রহস্যভেদ করতে সূর্যের সবচেয়ে কাছে ‘পার্কার সোলার প্রোব’

6973
Image Source: Google

The News বাংলা: সূর্যের কাছে পৌঁছে গেল মানব সভ্যতা। সূর্য রহস্যভেদ করতে সূর্যের একেবারে কাছে পৌঁছে গেল মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার পার্কার সোলার প্রোব নামে একটি উপগ্রহ। নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন বুধবার এটি সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছে সর্বকালীন রেকর্ড গড়বে।

Image Source: Google

সূর্যের রহস্য ভেদ:
সূর্যের রহস্য ভেদের এক মিশন নিয়ে পার্কার সোলার প্রোব নামে একটি উপগ্রহ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। যানটিকে গত ১২ অগস্ট সূর্য অভিযানের জন্য রওনা করা হয়েছিলো।

আরও পড়ুন: বাঁচার সম্ভাবনা নেই, বিমান দুর্ঘটনায় ১৮৯ জনেরই মৃত্যুর আশঙ্কা

নির্ধারিত সময়ের একদিন পর ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে নাসার নভোযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি সূর্যের ৬০ লক্ষ কিলোমিটারের মধ্যে গিয়ে পৌঁছাবে এবং সূর্যের এত কাছাকাছি এর আগে কোন যানই যেতে পারে নি।

Image Source: Google

সূর্যের যে উজ্জ্বল আলোকছটার অংশটি সূর্যগ্রহণের সময় দেখা যায় – যাকে বলে ‘করোনা’, এই যানটি তার ভেতর দিয়ে উড়ে যাবে। বলা হচ্ছে, ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপ সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে প্রোবের।

আরও পড়ুন: ফের ভাঙছে হিমবাহ, ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে পৃথিবী

চারটি ডেল্টা-ফোর রকেট দিয়ে উপগ্রহটি মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরাল থেকে ‘প্রোব’ কে উৎক্ষেপণের কথা ছিল শনিবার সকালে। তবে শেষ মূহুর্তে বাড়তি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তা ১৪ ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়।

Image Source: Google

অবিশ্বাস্য গতির নভোযান:
সাত বছর ধরে সূর্যের চারদিকে ২৪ বার প্রদক্ষিণ করবে এই স্যাটেলাইট। সে সময় এটির গতি হবে ঘণ্টায় কমপক্ষে ৬,৭০,০০০ কিলোমিটার। ৬০ লাখ কিলোমিটার দূর থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকবে নাসার এই স্যাটেলাইট।

আরও পড়ুন: বিশ্বে আলোড়ন ফেলে চুমু খেতে রাজি সোফিয়া

এই প্রকল্পের অন্যতম বিজ্ঞানী ড. নিকি ফক্স বলেছেন, “আমি বুঝতে পারছি ৬০ লাখ কিমি দূরত্বকে কখনই নিকট দূরত্ব বলে মনে হবে না, কিন্তু যদি ধরে নেয়া হয় ভূপৃষ্ঠ এবং সূর্যের দূরত্ব এক মিটার, তাহলে প্রোব সূর্য থেকে মাত্র ৪ সেমি দূরে থাকবে।

প্রোব যে গতিতে চলবে তা নজিরবিহীন। ড ফক্স বলছেন,”এত দ্রুতগতির কোনো কিছু আগে তৈরি হয়নি। সূর্যের চারদিকে এটি প্রতি ঘণ্টায় ৬,৯০,০০০ কিমি পর্যন্ত গতিতে ঘুরবে। অর্থাৎ এই গতিতে নিউইয়র্ক থেকে টোকিও যেতে লাগবে এক মিনিটেরও কম সময়।”

Image Source: Google

নাসার পার্কার সোলার প্রোব এর কাজ:
বলা হচ্ছে, মনুষ্য-বিহীন এই নভোযান, যেটি একটি স্যাটেলাইটের মত কাজ করবে, তা সূর্যের যতটা কাছে যাবে এর আগে মানুষের তৈরি কোন যান এত কাছে যায়নি।

আরও পড়ুন: ইনিই এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম

সূর্যের চারদিকে উজ্জ্বল আভাযুক্ত যে এলাকা, যেটি ‘করোনা’ নামে পরিচিত, সরাসরি সেখানে গিয়ে ঢুকবে এই স্যাটেলাইট। তারপর সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ করতে করতে বোঝার চেষ্টা করবে এই নক্ষত্রের আচরণ।

গত ৩ অক্টোবর এই যানটি শুক্র গ্রহের পাস দিয়ে আগে চলে গেছে। নাসার বৈজ্ঞানিকরা এই কথা জানিয়েছেন। পার্কার সোলার প্রোব, ওখান দিয়ে এগিয়ে যাবার পরে বৈজ্ঞানিকরা জানিয়েছেন যে এই যান থেকে পাওয়া ডেটা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে যানটি নিজের সঠিক পথেই এগোচ্ছে।

Image Source: Google

নাসার তরফ থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এইভাবে এগোতে থাকলে আগামীকাল ৩১ অক্টোবর এই যানটি প্রথম বার সূর্যের সবচেয়ে সামনে আসবে। যানটি এই পথে ১২ দিন থাকার পরে আবার নিজের যাত্রায় সূর্যের সামনে থেকে সরে যাবে।

আরও পড়ুন: লাইফ বিয়ন্ড ডেথ’, কী ভাবে জানবেন মৃত্যুর পর কী

এই যানটি মঙ্গলবার সূর্যের ২৬.৫৫ মিলিয়ন মাইলের মধ্যে চলে এসেছে। সেই জন্যে এটিও একটি রেকর্ড। এর আগে ১৯৭৬ সালে জার্মানী এবং আমেরিকার সংযুক্ত অভিযানে যে মহাকাশ যান পাঠানো হয়েছিলো, সেটি প্রায় ৪ কোটি ৩০ লক্ষ কিলোমিটার পর্যন্ত গিয়েছিল। সেই অভিযানের মহাকাশ যানের নাম ছিলো হ্যেলিয়োস ২।

Image Source: Google

তবে এখানেই শেষ নয়। নাসার বৈজ্ঞানিকরা জানিয়েছেন যে, নিজের অক্ষ পথে ঘুরতে ঘুরতে এই যানটি ২০২৫ সালে সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছাবে। সেখান থেকে এই যানটি সূর্যের কেন্দ্র এবং বাইরের আবরন সম্বন্ধে ডেটা এবং চিত্র পাঠাবে। এর মধ্যে এই যানটি ২৪ বার অন্য সব গ্রহের কাছে দিয়ে এগিয়ে যাবে। শুক্র গ্রহের কাছে এই যানটি আরও ৬ বার যাবে।

এই যান টি সূর্য অভিযানে পাঠিয়ে বৈজ্ঞানিকরা জানতে চান যে সূর্যের ঠিক কেন্দ্র সব সময় কি হয় এবং সূর্যের বাইরে কি চলতে থাকে। আসলে সূর্যে সব সময় প্রচন্ড বেগের ঝড় ওঠার কোন সম্পর্ক এর ভেতরে আছে কি না। এই ব্যাপারে নতূন কিছূ জানা গেলে এই সৌরজগতের সৃষ্টি এবং বাকি সব ব্যাপারে নতূন তথ্য জানতে পারা যাবে।

Image Source: Google

নাসার এই অভিযানকে মানবজাতির এখনও পর্যন্ত সেরা সৌর অভিযান বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। সৌর বিজ্ঞানীরা এখন উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন, নাসার পার্কার সোলার প্রোব উপগ্রহ এর দিকে।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন