পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার পরে কাশ্মীরে সেনা-জঙ্গি লড়াই আরও বেড়েছে। পাক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গুলির লড়াইয়ে কাশ্মীরে প্রতিদিনই শহিদ হচ্ছেন ভারতীয় জওয়ানরা। না, বাংলা সংবাদমাধ্যমে কোথাও তাঁদের নাম বা ছবি নেই। ছবি আছে তাদের ও তাদের পরিবারের, যারা পাক জঙ্গীদের বাঁচাতে ও পালাতে সাহায্য করতে সেনার দিকে পাথর ছুঁড়ে ‘দেশদ্রোহীতা’র দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। এখনও প্রতিদিন কাশ্মীরে সেনার সঙ্গে জঙ্গিদের লড়াই চলছে আর জঙ্গিদের বাঁচাতে সেনাকে বিভিন্ন ভাবে আটকাচ্ছে বিপথে যাওয়া যুবকরা।
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তানে বিমানহানার প্রমাণ সরকারের হাতে, বাকি সব গুজব
কাগজ টিভি খুললেই সেনার দিকে পাথর ছোঁড়ার সময় সেনার গুলিতে মারা যাওয়া যুবকদের ছবি। তাদের পরিবারের ছবি। কোথাও নেই শহিদ সেনার ছবি বা সেনার পরিবারের ছবি। সেনার সমালোচনা আছে, সেনার দিকে পাথর ছোঁড়ার বিরুদ্ধে এক লাইনও নেই। ধন্য ভারতের সংবাদজগত। একটি রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করতে গিয়ে দেশ ও সেনার সমালোচনা করতেও পিছপা নয় তারা।
আরও পড়ুনঃ পরের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে বিমানে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হবে বিরোধীদের
পুলওয়ামা জঙ্গি হামলা, ভারতের বিমান হানা, এফ ১৬ ও মিগ ২১ এর লড়াইয়ের পরও প্রতিদিন জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে ফের রক্তাক্ত কাশ্মীর। মাসখানেক আগেই পুলওয়ামার খারপোরা সিরনু এলাকায় জঙ্গিরা লুকিয়ে রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর পায় নিরাপত্তা বাহিনী।
সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় ছোটেন সেনা জওয়ানরা। এলাকায় জওয়ানদের দেখে আচমকা গুলি ছুড়তে শুরু করে জঙ্গিরা। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা জবাব দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। তাতে তিন জঙ্গি নিহত হয়। সংঘর্ষে এক জওয়ানেরও মৃত্যু হয়। আহত হন আরও দুজন সেনা।
আরও পড়ুনঃ মতুয়াদের বড়মার মৃত্যু রহস্যজনক, চাঞ্চল্যকর অভিযোগ
এরপর, জওয়ানদের গুলিতে তিন জঙ্গি নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই নিরাপত্তা বাহিনীর উপর চড়াও হয় কিছু স্থানীয় যুবক। জওয়ানদের লক্ষ্য করে তাঁরা পাথর ছুড়তে শুরু করে। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে প্রথমে ছর্রা বন্দুক ব্যবহার করা হয়। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসও। তাতেও কাজ না হওয়ায় গুলি ছোড়েন জওয়ানরা। তাতেই ৭ জন স্থানীয় বাসিন্দার মৃত্যু হয়।
৭ জন স্থানীয় বাসিন্দার মৃত্যুতে ফের উত্তাল হয়ে যায় কাশ্মীর। সেনার দিকে পাথর বৃষ্টিকারীদের উপর এই ভাবে গুলি চালানোয় নতুন করে উত্তাল হয়ে ওঠে উপত্যকা। যা উস্কে দেয় ২০১৬-র ভয়াবহ স্মৃতি, যখন হিজবুল মুজাহিদিন কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যু ঘিরে প্রায় দুমাসব্যাপী প্রতিবাদ আন্দোলন চলেছিল উপত্যকায়।
আরও পড়ুনঃ ভোটের বাজার মাত করতে আসরে নামছে পিসি
সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সেই সময় মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আহত হয়েছিলেন প্রায় ১০০০ মানুষ। ছররা বন্দুকের গুলিতে দৃষ্টিশক্তিও হারিয়েছিলেন অনেকে। সেই সময়ও জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল মুজাহিদিন কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যু নিয়ে ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধেই লিখেছিল বাংলা ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এর একাংশ।
এদিকে গত কয়েকমাসে কাশ্মীরের হান্ডওয়ারা, বন্দীপোর ও কুলগামে, সোপিয়ানে আলাদা আলাদা এনকাউন্টারে জঙ্গিদের পিছু ধাওয়া করতে গিয়ে অন্তত ছজন ভারতীয় সেনা সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই জঙ্গিরা পালানোর সময় স্থানীয় যুবকদের সাহায্য পেয়েছে বলেই অভিযোগ।
পাথর ছুঁড়ে ভারতীয় সেনাদের বাধা দিয়ে জঙ্গিদের সুবিধা করে দিয়েছে তারা। এরকমই একটি ঘটনায় জঙ্গি গুলিতে নিহত এক মেজরকে শেষ বিদায় জানানোর সময় ভারতীয় সেনাধ্যক্ষ বিপিন রাওয়াত জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘তাদের ধৈর্যের বাঁধ কিন্তু এখন ভেঙে গেছে’।
আরও পড়ুনঃ দেশদ্রোহী আখ্যা পেয়েও নিজের বক্তব্যে অনড় কংগ্রেস নেতা
কাশ্মীরে যে সব বেসামরিক লোক সেনাবাহিনীর জঙ্গি-দমন অভিযানে বাধা দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। ‘কাশ্মীরে যারা জঙ্গিদের পালাতে সাহায্য করছে, কিংবা পাকিস্তান ও আইএস-এর পতাকা প্রদর্শন করছে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করতে ভারতীয় সেনারা এখন থেকে আর দুবার ভাববে না’, পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন সেনাপ্রধান। ভারতীয় সেনার নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণে তাঁর কথায় কোনও ভুল নেই, বলেই অনেক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞর অভিমত।
আরও পড়ুনঃ সরকারি ২৫টি দরকারি অ্যাপস
যে স্থানীয় যুবকরা জঙ্গিদের সাহায্য করবে কিংবা যাদের পাকিস্তানি ও আইএস পতাকা নিয়ে দেখা যাবে, সেনাবাহিনী তাদের দেশবিরোধী শক্তি বলেও চিহ্নিত করবে বলে জেনারেল রাওয়াত জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘২০১৫ থেকেই দেখা যাচ্ছে বিশেষ করে দক্ষিণ কাশ্মীরে, যখনই কোনও জঙ্গিদের গোপন আস্তানায় সেনারা হানা দিচ্ছে, স্থানীয় মানুষজন মসজিদ থেকে মাইক জোগাড় করে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালিয়ে তাদের ঘিরে ফেলছে। পাথর ছুঁড়ে তাদের বাধা দিচ্ছে। এতে তাঁদের স্বাভাবিক অভিযান ব্যাহত হচ্ছে, অন্য দিকে তাঁদের মনোযোগ ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে’।
আরও পড়ুনঃ ভারতের চাপে মাথা নত করল পাকিস্তান
তবে জঙ্গি হামলার পর সেনার বিরুদ্ধে এই পাথর ছোঁড়া আর বরদাস্থ করা হবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। আদালতও সেনার হয়েই রায় দিয়েছে। আর বরদাস্থ করা হবে না জানিয়ে দিয়েছেন সেনা প্রধান।
আর সেনার বিরুদ্ধে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধেই লিখছে সংবাদমাধ্যম। কারণ কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য, যেনতেন প্রকারেন বিজেপির সমালোচনা করাই তাদের লক্ষ্য। দল আর দেশ যে আলাদা সেটা বোঝার ক্ষমতা অনেকের নেই বলেই আক্ষেপ সেনা আধিকারিকদের। সরকার যে দলেরই হোক, ভারতীয় সেনার বিরূদ্ধে গিয়ে জঙ্গিদের সাহায্য করাটা কি দেশদ্রোহ নয়? জঙ্গিদের সমর্থন করাটা বা তাদের হিরো করে দেখানোর চেষ্টা কি দেশদ্রোহীতা নয়? বাংলা সংবাদমাধ্যম কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপির বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে লিখছে না তো? ভেবে দেখার সময় এসেছে।
আরও পড়ুনঃ মোদীকে হত্যা কর, কংগ্রেস নেতার প্রকাশ্য নির্দেশ
আরও পড়ুনঃ ভারতীয় সাবমেরিনের ভয়ে কাঁপছে পাকিস্তান
আরও পড়ুনঃ ম্যাডাম খুব তাড়াতাড়ি যুদ্ধ বিমানে বসতে চাই, নির্মলাকে অভিনন্দন
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।