বিশেষ রিপোর্ট: মঙ্গলবার কলকাতায় ১২ পয়সা বেড়ে পেট্রলের দাম হয়েছে ৮৫.৬৫ টাকা। ডিজেল ১৬ পয়সা বেড়ে ৭৭.১০ টাকা। দুটি পেট্রোপণ্যের দামই ছুঁয়েছে সর্বকালীন রেকর্ড। রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ছে দফায় দফায় প্রায় প্রতি সপ্তাহে। আর এই ‘GDP’ বা গ্যাস ডিজেল পেট্রোল, ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে ডুবিয়ে দিতে পারে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপিকে৷
ভারতের মত দেশে আমজনতা তাদের নিত্যদিনের প্রয়োজন নিয়ে সবচেয়ে বেশি চর্চার মধ্যে থাকে, চিন্তার মধ্যে থাকে৷ এই মুহুর্তে তাই গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ৷ প্রভাব পড়তেই পারে সামনের লোকসভা ভোটে৷
দ্বিতীয়বারের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীত্বের আসনে বসার স্বপ্ন নরেন্দ্র মোদীর৷ ‘মন কা বাত’ তো তাই বলে৷ কিন্তু সেই স্বপ্ন আদৌ সফল হবে কি? ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে লোকসভা উপনির্বাচনের পর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে বিজেপি৷ বেশিরভাগ লোকসভা উপনির্বাচনেই মুখ থুবড়ে পরেছে কেন্দ্রের শাসক দল৷
এদিকে পেট্রোলের দাম ৮৫ পেরিয়ে ৯০ এর দিকে। মুম্বাইয়ে পেট্রোলের দাম ইতিমধ্যেই ছুঁয়েছে ৯০টাকা।দেশেজুড়ে ডিজেলের দামও প্রায় ৮০ টাকা ছুঁই ছুঁই৷ নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের পকেটে যা বিভিন্ন ভাবে টান ফেলেছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমস্যায় আমজনতা। পেট্রোল ডিজেলের দাম বাড়ায়, পরিবহনের খরচা বাড়ায় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম বেড়েছে। চরম সমস্যায় দেশবাসী।
এরপরে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত দাম বেড়েছে রান্নার গ্যাসের। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রান্নার গ্যাসের দাম। বাড়ির রান্না ঘরেও মোদী সরকারের সব জিনিসের দামবৃদ্ধির প্রভাব ঢুকে পড়েছে। শিরে সংক্রান্তি ভারতবাসীর।
এই পরিস্থিতিতে ২০১৯ এই লোকসভা ভোট। এমনিতেই বিভিন্ন রাজ্যে লোকসভা উপনির্বাচনে ধরাশায়ী হচ্ছে বিজেপি। লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মর্যাদা হারিয়েছে মোদীর দল। এখন শরিকদের উপরই ভরসা সরকার টিকিয়ে রাখতে। অন্যদিকে সনিয়া গান্ধী-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে গড়ে উঠছে ফেডারেল ফ্রন্ট। ভারতের প্রায় সব রাজ্যের ২০-২১ টি আঞ্চলিক দল নিয়ে গড়ে উঠছে এই বিকল্প জোট।
ফ্রন্টের শরিকরা কিছুটা একমত হলেও বিজেপিকে লোকসভা ভোটে লড়তে হবে একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে। কর্ণাটকে জেডিএস ও কংগ্রেসের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রায় সমস্ত শরিকদলের নেতাদেরই দেখা গেছে মঞ্চে। বিজেপিকে হঠাতে একজোট সবাই।
কে নেই জোটে? প্রাথমিকভাবে, সনিয়া গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদ পাওয়ার, মুলায়ম সিং যাদব, চন্দ্রবাবু নাইডু, সীতারাম ইয়েচুরী, দেবগৌড়া, অখিলেশ যাদব, মায়াবতী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উদ্ধব ঠাকরে সহ আরও অনেকেই৷ প্রত্যেকেই চান ভারতে বিজেপি বিরোধী ফেডারেল ফ্রন্ট৷
আর মাস ছয়েকের মধ্যে লোকসভা ভোট৷ ২০১৪ তে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ নিয়ে ক্ষমতায় আসা বিজেপি ইতিমধ্যেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে৷ ভোট এগিয়ে আনার দাবীও ইতিমধ্যেই তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সনিয়া গান্ধী৷ আর এই সময়েই বিজেপির একের পর এক সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলার মত সিদ্ধান্ত ক্ষুব্ধ করছে ভারতবাসীকে৷
পেট্রোল ডিজেল গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে উত্তাল দেশ৷ সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল দামবৃদ্ধির ছবি৷ গোটা দেশ আজ বলছে, ‘টাকায় বাড়ছে দাম-পয়সায় কমছে’৷ কেউ বা বলছেন, ‘এক পয়সার সরকার’৷ ‘পয়সার সরকার আর নেই দরকার’ বলে প্রচারও শুরু করে দিয়েছে বিরোধী দলগুলি৷ সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পরেছে হাসির জোকস, ভারতের GDP বাড়ছে মানে গ্যাস, ডিজেল ও পেট্রোলের দাম বাড়ছে৷
ফলে সবমিলিয়ে এই মূহুর্ত্বে যে কেন্দ্রের শাসক দল যে খুব একটা স্বস্তিতে নেই, তা বলাই যায়৷ এই মূহুর্ত্বে ভোট হলে গেরুয়া বাহিনী যে যথেষ্ট সমস্যায় পড়বে সেটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা৷ আর তাই বিরোধীরা এই ইস্যুগুলোকে হাতিয়ার করেই লোকসভা ভোট এগিয়ে আনার দাবী তুলেছেন৷
দেশ জুড়ে লোকসভা ভোটের ঢাক বাজতে আর মাত্র কয়েকটা মাস৷ ভোটের আগে সরকারের অলিখিত আদেশে, পেট্রোল ও ডিজেলের দাম তেল কোম্পানীগুলি বেশ কিছুটা কমাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ঠিক যেমন, কর্ণাটক ভোটের সময় প্রায় মাসখানেক পেট্রোল ও ডিজেলের দামে কোন হাত দেয় নি তেল কোম্পানীগুলি৷
তবে, শেষ মূহূর্ত্বে মোদী সরকার কতটা ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে পারে সেটাই দেখার৷ ২০১৪ র মত মোদী ম্যাজিক কতটা কাজ করে তার জন্যই অপেক্ষা করছে গেরুয়া শিবির৷ তবে রাজনীতি ছাড়াও, সেই মোদী ম্যাজিককে যে গ্যাস, পেট্রোল ও ডিজেলের দামবৃদ্ধির অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷