দূর্নীতি রোধের প্রশ্নে সচিব-মন্ত্রী দ্বৈরথ বিদ্যুত দফতরে, মন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখেই কি দুর্নীতি

221
দূর্নীতি রোধের প্রশ্নে সচিব-মন্ত্রী দ্বৈরথ বিদ্যুত দফতরে, জনস্বার্থ মামলা হওয়ার সম্ভাবনা
দূর্নীতি রোধের প্রশ্নে সচিব-মন্ত্রী দ্বৈরথ বিদ্যুত দফতরে, জনস্বার্থ মামলা হওয়ার সম্ভাবনা

দূর্নীতি রোধের প্রশ্নে সচিব-মন্ত্রী দ্বৈরথ বিদ্যুত দফতরে, মন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখেই কি দুর্নীতি? জনস্বার্থ মামলা হওয়ার সম্ভাবনা। দূর্নীতি-রোধের ইসুতে রাজ্য বিদ্যুত দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সুরেশ কুমারের সঙ্গে, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের বিরোধ তুঙ্গে। দফতরের মন্ত্রী যখন আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বিদ্যুত দফতরকে দূর্নীতি মুক্ত করে স্বচ্ছতা আনতে, তখন অভিযোগ একের পর এক নিয়োগ এবং প্রশাসনিক কাজে দূর্নীতিকে দিনের পর দিন প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব।

ঘটনার সূত্রপাত, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুত সংবহন কোম্পানি লিমিটেড-এ, মানবসম্পদ অধিকর্তা নিয়োগের ইসুতে। অভিযোগ, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ নিজের ক্ষমতা বলে, গত বছর জুন মাসে মন্ত্রী এবং সংবহন কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের অমতে, একটি রঙের কোম্পানি থেকে অবসরপ্রাপ্ত একজনকে মানবসম্পদ অধিকর্তা পদে নিয়োগ করেন, দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব, সুরেশ কুমার।

মানবসম্পদ অধিকর্তার বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজে প্রশ্রয় দেওয়া থেকে শুরু করে, সবরকম অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে পদ থেকে সরানো তো দূরের থাক, রাজ্য মন্ত্রিসভার একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, মানস ভুঁইয়ার অনুরোধেও কোনও তদন্ত কমিশন বসাননি, বলেই অভিযোগ।

তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত আইএনটিটিইউসি নেতা, সফিকুল ইসলামের বক্তব্য, “শুধুমাত্র মানবসম্পদ অধিকর্তা পদে অযোগ্য কাউকে নিয়োগ করেই থেমে থাকেননি, বিদ্যুত দফতরের সচিব। গতবছর নভেম্বর মাসের তিন তারিখে কোম্পানি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত করে প্রযেক্ট অধিকর্তা পদের জন্য। নিয়মমতো ওই পদে আবেদন করেন কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মরত চিফ ইঞ্জিনিয়াররা। এই বছর জানুয়ারি মাসে ইন্টারভিউতে ডাকা হয় মোট ২২ জনকে। ইন্টারভিউ বোর্ডে ছিলেন, দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব, সংবহন কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং দুজন স্বাধীন অধিকর্তা। গ্রেডেশন তালিকাভুক্ত হন মোট তিনজন। সংবহন কোম্পানির প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার(প্ল্যানিং) অসিত কর্মকার, ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন-এর একজন প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং সংবহন কোম্পানির-ই অবসরপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার(অপারেশনস) রফিকুল ইসলাম”।

আইএনটিটিইউসি নেতা বলেন, “রফিকুল ইসলাম সাহেবের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে যখন কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং মন্ত্রী প্রায় এক রকম সহমত, ঠিক তখনই সংবহন কোম্পানির বোর্ড মিটিংয়ে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের এক প্রভাবশালী আমলার নাম নিয়ে স্বাধীন অধিকর্তাদের রীতিমত বাধ্য করেন নম্বর বৃদ্ধি করে সম্পূর্ণ নতুন তালিকা তৈরি করতে। সেই নতুন তালিকায় অসিত কর্মকারের নাম থাকলেও, নতুন নাম হিসেবে চলে আসেন কোম্পানির-ই দুই অবসরপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার, গৌতম ব্যানার্জি এবং জাহিরুল হকের। এবং স্বাধীন অধিকর্তাদের বলা হয় গৌতম ব্যানার্জির নাম তালিকার এক নম্বরে রাখতে”।

সংবহন কোম্পানির ইতিহাসে কখনও কোনও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে, অধিকর্তা পদে নিয়োগ করা হয়নি। দফতর সূত্রের খবর, গৌতম ব্যানার্জি বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ ছিল তাঁর কর্মজীবনে। বেআইনিভাবে কোনও কোম্পানিকে কন্ট্রাক্ট পাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে, তাদের থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা নেওয়ার। এই বিষয়ে গৌতম ব্যানার্জির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, “প্রজেক্ট অধিকর্তা হিসেবে আমার নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। এছাড়া আর কোনও কিছুই বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয় এই মুহূর্তে”। আর দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিবকে ফোন করা হলে, তিনি ফোন ধরেননি।

অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বহুদিন থেকেই সোচ্চার কর্মী ইউনিয়নগুলি। দূর্নীতিকে খুলে আম প্রশ্রয় দেওয়া থেকে শুরু করে সবরকম অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বিদ্যুত ভবন এবং অভিক্ষণ ভবনের দেওয়ালে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব, মানবসম্পদ অধিকর্তা, জেনারেল ম্যানেজার(মানবসম্পদ)-এর অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে, লাগাতার সাত-দিন অবস্থান বিক্ষোভ করে সিআইটিইউ কর্মী ইউনিয়নের সদস্যরা। সেখানে প্রশান্ত নন্দী চৌধুরি থেকে শুরু করে ভাষণ দেন, সিপিআইএমের রাজ্যসভার সাংসদ এবং শহরের প্রাক্তন মহানাগরিক, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।

সম্প্রতি জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে, কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেছেন, কয়েকজন আবেদনকারী। তাদের অভিযোগ, লক্ষ-লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভিন রাজ্যের আবেদনকারীদের নিয়োগ করছিলেন, মানবসম্পদ অধিকর্তা এবং জেনারেল ম্যানেজার(মানবসম্পদ), অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সুরেশ কুমারের পৃষ্ঠপোষকতায়।

আইএনটিটিইউসি নেতা সফিকুল ইসলামের মতে, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে কালিমালিপ্ত করার একটা প্রয়াস চলছে দীর্ঘদিন ধরে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের ওই প্রভাবশালী আমলার নিয়ম ভাঙিয়ে, এই সব দূর্নীতি চালাচ্ছেন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব। প্রযেক্ট অধিকর্তা পদে যদি গৌতম ব্যানার্জির মতো দুর্নীতিপরায়ন অফিসারকে নিয়োগ করা হয়, তাহলে আমরা বাধ্য হব আদালতের দ্বারস্থ হতে। প্রয়োজনে জনস্বার্থ মামলা করা হবে নিয়োগ দুর্নীতি রোধে”।

দফতর সূত্রের খবর, প্রজেক্ট অধিকর্তা পদে গৌতম ব্যানার্জির নিয়োগে সম্মতি নেই, রাজ্যের বিদ্যুতমন্ত্রী এবং সংবহন কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সরাসরি উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মহলে। দরকার হলে, তিনি খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের কার্যকলাপের বিষয়ে জানাবেন বলেও জানা গিয়েছে।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন