বড় স্বস্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরী হত্যা মামলায় স্বস্তিতে ফিরল মোদী ও বিজেপি। কংগ্রেস নেতা এহসান জাফরীর হত্যা মামলা থেকে নরেন্দ্র মোদীকে রেহাই দেওয়া নিয়ে তাঁর স্ত্রী জাকিয়ার অভিযোগ শোনার উপর আগামী জুলাই মাস অব্দি মুলতবির নির্দেশ দিল দেশের শীর্ষ আদালত।
আরও পড়ুনঃ রথী মহারথীদের নাম লেখা ১২ পাতার গোপন চিঠি সিবিআইকে দিলেন কুণাল ঘোষ
গুজরাট দাঙ্গার সময় আহমেদাবাদের গুলবার্গ হাউজিং সোসাইটিতে হামলা চালায় একদল উন্মত্ত জনতা। হামলা চালান হয় ওই হাউজিংয়ে বসবাসকারী প্রায় ২ হাজার মুসলমানের ওপর। অগ্নিসংযোগ করা হয় ওই আবাসনের বেশির ভাগ বাড়িতেই। গণহত্যায় নিহত হন প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরী সহ ৬৯ জন মুসলমান। তাদের হাত-পা কেটে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুনঃ পাকিস্তান চিনের চিন্তা বাড়িয়ে ভারতীয় সেনার হাতে এল ভয়ঙ্কর চিনুক হেলিকপ্টার
নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর। চার মাস পরেই গোধরা স্টেশনে ৫৯ জন হিন্দু তীর্থযাত্রীকে ট্রেনে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়। অভিযোগ ওঠে, কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই মোদী বলে দেন, এটা পাকিস্তানের মুসলমানদের ষড়যন্ত্র। তিনি রাজ্যব্যাপী হরতালের ডাক দেন। আর আগুনে পোড়া তীর্থযাত্রীদের মরদেহ নিয়ে মিছিল করেন। উত্তেজক বক্তৃতাও দেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ মোদীর অরুণাচল সফর নিয়ে চিনকে উপযুক্ত জবাব দিল ভারত
জাকিয়া জাফরীর অভিযোগ ছিল, তার পরের দিন হিন্দুদের একটি বিশাল দল নানারকম অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গুজরাটের অভিজাত মুসলিম আবাসিক এলাকা গুলবার্গের সামনে জড়ো হয়। সেখানে থাকতেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ এহসান জাফরী। পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা দেখে জাফরী আতঙ্কিত হয়ে সাহায্যের জন্য বিভিন্ন স্থানে ফোন করতে শুরু করেন। অভিযোগ ওঠে, এঁদের মধ্যে মোদীও ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জাফরী নিরাশ হয়ে পড়েন। প্রাণভয়ে কংগ্রেস নেতার বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন অসংখ্য মুসলিম।
আরও পড়ুনঃ সার্কিট বেঞ্চ উদ্বোধন করে দিয়ে মমতার ‘বাড়া ভাতে’ ছাই দিলেন মোদী
এহসান জাফরীর স্ত্রী জাকিয়ার অভিযোগ, কিছুক্ষণ পরেই তিনি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আতঙ্ক নিয়ে দেখেন, দাঙ্গাবাজরা তাঁর স্বামীকে নগ্ন করে টেনে রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছে। তার চোখের সামনেই তারা জাফরীকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে একে একে তাঁর আঙুল, হাত, পা, মাথা কেটে টুকরো টুকরো করছে। তারপর জাফরীর মৃতদেহটি তারা একটি উন্মুক্ত চিতায় ফেলে দেয়। পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেও কিছু করেনি।
আরও পড়ুনঃ কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে তিন তালাক বিরোধী আইন বাতিল করে দেবে কংগ্রেস
ওই ঘটনায় গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মদত দেওয়া ও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন মৃত এহসান জাফরীর স্ত্রী জাকিয়া জাফরী। আহমেদাবাদের বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা, পুলিশ অফিসার ও সচিবের বিরুদ্ধেও সে সময় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। জাকিয়ার আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে তদন্তে নামে গুজরাট দাঙ্গার বিশেষ তদন্তকারী দল(সিট)। তদন্তে নেমে ৬৬ জনকে অভিযুক্ত করে সিট। এদের মধ্যে ৯জন ১৪ বছর ধরে কারাগারে বন্দী ছিলেন। বাকিরা জামিনে মুক্ত ছিলেন।
আরও পড়ুনঃ মমতার বাংলায় ১ লাখ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেন মুকেশ আম্বানি
অনিবার্য মৃত্যুর হাত থেকে সেদিন রক্ষা পেয়েছিলেন এহসানের স্ত্রী জাকিয়া। তিনিই মূলত অসীম সাহস নিয়ে এর বিরুদ্ধে দাঁতে দাঁত দিয়ে লড়াই চালাচ্ছেন গত ১৬ বছর ধরে। সবরকম সহায়তার হাত বাড়িয়ে তাঁর পাশে আছেন সমাজকর্মী তিস্তা শীতলাবাদ। মোদীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে গুরুতর। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। এমনকি এও বলেন, সেদিন রাত সাড়ে আটটার আগে তিনি এ ঘটনা জানতেনই না। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমও(এসআইটি) তাঁর এই কথা সত্য বলে ধরে নেয়। ক্লিন চিট পান নরেন্দ্র মোদী। আর এর বিরুদ্ধেই দেশের শীর্ষ আদালতের দারস্থ হন জাকিয়া। সেই মামলাই আগামী জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করে দেওয়া হল।
আরও পড়ুনঃ মমতার ধর্ণায় বসা পুলিশ অফিসারদের কড়া শাস্তি দিতে চলেছে মোদী সরকার
গুজরাটের গুলবার্গ সোসাইটিতে এই গণহত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালত। গুজরাট দাঙ্গা ছিল স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দাঙ্গার ঘটনা। আহমেদাবাদের ওই বিশেষ আদালত তার রায়ে গণহত্যায় প্রত্যক্ষভাবে মদত দেওয়ার অভিযোগে ১১জনের বিরুদ্ধে কঠোর ও বাকি ১৩জনের বিরুদ্ধে অপরাধের মাত্রা কিছুটা কমের কথা বলে।
আরও পড়ুনঃ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এর বড় ঘোষণা, লোকসভা ভোটের আগে মধ্যবিত্তের মুখে হাসি
দীর্ঘ লড়াইয়ের শেষে যে বিচার মিলেছে তাতে অভিযুক্ত ৬৬জনের মধ্যে ৩৬জনকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়। যে ২৪জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে ১৩জনের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্বল ধারা, এমনটাই বিরোধীদের অভিযোগ। বিজেপি বা বিশ্বহিন্দু পরিষদের নেতারা বেশিরভাগই মুক্তি পেয়ে গেছেন। স্বাভাবিকভাবেই সোমবারের এই রায়ে বিজেপি তথা সংঘ পরিবার ছাড়া আর কারোরই সন্তুষ্ট হওয়ার কথা নয়।
আরও পড়ুনঃ মোদীর অরুণাচল সফর নিয়ে চিনকে উপযুক্ত জবাব দিল ভারত
সুপ্রিম কোর্ট গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলের এই মামলায় তদন্ত করা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এতবড় একটা আবাসন এলাকায়, এত ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালানো কি মাত্র ২৪টা লোকের পক্ষে সম্ভব? যেখানে কয়েকশ হামলাকারী এই হত্যা ও ধ্বংস চালিয়েছিল, তাদের সকলকেই প্রায় ছাড় দিয়ে মাত্র ২৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এটা কোন অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না, বলছেন সমাজকর্মীরা।
আরও পড়ুনঃ সমাজের রীতি ভেঙে বাংলার স্কুলে একি করল সুন্দরী ছাত্রী
গুজরাট আদালতও মোদীকে ‘ক্লিন চিট’ রায় বহাল রাখে। তার প্রতিবাদে দেশের শীর্ষ আদালতের দারস্থ হন জাকিয়া। তদন্ত প্রক্রিয়ায় ঘাটতি, তদন্তকাজে অসহযোগিতা এবং তথ্য গোপনের গভীর ষড়যন্ত্র না থাকলে এমন হওয়া একরম অসম্ভব বলেই মত মানবাধিকার কর্মীদের। তাছাড়া এতবড় একটা অমানবিক ঘটনা নিছক স্বতঃস্ফূর্ত উন্মাদনায় ঘটেছে সেটাও বিশ্বাস করা কঠিন।
আরও পড়ুনঃ সার্কিট বেঞ্চ উদ্বোধন করে দিয়ে মমতার ‘বাড়া ভাতে’ ছাই দিলেন মোদী
এইসব বিচার করেই মৃত কংগ্রেস নেতার বিধবা স্ত্রীর অভিযোগ ফের শুনবে বলেই গত নভেম্বরে রায় দিয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু সোমবার কংগ্রেস নেতা এহসানের স্ত্রী জাকিয়ার আবেদন এর উপর আগামী জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করে দিয়ে বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীকে লোকসভা ভোটের আগে বড় স্বস্তি দিল সুপ্রিম কোর্ট।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।