বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের পুলিশ কর্তাদেরই কেন ডেকে পাঠায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। সারদা কাণ্ডে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে তো গত একবছর ধরেই ডাকছে সিবিআই। আর সেই নিয়েই মমতার ধর্মতলার সত্যাগ্রহ ধর্ণা। পাশাপাশি সারদা ও রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ডে অনেক পুলিশ অফিসারকেই বারবার ডেকে পাঠিয়েছে সিবিআই বা ইডি। কিন্তু কেন? মমতার মতে, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের চক্রান্ত। কিন্তু শুধুই কি তাই? প্রশ্ন উঠছে।
আরও পড়ুনঃ নতুন যুদ্ধ, রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ডে মমতার দুই অফিসারকে ডেকে পাঠাল ইডি
গতবছরেই সারদা কাণ্ডে পুলিশ কর্তাদেরই জেরা করার জন্য বারবার ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই। নেতা নেত্রী ছেড়ে শুরু হয়েছে পুলিশ কর্তাদেরই জেরা করা হচ্ছে। গত বছরের আগস্টেই সারদা কাণ্ডে চার আইপিএস অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই। এবার রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ডে কলকাতার পুলিশের দুই ডেপুটি পুলিশ কমিশনারকে জেরা করা হবে।
আরও পড়ুনঃ সারদা চিটফান্ডে সর্বহারাদের দেখেই কি তাড়াতাড়ি ধর্ণা শেষ করলেন মমতা
কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, আইজি রেল তমাল বাসু ও প্রাক্তন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার ক্রাইম পল্লবকান্তি ঘোষকে জেরার জন্য ডেকেছিল সিবিআই। রাজ্য স্বরাষ্ট্র সচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজিকে মেল করে চার পুলিশ অফিসারকে জেরা করার কথা জানানো হয়েছিল। এদের সবাইকেই ডাকা হয়েছিল সল্ট লেক সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে।
আরও পড়ুনঃ ধর্মতলার ধর্ণা মঞ্চ থেকে মোদীর বিরুদ্ধে লোকসভা ভোটের ‘সারদা ইস্যু’
বিভিন্ন সময়ে রাজীব কুমার সহ এই চার পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধেই সারদা তদন্তে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের তরফ থেকেও সারদা তদন্তকারী এই পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ করা হয়েছিল। শাসক দলের সুবিধা করে দিতেই, এই পুলিশ অফিসাররা সারদা জালিয়াতি কাণ্ডে প্রথম থেকেই তথ্যপ্রমান ও কাগজপত্র লোপাট করে দিয়েছেন বলেই অভিযোগ করেছিলেন বিরোধী নেতারা।
আরও পড়ুনঃ সারদা চিটফাণ্ড মামলায় রাজীবকে জেরা করতে কি কি প্রশ্ন সাজাচ্ছে সিবিআই
সারদা কাণ্ডে সেইসব ‘মিসিং লিংক’ পেতেই বারবার সরাসরি তদন্তকারী আইপিএস অফিসারদেরই জেরা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিবিআই, এমনটাই সিবিআই সূত্রে জানা গেছে। কোন জালিয়াতি কাণ্ডে এতজন আইপিএস অফিসারকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ঘটনাও দেশ তথা রাজ্যে প্রথম। আর এবার রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ড। তবে এইসব তদন্ত ও ডেকে পাঠানোকে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরোধীদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত বলেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুনঃ উঠল বিজেপি বিরোধী সত্যাগ্রহ ধর্ণা, ধর্মতলার ধর্ণা প্রধানমন্ত্রী করতে পারবে মমতাকে
সারদা চিটফান্ড কাণ্ডে রাজীব কুমার সহ পুলিশ অফিসারদের পর এবার রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ডে কলকাতার পুলিশের দুই ডেপুটি পুলিশ কমিশনারকে জেরা করা হবে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইডি বা এনফোর্সমেনট ডিরেক্টরেট। এই দুজন হলেন আইপিএস ও ডিসি এসটিএফ মুরলীধর শর্মা ও আইপিএস ও ডিসি এসইডি কল্যাণ মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুনঃ সিবিআই জেরা থেকে পালাতে পারবেন না রাজীব কুমার, মমতা বললেন ‘নৈতিক জয়’
ইতিমধ্যেই ইডি বা এনফোর্সমেনট ডিরেক্টরেট এর চিঠি পৌঁছে গিয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে। সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির অফিসে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে ওই দুই আইপিএস ও ডিসি র্যাঙ্কের অফিসারকে।
আরও পড়ুনঃ সারদা কাণ্ডে পুলিশ কমিশনারকে সিবিআই জেরা কবে, তা নিয়েও লড়াই তুঙ্গে
সারদা ও রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ডে ইতিমধ্যেই জেলের ঘানি টেনে এসেছেন রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরা। এবার কি তাহলে পুলিশ অফিসারদের পালা? ঘটনা যেদিকে এগুচ্ছে সেটাই মনে হচ্ছে। অবশ্য লোকসভা ভোটের পর দেশে পট পরিবর্তন হলে এই অবস্থারও যে পরিবর্তন হবে তা বলাই যায়।
আরও পড়ুনঃ মমতার নির্দেশে সিবিআই অফিসারদের আটক করে বাংলার আইপিএসরা বিপদে
চিটফান্ড জালিয়াতি কাণ্ডের তদন্তে তদন্তকারী অফিসারদেরই বারবার ডেকে জেরা করতে হয় আর তাঁদের সততা প্রমাণে নামতে হয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। তাহলে সেই তদন্তের ভবিষ্যৎ কি হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। এই সারদা ও রোজভ্যালি চিটফান্ড জালিয়াতি কাণ্ডে আদৌ কি দোষীদের শাস্তি হবে? আশঙ্কার প্রশ্ন কিন্তু অনেক আগেই উঠেছে। তবে চিটফান্ড ক্ষতিগ্রস্তরা যে আর তাদের টাকা ফেরত পাবেন না, সেটাই আসতে আসতে স্পষ্ট হচ্ছে।
আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।