শিক্ষক দিবস, টাকা দিয়ে কেনা পেশায় শ্রদ্ধা থাকে না, লজ্জার অন্ধকারে বাংলার শিক্ষা। আমাদের বাংলায় এখন টাকা দিলেই, শিক্ষকের চাকরি কিনতে পাওয়া যায়। নেতার পরিবারের কেউ হলেই চাকরি পাওয়া যায়, যোগ্যতা না থাকলেও। এমনকি নেতাদের দেহরক্ষীদের চেনা হলেও, শিক্ষকতা করা যায় সরকারি স্কুলে। এমনকি অন্য দেশ থেকে এসে টাকা দিয়ে ভোটার আধার কার্ড বানিয়ে, আমার রাজ্যে শিক্ষকের চাকরি কেনা যায়। বাংলায় শিক্ষকের চাকরি এখন ইলিশ-পমফ্রেট মাছের বাজার, ‘ফেল কড়ি মাখ তেল’। টাকা দাও চাকরি নাও। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। টাকা দিয়ে কেনা পেশায়, আর যাই হোক শ্রদ্ধা থাকে না। আর এর জেরেই পুলিশ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীর মত শিক্ষকও, একটা হাসির ও ব্যঙ্গের ‘জাত’ হয়ে গেছে।
পরীক্ষায় পাশ করেও, গান্ধীর পায়ের নিচে টানা দু বছর ধরে বসে, যোগ্য শিক্ষকরা। তাদের ন্যায্য চাকরি কবেই চোখ-কান-মুখ বুজে, লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে শাসক দলের ‘দুষ্টুমিষ্টি ভালো’ বাঁদররা। স্কুল কলেজে দাপাচ্ছে, অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত ‘বুড়ো ধামড়া’ ছাত্র নেতা। আঙুল তুলে শাসাচ্ছে শিক্ষকদের, বংশ পরম্পরার ধারা বজায় রেখে। তাদের বড় দাদাদের, ‘বুল স্টাইলে’ শিক্ষিকাকে জগ ছুঁড়ে মারার ঐতিহ্য আছে যে। শুধু কি তাই, অন্য ধর্মের শিক্ষিকা, মেয়ের গায়ে হাত দেওয়ায়, স্কুলে ঢুকে সবার সামনে শিক্ষিকার শাড়ি খুলে দেবার নজিরও ঘটিয়েছে, পরিবর্তনের বাংলা।
আরও পড়ুনঃ ‘মমতাকে তাড়াতে সাহায্য করবে অভিষেক’, শুভেন্দুর ‘লক্ষণ’ মন্তব্যে শোরগোল বাংলায়
একটা সময় বেত হাতে, স্কুল ঘুরতেন আমাদের শিক্ষকরা। ছাত্র আর নেতা তো অনেক দূরের কথা, অভিভাবকরাও রীতিমত ভয় পেতেন এই শিক্ষকদের। তারপর হঠাৎ একদিন, বাবা-মায়েদের অতিরিক্ত আদর, আদালতে শিক্ষকদের হাত থেকে বেত কেড়ে নিল। ছাত্রদের কান থেকে নিষিদ্ধ করে দিল, শিক্ষকদের তর্জনী ও বুড়ো আঙুল। আর ‘লালের শাসন’ তাদের স্কুল ছেড়ে, সম্পূর্ণ রাজনীতিতে নামিয়ে দিল। শিক্ষার কবর তখনই খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল। ‘মা মাটি মানুষ’ সেই কবরে শিক্ষাকে ঢুকিয়ে, উপরে ‘ঘাসফুল’ গজিয়ে দিয়েছে। ‘শিক্ষার ষোলকলা’ পূর্ণ হয়েছে।
আমাদের দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি, পেশায় শিক্ষক, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান। ভারতের এই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের জন্মতিথিতে, আজ সর্বত্র এই দিনটি পালিত হচ্ছে তাঁর ছবি ও মূর্তিতে মালা দিয়ে। বুঝিয়ে দেওয়া, মালা দিয়ে অতীত বরণ করলাম। ব্যাস…তারপরেই কলেজে যাব অনার্সের সিট-গুলো বেচার জন্য। দাদারা শিক্ষকের চাকরি বিক্রি করছে, আর ভাইরা ছাত্রদের আসন বিক্রি করছে। আমার বাংলায় শিক্ষা এখন, বাজারে নিলাম হচ্ছে।
যারা এই বাজারের বাইরে থেকে, নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে শিক্ষক-শিক্ষিকা হয়েছেন, আর এটাকে শুধুই পেশা আর ‘আয়ের উৎস’ বলে ভাবেন না, আজও আশা করেন পরিবর্তন আসবে, সব অন্যায় ও দুর্নীতির অবসান হবে, সেই সব ব্যতিক্রমি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জানাই, শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা। (লিখলেন মানব গুহ)