The News বাংলা, নিউ দিল্লী: ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত প্যাটেল। সোমবার সন্ধ্যায় এক লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, বর্তমান পদ থেকে তিনি সরে দাঁড়াতে চান। যদিও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, কেন্দ্রের চাপের কাছে নতি স্বীকার করলেন না উর্জিত প্যাটেল। সেই কারণেই এই পদত্যাগ।
‘এত বছর ধরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিভিন্ন পদে কাজ করতে পেরে তিনি সম্মানিত’ বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছেন উর্জিত প্যাটেল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সমস্ত স্তরের কর্মীদের সহযোগিতা এবং কঠোর পরিশ্রম ছাড়া ব্যাঙ্ক সাম্প্রতিককালে যে স্থান অর্জন করেছে তা সম্ভব হত না, বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: মার্চে বন্ধ দেশের অর্ধেক এটিএম কি মোদীর নোটবন্দীর কুফল
এর ফলে দীর্ঘ টানাপড়েনের অবসান হল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগ করেই দিলেন উর্জিত প্যাটেল। বিগত কয়েক মাস ধরেই কেন্দ্রীয় সরকার ও দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের মধ্যে বনিবনার অভাব আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল।
এই পদত্যাগ এর ফলে, কেন্দ্রের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যে বিরোধের শুরু হয়েছিল তার কোনও ফয়সালা হল না। তা আরও বড় আকার নিতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে এই বিরোধ শুরু হয়েছিল। এবারে কেন্দ্র রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মূলধনে ভাগ বসিয়ে তাতে নতুন মাত্রা দিতে চলেছে বলেই অভিযোগ উঠেছে। নতুন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর কে হন, তিনি সরকারের এই সিদ্ধান্ত মানেন কিনা সেটাও দেখার।
আরও পড়ুন: মোদীর নোটবন্দীর ২ বছর পূর্তিতে আশা নিরাশা
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কারবারের মূল হাতিয়ার তার মূলধনেই এবারে সরাসরি টান দিয়েছে কেন্দ্র, বলেই অভিযোগ ওঠে। কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রক রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে মূলধনের এক তৃতীয়াংশ অর্থ অর্থাত্ প্রায় ৩.৬লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্রের কোষাগারে পাঠানোর নির্দেশ পাঠিয়েছে। বর্তমানে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উদ্বৃত্ত মূলধনের পরিমান হলো ৯.৫৬ লক্ষ কোটি টাকা।
সেই মূলধনের এক তৃতীয়াংশে এবারে ভাগ বসাতে চাইছে মোদী সরকার। কেন্দ্রের মতে বর্তমান মূলধনের কাঠামোতে, যে টাকা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কারবার চালানোর জন্য প্রয়োজন তা রেখে এক তৃতীয়াংশ উদ্বৃত্ত কেন্দ্রকে পাঠাতে বলা হয়েছে। এটা খুবই সংরক্ষণশীল হিসাব বলেই মনে করে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের আগে উৎসবের মাসে প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুদ বাড়ল
সেই হিসাবেই মোদী সরকার ঐ টাকা ফেরত পাঠাতে বলেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে, বলেই অর্থমন্ত্রক সূত্রে খবর। এদিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর্, উদ্বৃত্ত ঐ অর্থ কেন্দ্রের কোষাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার পর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিজস্ব কারবার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে তা বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। আর এই নিয়েই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত প্যাটেল এর সঙ্গে মতান্তর শুরু মোদী সরকারের।
কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বৈঠকের অবশ্য খানিক সময়ের জন্য ধামা চাপা পড়েছিল সেই বিতর্ক। কিন্তু অবশেষে পদত্যাগ করেই দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর। এই নিয়ে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদী সরকার। এরপরেই মন্ত্রী লেভেলে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। লোকসভা ভোটে কেন্দ্র-রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইস্যুও যে বড় ভূমিকা নিতে চলেছে তা বলাই যায়।