর পুরো কৃতিত্বটাই সারা ভারত কৃষকসভা ও সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের।